-
ব্রেক্সিট কি আদৌও হবে
[IMG]http://paimages.prothom-alo.com/contents/cache/images/640x359x1/uploads/media/2017/10/14/be29c7ba1ae9d0726f7e74184d1f9b9c-59e179502aec7.jpg?jadewits_media_id=1031671[/IMG]
গণভোটের পরেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্যে বের হয়ে যাবার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না। বরং এই ইস্যুতে দুজন ‘হেভিওয়েট’ মন্ত্রীর পদত্যাগ করে থেরেসা মের নেতৃত্বে এটা আদৌও হবে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরেছে।
মুলত এখন ব্রেক্সিট কার্যকর করতে গিয়ে মহা বিপাকে পড়েছে ব্রিটেন সরকার। দুটি কারণে এই বিপদ। প্রথমত, বিচ্ছেদের পর যুক্তরাজ্য ইইউর একক বাজারের সুবিধা হারাবে। এতে দেশের অর্থনীতি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, চাইলেও একক বাজার থেকে যুক্তরাজ্য নিজেদের বিচ্ছিন্ন করতে পারছে না, কারণ স্বাধীন আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের অংশ উত্তর আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার উন্মুক্ত সীমান্ত বজায় রাখার চুক্তি (গুড ফ্রাইডে ডিল)।
-
ব্রেক্সিট কেবল নামেই হয়েছে, বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না, যদিও যুক্তরাজ্যের সংসদে এ সংক্রান্ত একটি বিল পাশ হয়েছে। কিন্তু ব্রেক্সিট বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে স্কটল্যান্ডের সংসদ এবং ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগ করায় ব্রেক্সিট বাস্থবায়নের সংকটে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এই বরিস জনসনই ছিলেন ইইউ ত্যাগের সমর্থক শিবিরের প্রধান নেতা। তাই টেরেসা মে'র জন্য ব্রেক্সিট চুক্তি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকছে। তাই ব্রেক্সিটের ভবিষ্যত কী হবে আর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কি নির্ভর করবে ইউরোপীয় নেতাদের উপরেই?
-
যুক্তরাজ্যের আইন সভায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়া সংক্রান্ত একটা বিল পাশ হওয়ার পরও যুক্তরাজ্যের বের হওয়ার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছেনা।বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন পদত্যাগ করায় ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের নুন সংকট তৈরি হয়েছে।
-
টেরিজা মে এর দলের মধ্যে ব্রেক্সিট নিয়ে অনেক বিরোধ থাকলেও ৬ জুলাই তার মন্ত্রিসভায় ইইউ’র সঙ্গে মে’র ‘বাণিজ্যবান্ধব’ ব্রেক্সিট পরিকল্পনা অনুমোদন পায় এবং তিনি এটি নিয়ে দলকে দ্বিধাবিভক্ত না করার জন্য সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টেরিজা মে এর ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন এবং এমনকি ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ট্রাম্প ব্রিটেনের সাথে সকল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি না করারও হুমকি দেন।
[IMG]http://cdn-rr1mu0hhwzsuhkwd.stackpathdns.com/media/imgAll/2016October/bg/may-n-trump-bg20170323102219.jpg[/IMG]
-
ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটের ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর মধ্যে নানা বিষয়ে আলোচনা করে কয়েক মাস জল ঘোলা করা হয়েছে, কিন্তু গত ২১মে জুলাই শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যুক্তরাজ্য সরকারের ব্রেক্সিট প্রস্তাবটি বাতিল করে দিয়েছে। এছাড়া গত ৬ ফেব্রুয়ারি ইইউ পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, সদস্যদেশগুলোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৯ মার্চের পর থেকে যুক্তরাজ্য ইইউ জোটে তাদের সব অধিকার হারাবে। ইইউ-ভুক্ত ২৮ দেশের মধ্য পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে অবাধ শুল্কমুক্ত অভিন্ন বাজারব্যবস্থার প্রচলন থাকলেও ব্রেক্সিটের পরও ইইউর সঙ্গে ব্রিটিশদের বাণিজ্য করা ইচ্ছা গ্রহণযোগ্য হবে না। এবং ইইউ জোটের সঙ্গে বাকি বিশ্বের নানা দেশের মধ্য শিক্ষা, সংস্কৃতি, পরিবেশ ইত্যাদি নানা বিষয়ে ৭৫০টি চুক্তি রয়েছে। যার মধ্য অর্থনীতি ও বাণিজ্য বিষয়ের চুক্তি রয়েছে ৬৫টি, ইইউ ত্যাগের ফলে যুক্তরাজ্যকে এখন এ চুক্তিগুলো আবারও নতুন করে করতে হবে।
সুতরাং এ বাণিজ্যবিষয়ক প্রস্তাব বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ধারনা করা হচ্ছে যে হয়তো ব্রেক্সিট কোনো রকম চুক্তি ছাড়াই বলবৎ করা হবে।
-
আর মাত্র দুই মাস পর যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর ৪০ বছরের সম্পর্কের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। যদিও এই শেষ মুহূর্তেও প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে তার বাণিজ্য-বান্ধব ব্রেক্সিট পরিকল্পনায় নিজ দলেরও সর্ম্পুণ পাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত টেরিজা মে’র ব্রেক্সিট পরিকল্পনা এবং ‘চেকারস প্ল্যান’ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত অবস্থা এর মধ্যে রয়েছে। যদিও যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর মধ্যে বাণিজ্য স্বার্থ সংরক্ষণ করে ব্রেক্সিট করাটা বেশ কঠিন হবে। যা্ইহোক ২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে ব্রেক্সিট সফল করতে যুক্তরাজ্যকে ইইউ ত্যাগের চুক্তি সম্পন্ন করতে হবে এবং সেই চুক্তি টেরিজা মে’কে তার পরিকল্পনা পার্লামেন্টে পাশ করাতে হবে।
-
গত শনিবার ব্রেক্সিটমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন তারা বেক্সিট এর খুব কাছাকাছি রয়েছে এবং ফলে খুব শিগগিরই যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেক্সিট চুক্তিতে সম্পূর্ণ হবে। তিনি মনে করেন নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে একটি ব্রেক্সিট চুক্তিতে বাস্তবায়িত হবে। ফলে ২০১৯ সালের ২৯ মার্চের মধ্যে যুক্তরাজ্যকে ইইউ ছাড়তে হবে। যদিও ৬ জুলাই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে মন্ত্রিসভায় তার ‘বাণিজ্যবান্ধব’ ব্রেক্সিট পরিকল্পনা উপস্থাপন করলেও ব্রাসেলসের সঙ্গে এখনও যুক্তরাজ্যের কোন বিচ্ছেদ পরিকল্পনা নেই।
-
ব্রেক্সিট অচলাবস্থাদুর করার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ‘অবস্থান পুনর্বিবেচনার’ জন্য আহ্বান জানিয়েছেন, এছাড়াও তিনি ব্রেক্সিট নিয়ে আরেকটি গণভোটের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বিরোধ হবার কোন সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না এবং আগামী নভেম্বরে মাসে ব্রেক্সিট নিয়ে শীর্ষ বৈঠকের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্য ও ইইউ এর নেতারা৷
-
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে অর্থনীতি, বৈদেশিক বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যুক্তরাজ্য। তাই গত কয়েকমাস ধরে এই ইস্যুতে একেও পর এক ব্রেক্সিট বিরোধী মন্তব্য এবং সিদ্ধান্তে থেরেসার মের অবস্থান ক্রতাগত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বর্ত মানে থেরেসা মে এর প্রসাশন প্রচন্ড চাপের মধ্যে আছে।
-
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন যে, ব্রেক্সিটের পর ইউরোপে প্রবেশদ্বারের ভূমিকা হারালেও যুক্তরাজ্যের ‘বৈশ্বিক সামর্থ্য অক্ষুণ্ন থাকবে। ফলে ব্রেক্সিটের পর ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্রিটেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগের পর ব্রিটেনকে বৃহত্তর বৈশ্বিক বাণিজ্য চুক্তি ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপে (টিপিপি) স্বাগত জানানো হবে। মুলত টিপিপি চুক্তি হল জাপান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, কানাডা, মেক্সিকো ও অস্ট্রেলিয়াসহ ১১টি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি বিস্তৃত বাণিজ্য চুক্তি। প্রকৃত টিপিপিতে যুক্তরাষ্ট্রও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ চুক্তিটি থেকে দেশটিকে প্রত্যাহার করে নেন।