-
দুটি আমেরিকান চেম্বার্স অব কমার্স প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, বিশ্বের শীর্ষ দুই পরা শক্তির অর্থনীতির মধ্যে চলমান ট্রেডওয়ারের জের ধরে চীনে বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে মার্কিন কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধে্য চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব নিয়ে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, চীনে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মার্কিন কোম্পানির ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও যদি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পরিকল্পিত আরো ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে আরো বেশি মার্কিন কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে
-
বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীনের ম্যানুফ্যাকচারিং ও রফতানির আউটলুক এখন হুমকির মুখে। এ অবস্থায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটির প্রবৃদ্ধির ওপর ক্রমে চাপ বাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় চলতি বছর চতুর্থবারের মতো ব্যাংকগুলোর নগদ জমার হার কমিয়েছে পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি)। ১৫ অক্টোবর থেকে নতুন এ নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় ১০ হাজার ৯০০ কোটি ডলার (৭৫ হাজার কোটি ইউয়ান) যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সহায়তামূলক পদক্ষেপ সত্ত্বেও সোমবার চীনের শেয়ারবাজারগুলোয় দরপতন লক্ষ করা গেছে।
-
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করেছে যে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আমাগী দিনগুলো বিশ্ব অর্থনীতির জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের চেয়ে আরো কমিয়ে আনতে হবে। যুক্তরাষ্টের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১৭ সালে ২.২ শতাংশ, ২০১৮ সালে ২.৪ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ২.১ শতাংশ হতে পারে। আবার চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১৭ সালে ৬.৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৬.৬ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ২.২ শতাংশ হতে পারে।
-
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রেসিডেন্টের মধ্যে আসন্ন বৈঠকের সুবাদে বাণিজ্যযুদ্ধের সমাপ্তি হবে বলে আশা করছেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করতে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে চীন। এ দুইয়ের প্রভাবে গতকাল এশিয়ার শেয়ারবাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হলে ডিসেম্বরের শুরুতেই দেশটি থেকে আমদানি করা সব পণ্যেই অতিরিক্ত শুল্কারোপ হবে— যুক্তরাষ্ট্রের এ হুমকির কারণে বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন মাত্রা পাবে বলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। এ অবস্থায় শেয়ারবাজারের এ দরবৃদ্ধি টেকসই হবে না বলে আশঙ্কা রয়েছে। যদিও চলতি বছরের অক্টোবরে মন্থর হয়ে পড়তে দেখা গেছে চীনের কারখানা কার্যক্রম, যা মার্কিন শুল্ক ও দুর্বল ইউয়ানের মুখে অর্থনৈতিক গতিশীলতা ধরে রাখতে হিমশিমরত এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতিটির জন্য আরেকটি দুঃসংবাদ।
-
[IMG]https://i1.wp.com/nongornews.com/wp-content/uploads/2017/11/tramp.jpg?fit=400%2C256&ssl=1[/IMG]
গত বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেন ট্রাম্প। পরে টুইটারে এক বার্তায় চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা ইতিবাচক দিকে মোড় নেয়ার কথা জানান তিনি। ফোনালাপে ট্রাম্প ও শি উভয় নেতাই তিক্ত বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে আশাবাদ প্রকাশ করলেও ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ট্রাম্প এরই মধ্যে মার্কিন কর্মকর্তাদের সম্ভাব্য শর্তের খসড়া নিয়ে কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের আলাপের পর বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি দুটির বাণিজ্য লড়াই নিয়ে শঙ্কায় থাকা শেয়ারবাজারগুলোয় ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। গতকাল টোকিওতে নিক্কেই সূচক ২ দশমিক ৩ শতাংশ, হংকংয়ের হ্যাং সেং ৩ দশমিক ৩৫ এবং সাংহাই কম্পোজিট ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার রফতানিমুখী কসপি সূচকেও ৩ শতাংশ যোগ হয়েছে।
-
ট্রেড ওয়ারের কারনে চীনের মার্কেট থেকে বোযিং এবং এয়ারবাস এর মত নামীদামী উড়োজাহাজ নির্মানকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদরে ব্যবসায় গুটিয়ে নিচ্ছে।বেসরকারী বিমান পরিবহনে চীনের মার্কেট সবচেয়ে বড় যা প্রায় সরকার উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট থেকে চীনের বেশিরভাগ বিমান ক্রয় করতে হয়। কিন্তু এই ট্রেড ওয়ারের কারনে এখন এটা বন্ধ হবার উপক্রম হচ্ছে এবং চীনের নিজেদের তৈরী বিমানের উপর গুরত্বরোপ করা হচ্ছে। ফলে ট্রেড ওয়ারের প্রভাব মার্কিন উড়োজাহাজ কোম্পানীগুলোর উপর পরতে যাচ্চে। যার কারনে মার্কিন অর্থনীতিতে বিপুল পরিমান রপ্তানী বাণিজ্য কমে যাবে।
-
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্রেড ওয়ার চরম আকার ধারন করার পরিপ্রেক্ষিতে চীন এবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মেকং অববাহিকাভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে যাচ্ছে। এর ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ অর্থনীতি চীন এবার থাইল্যান্ড ও লাওসের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিজেড) স্থাপনের দিকে এগোচ্ছে।এই মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল তৈরী হলে চীনের সঙ্গে সীমান্ত নেই এমন দেশগুলো থেকে আমদানিতে শুল্ক ও মূল্য সংযোজন করে (ভ্যাট) বিশেষ ছাড় দেয়া হবে। এই প্রথম সীমান্ত বাণিজ্যে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে চীন এবং মেকং অববাহিকাভুক্ত দেশ তথা সমগ্র আসিয়ানভুক্ত দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বেইজিং।’
-
অনেকেই আশা করেছিল, চলতি মাসের শেষের দিকে আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠেয় জি২০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের চলমান বিরোধ হ্রাসের পাশাপাশি কিছু চুক্তি হবে। পাপুয়া নিউগিনিতে চলমান এশিয়াপ্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অংশ নেননি, এছাড়াও প্রথম দিনেই বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার মতো ইস্যু ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিরোধপূর্ণ বাক্যবিনিময় হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স জানান, যতদিন পর্যন্ত বেইজিং তাদের দাবির কাছে মাথা নত না করবে, ততদিন চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ চলবে। এমনকি চীনের আমদানি পণ্যে শুল্ক দ্বিগুণও হতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, রক্ষণশীলতাকে আলিঙ্গন করে থাকে এমন দেশগুলো ‘ব্যর্থতায়’ পর্যবসিত হবে।
-
ট্রেড ওয়ারের প্রভাবে সুদীর্ঘ ২৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো আনুষ্ঠানিক যৌথ বিবৃতি ছাড়াই শেষ হলো এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলন। বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের তীব্র বিরোধের কারণেই শেষ মুহূর্তের যৌথ বিবৃতি প্রকাশে ব্যর্থ হন অংশগ্রহণকারী নেতারা। পাপুয়া নিউগিনির রাজধানী পোর্ট মোর্সবিতে অনুষ্ঠিত এপেক সিইও সামিটে সদস্য দেশগুলোর নেতা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নীতিনির্ধারক এবং বিভিন্ন কোম্পানির প্রধান কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। যে সহযোগিতার রূপরেখা নিয়ে এপেকের যাত্রা, এবারের আয়োজনে তার কোনো উপস্থিতি ছিল না বলেও সমালোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে।
-
বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য বিবাদ বলা যায় ভারতের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। যদিও আন্তর্জাতিক পণ্য রফতানিতে ভারতের চেয়ে চীনের দখল অনেক বেশি। এখানে ভারতের দখল ১ দশমিক ৭ শতাংশ, যেখানে চীন নিয়ন্ত্রণ করছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরের আমদানি পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের পর নয়াদিল্লি গাড়ির যন্ত্রাংশ, রাসায়নিক, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির মতো পণ্য রফতানিতে গুরুত্ব দিচ্ছে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধে আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছে বেইজিংয়ের রফতানি। এ সুযোগটিই গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে চাইছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বাজারে নিজেদের পণ্য রফতানি বৃদ্ধির দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে দেশটি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় ভারতকে কাছে টানতে চাইছে চীন।