যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক এক বাণিজ্য চুক্তির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিপক্ষীয় এ বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদিত হলে ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় লেনদেন বর্তমানের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ, এমনকি পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ফোনালাপ হয়েছে। জনসনের অসাধারণ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা দেখেছেন ট্রাম্প। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য হওয়ায় যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাজ্য ইইউ ত্যাগ করলেই যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য অনেক গুণ বেড়ে যাবে। আগামী ৩১ অক্টোবর যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বের হয়ে গেলে দুই দেশের শিগগিরই আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্য ইইউর সদস্য হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাদা করে বাণিজ্য চুক্তি করতে পারে না।

সংক্ষেপে বাণিজ্য চুক্তি হলো দুই বা ততোধিক দেশের কতগুলো শর্তের ভিত্তিতে পরস্পরের মধ্যে পণ্য বা সেবা আমাদানি-রফতানি ও বিনিয়োগসংক্রান্ত চুক্তি। চুক্তিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে আমদানি-রফতানি শুল্ক, কোটা, অশুল্কসহ বিভিন্ন বাণিজ্য বাধা দূর বা হ্রাস করার শর্ত চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকে।

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নেই কেন: এক কথায় বলতে গেলে, যুক্তরাষ্ট্র-ইইউর মধ্যে কোনো বাণিজ্য চুক্তি নেই, তাই যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মধ্যে কোনো বাণিজ্য চুক্তি নেই। বিশ্বের কোনো দেশের সঙ্গে ইইউভুক্ত দেশগুলোর আলাদা করে বাণিজ্য চুক্তি করার এখতিয়ার নেই।

২০১৩ সালে তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইইউর সঙ্গে ট্রান্সআটলান্টিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পার্টনারশিপ বা টিটিআইপি নামে একটি বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু করেছিলেন। এ সমঝোতা চুক্তির কর্মসূচি ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক স্থগিত হয়ে যায়। তবে সম্প্রতি ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তি হতে কত সময় লাগতে পারে: ইইউ-কানাডার একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছতে সাত বছর লেগেছিল। ইইউ-দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো বাণিজ্য চুক্তি করতে সময় নিয়েছিল ২০ বছর। ইইউ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনিয়মিতভাবে বাণিজ্য চুক্তির কথা অনেক বছর ধরে চলছে। তবে দুই পক্ষ এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি।

ট্রাম্প ও জনসন বাণিজ্য চুক্তির জন্য উদগ্রীব বলে মনে হলেও সহসা এটা হয়ে ওঠা কঠিন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বহুপক্ষের চেয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি করা অনেক সহজ বলে ধারণা করা হয়। এদিকে যুক্তরাজ্য ইইউ ত্যাগ করার পরও যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি হতে অন্তত ১০ বছর সময় লাগতে পারে বলে ২০১৬ সালে মন্তব্য করেছিলেন বারাক ওবামা।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য চিত্র: যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার। ক্ষেত্রবিশেষে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৩২০ কোটি পাউন্ড, যা যুক্তরাজ্যের মোট বাণিজ্যের ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১৮ সালে উভয় দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ২৬ হাজার ২৩০ কোটি ডলার ছিল বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ। যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম বৃহৎ বাণিজ্য ও চতুর্থ বৃহৎ রফতানি গন্তব্য বলে জানিয়েছে ইউএস চেম্বার অব কমার্স।

নিউজ বনিকবার্তা