-
আজ বিশ্ব বানিজ্য যুদ্ধ তুমুল আকার ধারন করছে।চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের যে বানিজ্য যুদ্ধ তা আরও প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। আমরা একটা স্বস্থির নিস্বাস নিচ্ছিিলাম এই মাত্র কয়েকদিন আগে।আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্টের মধ্যে করমর্দনের চিত্র যখন আমরা দেখলাম তখন।কিন্ত সেটা বাস্তবে দেখলাম ঠিক তার উল্টা।উভয় নেতার প্রতি আমাদের বিনীত দাবী আপনারা একটা সমাধানে আসুন। আমরা শান্তিচাই আমরা স্বস্থিতে বা*চতে চাই।আপনারা বিশ্ববাসীকে................. ........?
-
গত বুধবারে ট্রেড ওয়ার ইস্যুতে ট্রাম্প এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়িন প্রতিনিধি জাংকার ওয়াশিংটনে মিটিং করে। সেখানে একটা পজিটিভ সংবাফ আউট কাম হয়েছে মুখে মুখে। ট্রাম্পের কাছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে প্রস্তাব করা হয় জিরো ট্যারিফ, জিরো নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার এবং অটোমোবাইল শিল্পে কোন ধরনের সাবসিডারি শ্তল্ক রাখা যাবে না। এবং সকল ধরনের ট্যারিফ তুলে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানায় জাংকার। ট্রাম্প এটাকে একটা গঠনমুলক মিটিং বলে মন্তব্য করায় সাময়িম ইউরো শক্তিশালী হয়ে গিয়েছিল ডলারের বিপরীতে। কিন্তু এর পরেই ট্রাম্প এখনো অনেকদূর আমাদের আগাতে হবে বলে মন্তব্য করার পর মার্কেত ভোলাটিলিটি কমে যায়। ইউরো আর ১.১৭৬০ ব্রেক আউট করতে পারে নাই। গত সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে ট্রাম্প টুইট করে চিন তাদের কৃষকদের টার্গেট করতেছে। চিন অলরেডি আমেরিকা থেকে সয়াবিন কেনা বন্ধ করে দিয়েছে ট্যারিফ কার্যকর হওয়ার পর। এদিক দিয়ে আমেরিকাও চিনের উপর হিউজ পরিমান ট্যারিফ দিয়ে রেখছে। যদিও ট্রাম্প চাচ্ছে না ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর সাথে ট্রেড কনফ্লিক্ট এ জড়াতে। কিন্তু জার্মানির অনেক গাড়ির কোম্পানি আছে চিনে। এক দেশের সাথে বানিজ্য রেখে আরেক জনের সাথে কন্টিনিউ করা ট্রাম্প এর জন্য টাফ হয়ে যাবে। আমার মতে ট্রাম্প এর সিদ্ধান্ত আমেরিকাকে ভোগাবে। এদিক দিয়ে আমেরিকার ট্যারিফ এর কারনে চিনের ইকোনোমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে , এই ক্ষতি থেকে বাচতে অলরেডী চিন কম্বাইনিং ট্যাক্স কাট শুরু করেছে, ৭৪ বিলিয়ন ডলার ইকোনোমিতে ইনভেস্টমেন্ট করছে এবং চাইনিজ ইউয়ান একচেঞ্জ রেট দুর্বল করে প্রোডাক্ট প্রাইজ চিপ রাখার চেষ্টা করতেছে।
-
আমেরিকা ও চীনের এই ট্রেড ওয়ার মুলত বিশ্ব অর্থনৈতিকে আধিপত্য করার যুদ্ধ। ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্রেড ওয়ারের মধ্যে বাংলাদেশ নামও উল্লেখ করেছেন। তিনি ৪০ থেকে ৫০% ট্যারিফ বৃদ্ধির কথা বলেছেন এবং এই ট্যারিফ বৃদ্ধি বিল পাশ হয়ে কার্য কর করা শুরু হয়েছে। অাঙ্কটাড প্রেডিক্ট করেছে এই ট্রেড ওয়ারে পশ্চিমা বিশ্বে ও চীনে ( ০% থেকে ৪০% পর্যন্ত) ট্যারিফের হেরফেরে তাদের অর্থনীতির জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। কারণ সে সব দেশের এটা মোকাবেলা করার মতো অবস্থা আছে। চীন দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ আগে থেকেই গড়ে তুলেছে। আঞ্চলিক সামুদ্রিক বন্দর, আন্ত-রাষ্ট্রীয় সড়ক যোগাযোগ, ইত্যাদির মাধ্যমে একটা স্থিতিশীল বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্পর্ক সৃষ্টি করে রেখেছে কিন্তু একই সময়ে আমাদের মতো দেশে ট্যারিফ ৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি (অবশ্যই পশ্চিমা কর্তৃক) হতে পারে যা আমাদের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত।
-
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ট্রেড ওয়ার অচলাবস্থা তৈরি করেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যে ট্যারিফ বৃদ্ধি করেই যাচ্ছে যা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ৩৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেছে। চীন পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তাৎক্ষণিকভাবে সমমূল্যের মার্কিন পণ্যে শুল্ক ধার্য করে। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার এর আগে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হতে পারে—এমন আরও ২০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের চীনা রপ্তানির তালিকা প্রকাশ করলে বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। তালিকায় ছিল ফলমূল ও সবজি, হাতব্যাগ, রেফ্রিজারেটর, রেইন জ্যাকেট ও বেসবল প্লাভস। ওই শুল্ক, যা এখন আরও চড়া হতে পারে, সেপ্টেম্বর নাগাদ কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে ট্রেড ওয়ার ধারণার চেয়েও অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে এটি প্রায় ২০১৯ সাল বা তারও বেশি ধরে চলতে পারে। যেহেতু কোনো পক্ষই নিজেদেরকে দুর্বল মনে করে না এবং উভয়ই ইতিমধ্যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সুতরাং পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে যে এই যুদ্ধে কেউ কাউকে ছাড় দিবে না। যদিও যুক্তরাষ্ট্রে কৃষক, ইস্পাত ব্যবহারকারী এবং ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। চীনের উৎপাদনকারীরা তাকিয়ে দেখবে যে তাঁদের ব্যবসাগুলো ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ার মতো প্রতিবেশীদের কাছে চলে যাচ্ছে।
-
আমেরিকা ও চীনের ট্রেড ওয়ার শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে, যার প্রভাবে এবারের কোরবানী ঈদের পর দেশের চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। কেননা বাংলাদেশের চামড়ার মুল মার্কেট হলো চীন, কিন্তু দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চীন বিগত তিন মাস যাবৎ বাংলাদেশ থেকে চীনে কোন চামড়ার রফতানি হয়নি। চীন চামড়া নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, আগের অর্ডার বাতিল করেছে এবং নতুন কোনও অর্ডারও দিচ্ছে না। ফলে চীনের আগের অর্ডারের প্যাকিং করা প্রায় ১০০ কন্টেইনার এখনও নিচ্ছে না চীন।
-
যদিও ট্রেড ওয়ার এখনো পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেই রয়েছে, কিন্তু অতি শীগ্রই এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করবে। যেমন একন কিছুটা প্রভাব পড়েছে ইইউ ও কানাডা থেকে আমদানি করা স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর এবং পরবর্তীতে এটা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে যাবে। আর বিশ্ব অর্থনীতিতে এই ট্রেড ওয়ারের ফল হবে ভয়ানক, তবে কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর চীনের শুল্ক আরোপের কারণে লাভবান হতে পারে। যেমন: চীন সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, লাওস ও শ্রীলংকা থেকে আমদানির ওপর শুল্ক হ্রাসের একটি লম্বা তালিকা ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশকে শুল্ক হ্রাসের সুবিধা গ্রহণ করতে হবে এবং এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।
-
যারা চীনের কাছে হেরে যাচ্ছেন তারা হয়তো হতাশ হবেন, কারণ তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাড়াতাড়ি জিজ্ঞাসা করতে পারে না যে, কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিক দিয়ে চীন এর থেকে পিছনে পড়ে আছে। যদিও চীন অভ্যন্তরীণভাবে অনেক বেশি প্রাণবন্ত। এছাড়াও আমার মনে হয় যে ট্রেড ওয়ারে তাদের দেশকে জাতীয় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যা দীর্ঘ সময়ের জন্য চীনের প্রত্যাশা পূরণের চেয়েও বেশি।
-
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাচ্ছে চীনা পণ্যের ওপর ২০ হাজার কোটি ডলার সমপরিমান শুল্কা আদায় করতে, আর চীন এক্ষেত্রে আত্মরক্ষা করার পাল্টা আক্রমণ করে চীন শুল্ক আদায় করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলার সমমূল্যের পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে। আগামীতে যদি ট্রাম্প প্রশাসন চীনা পণ্যের ওপর আবারও কোন অতিরিক্ত শুল্কারোপ করে, তবে সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে ওয়াশিংটনের সাথে ব্যবসা- বাণিজ্য নিয়ে যে মিটিং এর কথা রয়েছে সেটা বাতিল হয়ে যেতে পারে এবংসব ধরনের সমঝোতায় পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
-
সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যের ওপর প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার ট্যারিফ আদায় করার লক্ষ্য আজ থেকে কার্যকর করা হয়েছে। যার প্রভাবে চীনের মার্কেট থেকে উৎপাদন কার্যক্রম সরিয়ে নিচ্ছে এশিয়ার বড় বড় ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলো। এই কোম্পানীগুলোর তালিকার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার এসকে হাইনিকস ও জাপানের মিত্সুবিশি, তোশিবার মতো অনেক কোম্পানি। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে বাণিজ্যযুদ্ধে বৈশ্বিক অর্থনীতিকে খেসারত দিতে হতে পারে ৪৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।