-
শরণার্থী সংকট
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে শরণার্থী সংকট বর্তমান বিশ্বের একটি মুল সমস্যা। জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার তথ্যানুসারে, ২০১৬ সালের শেষ দিকে বিশ্বে শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী ও বাস্তুচু্যত মানুষের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ ৬ কোটি ৫৬ লাখে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমান বিশ্বের প্রায় সবর্ত্র রাজনৈতিক, সামরিক, জাতিগত ও মতাদর্শের নানা সংকট মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছে জাতি পরিচয়, বেঁচে থাকার অধিকার। যার ফলে তৈরী হচ্ছে শরণার্থী সংকট। সিরিয়ার শরণার্থী সংকট থেকে শুরু করে বাংলাদেশও রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে ভুগছে। জাতিসংঘের হিসাবমতে, অন্তত ৪ লাখ ২১ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
-
বর্তমানে বিশ্বে রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কট সবচেয়ে বড় ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছে। কেননা একবছর হয়ে গেলেও বিশ্বনেতাদের ব্যর্থতার কারণে রাখাইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ এখনো হচ্ছে এবং বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের ফেরত পাঠানো এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। যদিও রাখাইনে মিয়ানমার বাহিনী কিভাবে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ চালিয়েছে তারও ব্যবপাক তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে এবং সদ্য প্রয়াত জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের দেওয়া ৮৮ দফা সুপারিশমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করেছে করেছিলেন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা শরনার্থী সমস্যা নিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, তাদের অধিকার এবং প্রথাগত ও অপ্রথাগত নিরাপত্তা বিষয়ে গুরত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ক্যাম্পে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ঘুরে গেছেন। মিয়ানমারের ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার আগে পরিচয় যাচাইয়ের জন্য আরও সময় প্রয়োজন বলছেন।
-
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি সিঙ্গাপুরের এক অনুষ্ঠানে বলেন ‘‘রোহিঙ্গারা কবে ফিরতে পারবে, তা বলা কঠিন’’। এছাড়া এই সাত লাখের বেশি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরা নিয়ে উল্টো বাংলাদেশকে দোষারোপ করছে। যদিও মিয়ানমারের এই গড়িমসি করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তারা ক্রমশ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ছে। তিনি আরো বলেন ‘‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের সাথে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে, আর এটা সম্পন্ন হবার জন্য একতরফাভাবে সময়সূচি বেঁধে দেয়া খুবই কঠিন এবং এটা করার জন্য বাংলাদেশের সাথে একসাথে কাজ করতে হবে।’’ অন্যদিকে জাতিসংঘ সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করছে যে, তাদের সংস্থাগুলোকে মিয়ানমারে কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না এবং মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার আশ্বাস এখনো নিশ্চিত করা হয়নি, তাছাড়াও রোহিঙ্গাদের ফেরার পর চলাচলের স্বাধীনতা প্রদান করা হবে না বলে তারা আশঙ্কা করছে।
-
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিরসনের জন্য মিয়ানমারের উপর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলের চাপে অব্যাহত রয়েছে। যেমন মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্টে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে, সম্প্রতি ফেসবুক কর্তপক্ষ এইসব শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। এ্ছাড়াও জাতিসংঘ শত শত সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তাদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরী করেছে, ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি হবেন।