প্রতিষ্ঠানে আমূল সংস্কারের পরিকল্পনা করেছে জার্মানির বৃহত্তম আর্থিক প্রতিষ্ঠান ডয়েচে ব্যাংক। এ বৃহৎ পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে কয়েক হাজার কর্মী ছাঁটাই ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম হ্রাসের পরিকল্পনা করেছে জার্মান ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি। খবর ডয়েচে ভেলে, ব্লুমবার্গ।

সমস্যাজর্জরিত ডয়েচে ব্যাংকের বতর্মান সংকট শুধু ব্যয়সংকোচনের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জার্মান ব্যাংকটিও ঘুরে দাঁড়াতে নিজেদের বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমাচ্ছে।

এদিকে প্রতিষ্ঠানের অচল বিনিয়োগ ব্যাংকিং বিভাগের লোকসান বন্ধের চেষ্টা করে যাচ্ছেন ডয়েচে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টিয়ান সুইং। এর অংশ হিসেবে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করতে পারে ডয়েচে, যা ব্যাংকটির মোট বৈশ্বিক কর্মী বাহিনীর এক-পঞ্চমাংশ। উল্লেখ্য, গত বছর ব্যাংকটির অর্ধেকের বেশি আয় এসেছিল বিনিয়োগ ব্যাংক বিভাগ থেকে।

ডয়েচের ফিক্সড ইনকাম বিভাগের বৈশ্বিক প্রধান ইয়ানি পিপিলিস ও এমার্জিং-মার্কেট ডেট ট্রেডিংয়ের প্রধান জেমস ডেভিসসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ছাঁটাই হতে পারেন বলে ডয়েচের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত দুজন জানিয়েছেন। এরই মধ্যে বিনিয়োগ ব্যাংক প্রধান গার্থ রিচির চলে যাওয়ার কথা জানিয়েছে জার্মান ব্যাংকটি। এছাড়া আরো দুই পর্ষদ সদস্য খুচরা ব্যাংকিং প্রধান ফ্রাংক স্ট্রস ও প্রধান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সিলভি ম্যাথরাটের অপসারণের ঘোষণা দ্রুতই দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।

সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজেদের মার্কিন ইকুইটি ব্যবসার কিছু অংশ বিক্রি করতে মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক সিটিগ্রুপ, ফরাসি ব্যাংকিং গ্রুপ বিএনপি পারিবাসসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করছে ডয়েচে। মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগানের প্রাক্কলন অনুসারে, ডয়েচে ব্যাংকের মার্কিন ইকুইটি ব্যবসার বার্ষিক কর-পূর্ববর্তী ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২৩ কোটি ডলার (২০ কোটি ইউরো) থেকে ৩৪ কোটি ডলার (৩০ কোটি ইউরো)।

একসময় সম্পদের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংকটি বর্তমানে ৩ হাজার ৩৭০ কোটি ডলার থেকে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ডলারের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের জন্য একটি ব্যাড ব্যাংক স্থাপনে কাজ করছে বলে জানা গেছে।

২০০৮-০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর থেকেই ডয়েচের বিনিয়োগ ব্যাংকিং খাতকে টেকসই মুনাফার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে। একাধিক কেলেঙ্কারি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে ঝামেলা, উচ্চ অর্থায়ন ব্যয়, প্রতিভার ঘাটতি ও তুলনামূলক ক্ষুদ্র প্রতিদ্বন্দ্বী কমার্জব্যাংকের সঙ্গে ব্যর্থ একীভবন চেষ্টার পর এরই মধ্যে ডয়েচের শেয়ারদর রেকর্ড নিম্নে দাঁড়িয়েছে।

মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংকের বিশ্লেষকরা গ্রাহকদের প্রতি এক বার্তায় জানিয়েছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় ডয়েচে ব্যাংকের ইকুইটি কার্যক্রম আন্ডারপারফর্মিং। এর পাশাপাশি ডয়েচের বিনিয়োগ ব্যাংকিং ব্যবসাও দীর্ঘদিন ধরে অলাভজনক রয়েছে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, পরিকল্পিতভাবে কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে প্রায় ২১৩ কোটি থেকে ২৮১ কোটি ডলার ব্যয় কমাতে সক্ষম হবে ডয়েচে ব্যাংক। এতে ব্যাংকটির আয় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উল্লেখ্য, মূলত বিনিয়োগ ব্যাংকিং বিভাগ ও মার্কিন ইউনিট থেকেই কর্মসংস্থান কমাতে যাচ্ছে জার্মান ব্যাংকটি।

পুনর্গঠন কার্যক্রমের কারণে বেশকিছু লক্ষ্য পূরণে ডয়েচে পিছিয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার মধ্যে চলতি বছর ৪ শতাংশ ইকুইটি রিটার্ন অর্জনের লক্ষ্য রয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছর জেপি মরগানের ১২ দশমিক ৬ শতাংশ ও সিটিগ্রুপের ৯ শতাংশের তুলনায় ডয়েচের ইকুইটি রিটার্নের পরিমাণ ছিল দশমিক ৫ শতাংশ।


নিউজ বনিকবার্তা