-
ব্রেক্সিটসংশ্লিষ ট অনিশ্চয়তার কারণে যুক্তরাজ্যের কারখানাগুলোর উৎপাদন গত ছয় বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্নে চলে এসেছে। এদিকে দেশটির ভোক্তাঋণও পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে চলে এসেছে। ইনফরমেশন হ্যান্ডলিং সার্ভিসেস বা আইএইচএস মার্কিট ও দ্য চার্টার্ড ইনস্টিটিউড অব প্রোকিউরমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাইয়ের (সিআইপিএস) মাসিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত মাসে যুক্তরাজ্যের কারখানাগুলোর উৎপাদন ২০১৩ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মজুদভাণ্ডার শক্তিশালী হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন ক্রয়াদেশ না দেয়ায় বা ক্রয়াদেশ হ্রাস করায় এমনটি ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে আইএইচএস মার্কিট ও সিআইপিএসের প্রতিবেদনে।
-
ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা, গাড়ির কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া, ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার পূর্বের মার্চের ডেডলাইনের আগে মজুদকৃত পণ্য শেষ হয়ে আসায় জুনে শেষ হওয়া তিন মাসে ব্রিটেনের জিডিপি কমেছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের জিডিপি কমেছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। ২০১২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের পর এবারই প্রথম দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হলো। যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস (ওএনএস) জিডিপির তথ্য প্রকাশ করার পর পূর্বাভাসকারীরা বড় ধাক্কা খেয়েছেন, কেননা তারা ধারণা করেছিলেন অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। জিডিপি কমার ফলে দেশটিতে মন্দার ও ব্যাকস্টপের আশঙ্কা আরো জোরদার হলো।
-
আগস্ট নিয়ে তিন মাসে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি। আগস্টের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির খবরে খানিকটা চাঙ্গা দেশটির অর্থনীতি। এতে দেশটি মন্দায় পড়ার যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা এড়ানোর কিছুটা হলেও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে দেশটির অর্থনীতি নির্ঘাত সংকুচিত হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস (ওএনএস)। তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়ে পড়াটা দেশটির অর্থনীতির সার্বিক দুরবস্থার ইঙ্গিত দেয়। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৩ শতাংশ। এখানকার ম্যানুফ্যাকচারিং খাত দুর্বল থাকা সত্ত্বেও টিভি ও চলচ্চিত্র নির্মাণে চাঙ্গা ভাব দেখা যাওয়ায় তা সম্ভব হয়েছে। অন্যদিকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আগস্টে দেশটির অর্থনীতি দশমিক ১ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে ওএনএস।
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো সংকুচিত হওয়ায় দেশটির প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। বিশেষত দেশটি মন্দায় পড়ার বিভিন্ন দিক চিহ্নিত করায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়। সেপ্টেম্বরের পরিসংখ্যান নিয়ে দেশটির তৃতীয় প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধির চূড়ান্ত হিসাব পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে ওএনএস। তবে তৃতীয় প্রান্তিকের দ্বিতীয় মাসে তথা আগস্টে দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হওয়া সত্ত্বেও ওএনএসের জুলাইয়ে করা এ প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস বাড়িয়ে দশমিক ৩ শতাংশ থেকে দশমিক ৪ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।
ইতিবাচকভাবে সংশোধিত দেশটির তৃতীয় প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস সম্পর্কে ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ অ্যান্ড্রু উইশার্ট বলেন, প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস সংশোধনের অর্থ হলো, আমাদের অর্থনীতি মন্দায় পড়তে যাওয়ার যে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল, তা কেটে গেছে। তবে সেপ্টেম্বরে দেশটির অর্থনীতি ১ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে ওএনএস। প্রসঙ্গত, ওএনএস দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রান্তিকওয়ারি পরিসংখ্যান দেখানোর জন্য মাসিক তথ্য ব্যবহার করে।
ওএনএস বলছে, মার্চে ব্রেক্সিটের আদি তারিখ থাকায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে কিছুটা চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে। এ সময় এখানকার পণ্য মজুদও কিছুটা বেড়েছে।
-
1 Attachment(s)
[ATTACH=CONFIG]9316[/ATTACH]
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি দশমিক ৩ শতাংশ সম্প্রসারিত হওয়ায় মন্দা এড়াতে সক্ষম হয়েছে ব্রিটেন। তবে ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা ব্যবসা কার্যক্রমকে সংকুচিত করায় তৃতীয় প্রান্তিকে ব্রিটেনের প্রবৃদ্ধির হার প্রায় এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মন্থর হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের (ওএনএস) পরিসংখ্যান অনুসারে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১০ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর সবচেয়ে মন্থর। দ্বিতীয় প্রান্তিকে বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এদিকে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দশমিক ২ শতাংশ সংকোচনের পর জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অর্থনীতি প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসায় মন্দা এড়াতে সক্ষম হয়েছে যুক্তরাজ্য। পরপর দুই প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হলে মন্দা ধরা হয়।
ওএনএসের এক পরিসংখ্যানবিদ বলেন, মূলত জুলাইয়ের শক্তিশালী পরিসংখ্যানের সুবাদে তৃতীয় প্রান্তিকে জিডিপি ‘স্থিতিশীলভাবে’ বেড়েছে। পণ্য ও সেবা উভয়ের রফতানি বাড়ায় ব্রিটেনের অন্তর্নিহিত বাণিজ্য ঘাটতি সংকুচিত হয়েছে। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি সম্প্রসারিত হলেও তা অর্থনীতিবিদদের দেয়া দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের চেয়ে মন্থর ছিল।
এদিকে সেপ্টেম্বরে জিডিপিতে দশমিক ১ শতাংশ পতন দেখা গেছে। এছাড়া আগস্টে ওএনএসের সংশোধিত পরিসংখ্যানে সংকোচন দশমিক ১ শতাংশ থেকে বেড়ে দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়ায়। এর আগে কেবল জুলাইয়ে দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা মেলে।
ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা তৃতীয় প্রান্তিকে ব্রিটেনের অর্থনীতিকে আরো ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির দিকে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু দেশটির সেবা খাত যুক্তরাজ্যকে ধনাত্মক টেরিটোরিতে নিয়ে আসার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। চলচ্চিত্র ও টিভি প্রোডাকশন শিল্প থেকে শুরু করে ব্যাংকিং খাতটির অন্তর্গত।
ব্রিটেনের ছায়া অর্থমন্ত্রী জন ম্যাকডোনেল বলেন, আমাদের মন্ত্রীরা গত ছয় মাসের মধ্যে কেবল দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়াতেও যেভাবে আনন্দ উদযাপন করছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে অর্থনীতি নিয়ে তাদের আশা ও প্রত্যাশা কতটা কম।ব্রিটেনের লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টির ট্রেজারি মুখপাত্র এড ডেভি বলেন, এ ‘ফ্যাকাশে’ অর্থনীতির জন্য সরকার দায়ী। আজকের এ প্রবৃদ্ধি পরিসংখ্যান উদযাপনের একটি কারণ ছাড়া আর কিছুই নয়।এদিকে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ এ পরিসংখ্যানকে ‘ওয়েলকাম সাইন’ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তি যে শক্তিশালী এ পরিসংখ্যান তারই আভাস দিচ্ছে।
ওএনএসের পরিসংখ্যান অনুসারে, তৃতীয় প্রান্তিকে ব্রিটেনের রফতানি প্রান্তিকওয়ারি ৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। একই সময় আমদানি বেড়েছে মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে নিট বাণিজ্য বেড়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। তবে এ পরিসংখ্যানের যথাযথতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ওএনএস। সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘বহিঃস্থ তথ্য’ থেকে সরকারিভাবে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের তুলনায় দুর্বল রফতানি প্রবৃদ্ধির আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের ম্যানুফ্যাকচারিং খাত প্রবৃদ্ধি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলে ব্যবসা বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারার ের সংগঠন মেক ইউকের প্রধান অর্থনীতিবিদ সিমাস নেভিন বলেন, ব্রেক্সিট অনিশ্চয়তা ও মন্থর বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো কর্মী ছাঁটাই অব্যাহত রেখেছে। তবে সরকারি খাতের আবাসন নির্মাণ বৃদ্ধি ও বাণিজ্যিক কাজের নতুন কার্যাদেশ ঘুরে দাঁড়ানোয় মে মাসের পর নির্মাণ খাতে প্রথম ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
-
1 Attachment(s)
[ATTACH=CONFIG]9694[/ATTACH]
২০০৮ সালের পর সবচেয়ে চাপে ব্রিটিশ অর্থনীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্রেক্সিট অনিশ্চতায় পড়ে ব্রিটেনের অর্থনীতির অবস্থা একেবারে নাজেহাল। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, ২০০৮ সালের পর সবচেয়ে খারাপ বছরের দেখা পেতে যাচ্ছে ব্রিটিশ অর্থনীতি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মন্দার সময় ব্যতীত এমন খারাপ সময় আর দেখেনি অর্থনীতিটি। চলতি বছরের পুরোটা সময় অস্থির ছিল ব্রিটিশ অর্থনীতি। অন্যদিকে বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয় পেয়েছেন বরিস জনসন। এ সবকিছুই প্রভাব ফেলছে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর। ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ওপর পরিচালিত জরিপ ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯ সালের শেষ তিন মাস স্থবির থাকবে অর্থনীতিটি। কর্মসংস্থান বাজারে উদ্বেগ লক্ষ করা যাচ্ছে এবং এক দশক ধরে উন্নতি হওয়ার পর সরকারি ঋণ আবার খাড়াভাবে বাড়তে শুরু করেছে। বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের জিডিপি প্রবৃদ্ধি মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে নতুন পূর্বাভাসে জানিয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই)। নির্বাচনের আগে ও ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অশ্চিয়তার দরুন খুচরা বিক্রি কমে যাওয়ায় এবং ব্যবসা বিনিয়োগ স্থগিত থাকায় প্রবৃদ্ধির এমন হাল হবে বলে মনে করছে বিওই। ব্যাংকটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৯-এ পুরো বছরে প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ১ শতাংশ, মন্দার সময় বাদে অর্ধশতকের বেশি সময়ে এমন দুর্বল প্রবৃদ্ধি দেখা যায়নি।