বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনকে বিভক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন সক্রিয় অংশীদাররা। বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে বিশ্বের বৃহৎ ইন্টারনেট বিজ্ঞাপন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটিকে ভেঙে ফেলার চাপ আসার আগেই নিজে থেকে খাতওয়ারি বিভক্ত হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খবর রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্ িক ‘সামঅবআস’ নামে একটি গ্রুপ বিভিন্ন বৃহৎ করপোরেশনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য ঠেকাতে কাজ করছে। গ্রুপটি বিভিন্ন খাতের জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়ে আসছে। গ্রুপটির পক্ষ থেকে এবার গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেটকে ভেঙে ফেলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বুধবার ক্যালিফোর্নিয়ার সানিভ্যালে অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের কার্যালয়ে শেয়ারহোল্ডারদের বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সামঅবআসের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে ভেঙে ফেলার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, অ্যালফাবেট অনেক বড় একটি প্রতিষ্ঠান। কাজেই প্রতিষ্ঠানটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ভেঙে ফেলা এখন সময়ের দাবি। অ্যালফাবেট যদি নিজে থেকে বিভক্ত হওয়ার উদ্যোগ না নেয়, তবে অ্যান্টিট্রাস্ট নিয়ন্ত্রকদের চাপে অদূর ভবিষ্যতে এ পথই অনুসরণ করতে বাধ্য হবে, যা প্রতিষ্ঠানটির জন্য ভালো হবে না। এতে প্রতিষ্ঠানটিতে অংশীদারদের ভ্যালু আরো কমবে।

বৈঠকে সামঅবআস এবং আরো ১৩ অংশীদারের প্রস্তাব ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রত্যাখ্যাত হয়। অ্যালফাবেটের শীর্ষ দুই নির্বাহী ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটাধিকার রাখেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে অ্যালফাবেট, ফেসবুক ও অ্যামাজন ডটকমের মতো জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে ফেলার দাবি ক্রমান্বয়ে জোরালো হচ্ছে। গোপনীয়তা ইস্যু এবং তথ্যের পাওয়ার হাউজ হয়ে ওঠায় এ ধরনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর রাজনৈতিক ও গ্রাহক পর্যায় থেকে চাপ বাড়ছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে গুগলের সমালোচনা করে আসছেন। ট্রাম্পের দাবি, কোনো প্রকার প্রমাণ ছাড়াই গুগল সার্চ ইঞ্জিন তার বিরুদ্ধে প্রতিকূল ফলাফল প্রদর্শন করছে। যে কারণে তাকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নিয়ন্ত্রকদের প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো বিষয়ে ইউরোপের নীতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন। গুগলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টের ব্যবসায় মনোপলির ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারির কথা বলেছেন। তবে তিনি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যায্য ব্যবসা ঠেকানোর নির্দিষ্ট কোনো প্রতিকারের পরামর্শ দেননি।

রয়টার্স চলতি মাসের শুরুর দিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানায়, মার্কিন বিচার বিভাগ ও ফেডারেল ট্রেড কমিশন গুগল, অ্যামাজন, অ্যাপল, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম বাড়িয়েছে। বাজার আধিপত্য কাজে লাগিয়ে এ প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো অন্যায় ব্যবসায় সুবিধা নিচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গত মাসে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুককে ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়েছিলেন সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্রিস হিউজ। বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ফেসবুক নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান বিতর্কের সমাধানে প্রতিষ্ঠানটিকে তিনটি পৃথক কোম্পানি হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানান তিনি। বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দিতে সহপ্রতিষ্ঠাতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষও।

গত বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ফেসবুকের বিরুদ্ধে বড় ধরনের একাধিক তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এসব ঘটনার জন্য ফেসবুকে মার্ক জাকারবার্গের একক কর্তৃত্বকে দায়ী করা হয়। বিশেষ করে, রাজনৈতিক পরামর্শক ও তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা তথ্য কেলেঙ্কারি প্রকাশের পর বিশ্বব্যাপী চাপের মুখে পড়ে ফেসবুক। এ ঘটনার পর কয়েকটি দেশের আইনপ্রণেতাদের সামনে শুনানিতে অংশ নিতে হয়েছিল মার্ক জাকারবার্গকে।

ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর চাপের মুখে রয়েছে ফেসবুক। এর প্লাটফর্মে ঘৃণ্য বক্তব্য ছড়ানো এবং ডাটা শেয়ারিং অনুশীলন নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। অভিযোগ বিপুলসংখ্যক মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে ফেসুবক। সোস্যাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠানটির নানা নেতিবাচক দিক নিয়ে মার্কিন আইনপ্রণেতারা দীর্ঘদিন ধরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। ফেসবুকের মতো বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠনের মতামত দিয়েছেন তারা।

নিউজ বনিকবার্তা