ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, শিগগিরই চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা ফের শুরু হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে চুক্তি করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে আরোপিত সব শুল্ক তুলে নিতে হবে বলে আবারো জানিয়েছে বেইজিং। খবর ব্লুমবার্গ।

গত মাসে বাণিজ্য আলোচনা ফের শুরু করা এবং নতুন শুল্কারোপ না করার বিষয়ে একমত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তবে কবে নাগাদ ফের আলোচনা শুরু হবে কিংবা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে কতটা সময় লাগতে পারে, তা সুনির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। ট্রাম্প জানান, সাময়িক বিরতির অংশ হিসেবে ৩০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্কারোপ আপাতত স্থগিত রাখা হবে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কয়েকজন বাণিজ্য মধ্যস্থতাকারী জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হলেও কিছু শুল্ক রয়েই যাবে।

নিজেদের মধ্যকার বাণিজ্য দ্বন্দ্বের সমাধানে পৌঁছাতে না পেরে বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতি রেষারেষি করে একে অন্যের পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করছে এবং চীনা টেলিকম সরঞ্জাম কোম্পানি হুয়াওয়ে টেকনোলজিসকে ওয়াশিংটনের কালো তালিকাভুক্ত করার পর উত্তেজনার পারদ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্য দ্বন্দ্ব নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১০ মে এবং এরপর নতুন করে আলোচনার তারিখ এখনো নির্ধারণ হয়নি। ওইদিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক বৃদ্ধি করেন এবং হুমকি দেন তার দাবি চীন না মানলে, বাকি চীনা আমদানি পণ্যের ওপরও শুল্ক বৃদ্ধি করা হবে। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনাকে ক্ষীণ করে দেয়। সর্বশেষ বৈঠকের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে আলোচনায় স্থবির হয়ে রয়েছে। বাণিজ্যযুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব যেমন দুই দেশের অর্থনীতিতে পড়ছে, তেমনি বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি করছে। বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি। চলতি বছরের জন্য এপ্রিলে দেয়া পূর্বাভাসে আইএমএফ জানিয়েছে, মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য বিবাদ এবং চীনা অর্থনীতির শ্লথগতির জন্য প্রবৃদ্ধি কমবে। এপ্রিলে দেয়া পূর্বাভাসে সংস্থাটি বলছে, চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হবে, ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, অথচ জানুয়ারির পূর্বাভাসে ৩ দশমিক ৫ শতাংশের কথা বলা হয়েছিল।

হোয়াইট হাউজের অর্থনীতি-বিষয়ক উপদেষ্টা ল্যারি কডলো জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার ও ট্রেজারি সেক্রেটারি স্টিভেন মানিউচিন টেলিফোনে চীনের শীর্ষ বাণিজ্য মধ্যস্থতাকারী লিউ হির সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আলোচনায় বসার জন্য পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে কী ধরনের আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের পরিচালক কডলো বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে এবং শিগগিরই এটি ঘটতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তবে কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি, কেননা আপনি যদি মানসম্পন্ন চুক্তি চান, তবে তাড়াহুড়ো করা যাবে না।

এদিকে চীন আবারো জানিয়েছে, চুক্তি করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত সব ধরনের শুল্ক তুলে নিতে হবে। চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, শুল্ক তুলে না নিলে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে না। গত বৃহস্পতিবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও একই কথা জানিয়েছিল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাও ফেং বলেন, যদি দুই দেশ কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে চায়, তবে আরোপিত সব শুল্ক অবশ্যই তুলে নিতে হবে। এ বিষয়ে চীনের অবস্থান স্পট এবং এ থেকে পিছপা হবে না তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর যে শুল্ক আরোপ করেছে, তা তুলে নেয়ার চীনা অনুরোধ দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফের আলোচনায় বসলেও এ অনুরোধ প্রত্যাহার করবে না চীন।

নিউজ বনিকবার্তা