মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করে বলেছেন, নিজেদের ‘উন্নয়নশীল দেশ’ হিসেবে উল্লেখ করে চীন ও ভারতের মতো বড় অর্থনীতিগুলো বৈশ্বিক বাণিজ্য আইনের অধীনে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে, যা অন্যায্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) এসব দেশের এ সুবিধাগুলো বাতিল করার জন্য দাবি তুলেছেন তিনি। এছাড়া মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। খবর লাইভমিন্ট ও এএফপি।

রবার্ট লাইটহাইজারকে দেয়া নির্দেশনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, যেসব দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বলবে যে তাদের আর বিশেষ সুবিধার প্রয়োজন নেই, সেসব দেশ যেন নিজেদের ‘উন্নয়নশীল দেশ’ হিসেবে দাবি করতে না পারে, তার জন্য ডব্লিউটিও যেন ব্যবস্থা নেয়, সেজন্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত অর্থনীতির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠে না। এসব দেশের অর্থনীতি যেন আরো ভালোভাবে এগিয়ে যেতে পারে, সেজন্য ডব্লিউটিও বিভিন্ন বিবাদের সময় এদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে। দেশগুলো নিজেদের ‘স্ট্যাটাস বা অবস্থান’ বেছে নিতে পারে এবং অন্যান্য দেশ এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে।

ট্রাম্প বলেন, চীন ও ভারতের মতো শক্তিশালী অর্থনীতিগুলো ‘উন্নয়নশীল মর্যাদার’ কারণে বাণিজ্য আইনে ‘অন্যায্য সুবিধা’ পেয়ে থাকে। এর বিরুদ্ধে ডব্লিউটিও যদি ৯০ দিনের মধ্যে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ না করে, তবে এসব দেশকে ‘উন্নয়নশীল’ হিসেবে গণ্য করার বিরুদ্ধে একতরফাভাবে ভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে যুক্তরাষ্ট্র।

শুক্রবার এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ডব্লিউটিওর আইন এড়াতে ও বিশেষ সুবিধা পেতে বিশ্বের ধনী দেশগুলো যখন নিজেদের ‘উন্নয়নশীল’ হিসেবে দাবি করে, তখন ডব্লিউটিও হতাশা সৃষ্টি করে। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। আমি মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে নির্দেশ দিচ্ছি এমন পদক্ষেপ নেয়ার জন্য, যাতে এসব দেশ সিস্টেম ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করতে না পারে।

অন্য এক লিখিত বার্তায় তিনি লাইটহাইজারকে ৬০ দিনের মধ্যে তার কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেকে দাবি করলেও চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ও শীর্ষ রফতানিকারক। আরো যেসব ধনী দেশ নিজেদের উন্নয়নশীল বলে দাবি করে, তাদের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রুনাই, কুয়েত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

ওই লিখিত বার্তায় ট্রাম্প বলেন, চীন ও আরো অনেক দেশের নিজেদের ‘উন্নয়নশীল’ হিসেবে দাবি করা অব্যাহত রয়েছে, যাতে তারা এ ‘মর্যাদার’ সঙ্গে আসা বিশেষ সুবিধা ভোগ করতে পারে। এ ‘মর্যাদার’ কারণে ডব্লিউটিওর অন্য সদস্যদের তুলনায় এরা অন্যায্যভাবে দুর্বল অঙ্গীকার করার সুযোগ খোঁজে।

তবে ডব্লিউটিওর সাবেক কর্মকর্তা জেনিফার হিলম্যান বলেন, তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপ খুব একটা পরিবর্তন ঘটাবে না। উন্নয়ন দেশগুলোর জন্য যেসব বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছিল, তার বেশির ভাগ সীমা বেশ আগেই শেষ হয়ে গেছে। ডব্লিউটিওর আইনের মাত্র অল্প কিছু জায়গায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য শিথিলতা রয়েছে, এগুলো অবশ্যই বেশি না।

বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যকার বাণিজ্য বিবাদ এক বছর ধরে বাণিজ্যযুদ্ধে পরিণত হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করে আসছে যে জেনেভাভিত্তিক ডব্লিউটিও চীনকে সামাল দিতে পারছে না। এ কারণে ডব্লিউটিওর সংস্কার করেছে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প।

নিউজ বনিকবার্তা