২০০৭-পরবর্তী সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকিতে রয়েছে ব্রিটেনের অর্থনীতি। আসন্ন এ শ্লথগতি মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ দরকার বলে এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। খবর গার্ডিয়ান।

রেজল্যুশন ফাউন্ডেশন নামে একটি থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় সতর্ক করা হয়, শ্লথগতির প্রভাব কমাতে প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি। ব্রেক্সিট ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শ্লথগতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ২০০৭-পরবর্তী ভয়াবহ আর্থিক মন্দার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

জীবনমানের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব কেমন হবে, এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এর আগের পাঁচটি মন্দা অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিয়েছিল, যাতে ব্রিটেনের প্রতিটি খানার আড়াই হাজার পাউন্ড করে লোকসান হয়েছিল। এছাড়া বেকারত্ব বরণকারীর সংখ্যা ১০ লাখে দাঁড়িয়েছিল।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ব্রিটেনের সদস্যপদ নিয়ে অব্যাহত অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। চলতি মাসের শুরুতে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কারনি সতর্ক করে বলেন, নেতিবাচক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের কারণে বৈশ্বিক অর্থবাজারে ‘ব্যাপক পরিবর্তন’ আসছে।

যুক্তরাজ্যের শীর্ষ অর্থনৈতিক পূর্বাভাসদানকারী সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল রিসার্চ গত সপ্তাহে এক প্রতিবেদনে জানায়, কোনোমতে একটি কৌশলগত মন্দা এড়াতে সক্ষম হয়েছে ব্রিটেন। দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি যেখানে শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, সেখানে তৃতীয় প্রান্তিকে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। টানা দুই প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হলে তখন কৌশলগত শ্লথগতি দেখা দিয়েছে বলে মনে করা হয়।

নির্মাণ খাতে এরই মধ্যে শ্লথগতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দ্য চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই বলছে, ওয়েস্টমিনস্টারে রাজনৈতিক অচলাবস্থা এ শিল্পকে চোরাবালিতে আটকে ফেলেছে। আবাসন খাতে ক্রয়-বিক্রয় ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে।

ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় সরকার ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ড কর্তৃপক্ষ সব ধরনের উপায় চেখে দেখে ফেলেছে বলেও অনেকের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়াও কঠিন, কারণ বর্তমানে সুদহার এমনিতেই অনেক নিচে।

রেজল্যুশন ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরবর্তী মন্দা আগের মন্দাগুলোর মতো হবে, এমনটা ভাবা খুব বিপজ্জনক। আশির দশকের শেষভাগ কিংবা নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে যে তীব্র বেকারত্ব দেখা দিয়েছিল, এবার হয়তো সে রকম হবে না।

প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক জেমস স্মিথ, আত্মতুষ্টিতে না ভোগার জন্য সতর্ক করে বলেন, দেশে ও বিদেশে শ্লথগতির পাশাপাশি ব্রেক্সিট নিয়ে ব্যাপক অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ মন্দার ১০ বছরের মাথায় ফের মন্দায় পড়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে যুক্তরাজ্য। তিনি আরো বলেন, কার্যকারণের দিক থেকে যদিও বিভিন্ন মন্দার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে; তবে সবগুলোই জীবনমানের ওপর প্রভাব ফেলে। সর্বশেষ পাঁচটি মন্দায় ব্রিটেনের প্রতি খানার আড়াই হাজার পাউন্ড সমমানের লোকসান হয়েছে এবং ১০ লাখের মতো ব্রিটিশ বেকারত্ব বরণ করেছে।

নীতিনির্ধারকরা মন্দা ঠেকাতে পারেন না, কিন্তু সঠিক নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে তার ক্ষতি প্রশমন করতে পারেন। আগামী সরকার কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য সমস্যা হলো, সর্বশেষ মন্দা মোকাবেলায় যে পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়েছিল, তা এবার ব্যবহার করা হয়ে গেছে কিংবা ওই অস্ত্রগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে।

নিউজ বনিকবার্তা