নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন
নৈতিক শিক্ষা মানুষকে রাগ ও ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ হতে সাহায্য করে। এ কারণে মানুষকে রাগ বা ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে। মানুষ ভেদে রাগের মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হয় কেন-এমন প্রশ্ন অনেকের মনে জাগতে পারে। মনোবিজ্ঞানীরা এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করে থাকেন। এর একটি হলো- বংশগত ও শরীরবৃত্তিয়। এ কারণে অনেক শিশুর মাঝেই জন্মের পর থেকে দ্রুত রেগে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
দ্বিতীয় কারণটি হলো- সাংস্কৃতিক ও প্রতিপালনের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমরা অনেকেই জানি না, কিভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। যেসব পরিবারে বিশৃঙ্খলা ও ঘনিষ্ঠতা কম,সেসব পরিবারের সদস্যরা সাধারণত বেশি রাগী হয়।
মানুষ ভেদে রাগের মাত্রায় ভিন্নতার কারণ নিয়ে কথা হলো। এবার আমরা রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায় নিয়ে খানিকটা কথা বলার চেষ্টা করবো। সাধারণত কোনো কারণ ছাড়া মানুষ ক্রুদ্ধ হয় না। এর মধ্যে কোনো কোনো কারণ গ্রহণযোগ্য, আবার কোনো কোনোটি অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক। ব্যর্থতা, অযৌক্তিক প্রত্যাশা, হিংসা-বিদ্বেষ ও অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানোর মতো কিছু অভ্যাস ও ঘটনার পাশাপাশি অবিচার, জুলুম ও দারিদ্রের মতো সামাজিক অসঙ্গতিগুলোও মানুষের রাগ বা ক্রোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে রাগ বা ক্রোধ প্রকাশের ধরনের ক্ষেত্রেও ব্যক্তিভেদে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। কিছু লোক আছে, একজনের ওপর রাগ পুষে রেখে অন্যের ওপর তার প্রকাশ ঘটায়। অনেকে আবার সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেখায়। কেউ কেউ আছেন, শত অন্যায়ের পরও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান না। এ ধরনের প্রতিক্রিয়াহীন অবস্থা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ভালো নয়। তবে যারা ক্রোম বা রাগকে কৌশলে সংবরন কোরে সেই শক্তিকে ভালো কাজে লাগাতে পারেন,তারাই প্রকৃত সফলকাম।
ইসলাম ধর্ম মানুষকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম ধর্মমতে, রাগ মানুষকে জ্ঞান, বিবেক ও ধর্মের পথ থেকে বিচ্যুত করে এবং মানুষের আচার-আচরণ ও চিন্তায় এর খারাপ প্রভাব পড়ে। রাগান্বিত অবস্থায় ক্ষমা করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম ধর্ম। বিশেষকরে কোনো ব্যক্তি যদি প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষমতা থাকার পরও প্রতিশোধ না নেয় এবং ক্ষমা করে দেয়,তাহলে তার এ কাজটি ধর্মের দৃষ্টিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে। ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, বড় বড় মনিষীরা ক্ষমা করার ক্ষেত্রে ছিলেন অগ্রগামী। তারা রাগান্বিত হলে সূরা আল-ইমরানের ১৩৪ নম্বর আয়াতটিও পড়তেন। এ আয়াতে বলা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ-ক্রটি মাফ করে দেয়। এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন।