ইসিবি দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন ক্রিস্টিন লাগার্দে

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্দে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। এ দায়িত্বে নির্বাচিত হলে তিনি হবেন প্রথম নারী, যিনি ইউরোপভিত্তিক মুদ্রানীতি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের গুরুভার পালন করবেন। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি এ অঞ্চলের দেশগুলো নানা সংকটে ভুগছে। এ দেশগুলোর অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে নতুন মুদ্রানীতি ও পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এক সময়কার আইনজীবী ক্রিস্টিন লাগার্দে প্রথম নারী হিসেবে আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বেকার ম্যাকেঞ্জির প্রধান, জি৭ভুক্ত কোনো দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন রয়েছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রধানের দায়িত্বে।

নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এ নারী আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ব অর্থনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য নারী ক্ষমতায়নের বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি। লেহম্যান ব্রাদার্সের পরিবর্তে সংস্থাটির নাম লেহম্যান সিস্টারস হলে বিশ্বের অবস্থা আজ অনেক ভিন্ন, অনেক ইতিবাচক হতো বলে চলতি বছরের শুরুর দিকে মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) গুরুত্বপূর্ণ পদের কোনটিতে কে দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর মারিও দ্রাঘির উত্তরাধিকার হিসেবে ক্রিস্টিন লাগার্দেকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দিতে সংস্থাটির বেশির ভাগ নেতৃত্ব সম্মত হয়েছেন।

চীন, মেক্সিকো ও ইইউর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে এ অঞ্চলের অর্থনীতি সম্প্রতি চাপের মধ্যে রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বিশেষত ইউরোপীয় অঞ্চলের ম্যানুফ্যাকচারিং, নিম্ন সুদহার ও মূল্যস্ফীতির মতো বিষয়গুলো দূরদর্শী হাতে পরিচালনা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বর্তমান ইসিবি প্রধান মারিও দ্রাঘি। অর্থনৈতিক প্রতিকূল পরিবেশ সত্ত্বেও এ অঞ্চলে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের কম, যা ইসিবির পূর্বাভাসের প্রায় অর্ধেক। এদিকে একই সময়ে এ অঞ্চলের বন্ড কেনার হার ছিল ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ইউরো।

বিশ্ব অর্থনীতি বিভিন্ন ঘূর্ণাবর্তের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে গত সপ্তাহে মন্তব্য করেন লাগার্দে। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনমতো নিজেদের আর্থিক নীতি সংস্কার করতে অনুরোধ জানান তিনি। মূল্যস্ফীতির শ্লথগতি অব্যাহত থাকলে ইসিবিকে নিজেদের নীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে বলে ২০১৪ সালে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটি অনুরূপ পরিবর্তন আনার বা নীতি গ্রহণের অনেক আগে তিনি এ মন্তব্য করেছিলেন।

২০১২ সালে যেকোনো মূল্যে ইউরোকে বাঁচাতে কাজ করবেন, এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন দ্রাঘি। সম্প্রতি এ অঞ্চলের সরকারগুলোকে অনাগত অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষাকল্পে তার গৃহীত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করে থাকেন লাগার্দে। ইউরোকে ঢেলে সাজাতে চলতি বছরের মার্চে ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরকে উদ্ধৃত করেছিলেন তিনি। মলিয়ের লিখেছিলেন, যেসব বৃক্ষ বাড়ে ধীরে, মিষ্টি তাদের হাড়ে হাড়ে।

স্বর্ণকেশী ৬৩ বছরের এ নারীর কাজ করার আশ্চর্যজনক ক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করেন গবেষকরা। ফরাসি জাতীয় সাঁতার দলের একদা তিনি তালিকাভুক্ত সদস্য ছিলেন। এখনো তিনি নিয়মিত শরীর চর্চা করেন। এমনকি দরকার হলে সভার মাঝেই তিনি অল্পস্বল্প শরীর চর্চা করেন বলে প্রচার রয়েছে। কৃতিত্বের সঙ্গে আইএমএফের দায়িত্ব পালনের জন্য এরই মধ্যে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ইসিবির দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করলে তিনি এ রকম সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেলেন। এ রকম আলোচনায় তিনি একটু বিরক্ত ও ক্লান্ত বলেও জানিয়েছিলেন। এ ধরনের দায়িত্ব পালনে তিনি তেমন একটা আগ্রহী নন বলে মন্তব্য করেছিলেন সে সময়।

গত মাসের একটি সমীক্ষায় শুধু একজন অর্থনীতিবিদ লাগার্দের ইসিবির প্রধান নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল বলে জানিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, ইসিবি প্রধানের দৌড়ে পুরুষরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, যাদের মধ্যে জার্মানির বুন্দাসব্যাংক প্রেসিডেন্ট জেনস ওয়াইম্যান এগিয়ে রয়েছেন বলে একই সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছিল।

নিউজ বনিকবার্তা