অর্থনীতির চলমান শ্লথগতি ক্রমেই ভারতের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। জুনেও ভারতের অর্থনীতি শ্লথগতিতে ছিল। সেবা ও রফতানি খাতের বড় পতনে শ্লথগতি আরো ব্যাপক হয়ে উঠেছে।

গত ১৩ মাসের মধ্যে জুনে প্রথমবারের মতো সেবা কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে, যা ভোক্তা চাহিদা নিয়ে নতুন করে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির গাড়ি কেনা থেকে শুরু করে ব্যাংকঋণ—সব জায়গায় ভোক্তা চাহিদার দুর্বলতা চলছে। ব্লুমবার্গ নিউজের সংকলিত আটটি নির্দেশক বলছে, অর্থনীতিটিতে ‘গতিবেগ বা মোমেন্টামের’ অনুপস্থিত দেখা দিয়েছে। মে মাসের মতো জুনেও সার্বিক কার্যক্রম অপরিবর্তিত রয়েছে।

চলমান পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেতিবাচক পর্যায়ে রয়েছে। বিনিয়োগের শ্লথগতি ভারতের অর্থনীতিকে আরো বিপাকে ফেলছে।

ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারমনের বাজেটে আর্থিক প্রণোদনার বিষয়টি অনুপস্থিত রয়েছে, যে কারণে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির দায়িত্ব পড়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর। ২০১৯ সালের প্রথম তিন মাসে দেশটির প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা পাঁচ বছরের নিম্নে। সুদহার কী হবে, তা নিয়ে আগামী ৭ আগস্ট সিদ্ধান্ত জানাবে মনিটারি পলিসি কমিটি। ওই সময়ই ১ এপ্রিল শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস নিয়েও পর্যালোচনা প্রকাশ হবে।

সেবা খাতের জন্য ভারতের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) বলছে, ২০১৮ সালের পর জুনে প্রথমবারের মতো সেবা খাত সংকুচিত হয়েছে। গত মাসে পিএমআই দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬ পয়েন্টে। এ সূচকে ৫০ পয়েন্টের নিচে নামার অর্থ সংকোচন। ভারতের জিডিপির অর্ধেকের বেশি অংশ সেবা খাত।

আরেকটি পিএমআই জরিপ বলছে, ম্যানুফ্যাকচারিং কার্যক্রমও দুর্বল হয়ে পড়েছে। জুনে এ খাতের পিএমআই সূচক দাঁড়িয়েছে ৫০ দশমিক ৮ পয়েন্টে, যা মে মাসে ছিল ৫১ দশমিক ৭ পয়েন্ট।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চাহিদার দুর্বলতায় মূল্যস্ফীতিও স্তিমিত রয়েছে, যদিও খাদ্য ও জ্বালানির দামে অস্থিরতা চলছে। জুনে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ভারতের রফতানি কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ, যা ২০১৬ সালের জানুয়ারির পর সবচেয়ে বড় সংকোচন। বৈশ্বিক চাহিদায় দুর্বলতা ও বাণিজ্য বিবাদে দেশটির রফতানি হ্রাসে বড় অবদান রেখেছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম কমার ফলস্বরূপ আমদানি কমেছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ।

এ পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। চাহিদার দুর্বলতায় পরিবহন উপকরণ ও মেশিনারির মতো পণ্যের আমদানি কমেছে। এর অর্থ ভারতের বিনিয়োগ চক্রের ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টি প্রত্যাশার তুলনায় এখনো অনেক দূরে।

ভোক্তা ব্যয় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এখনো এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জুনে যাত্রীবাহী গাড়ি বিক্রি কমেছে ২৪ শতাংশ। জুন নিয়ে টানা আট মাস যাত্রীবাহী বাসের বিক্রি কমল। অন্যদিকে ট্রাকের মতো ভারী যানবাহনের বিক্রি কমেছে ১২ শতাংশ। দুর্বল বিক্রির কারণে বড় ম্যানুফ্যাকচারার া উৎপাদন কমিয়েছে এবং সাময়িকভাবে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে বহু লোক চাকরি হারিয়েছে।

দুর্বল ভোক্তা চাহিদা ও ধীরগতির বিনিয়োগের কারণে ব্যাংকঋণের চাহিদায়ও শ্লথগতি দেখা দিয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, সার্বিক ঋণ প্রবৃদ্ধি মে মাসের ১২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে শ্লথ হয়ে জুনে দাঁড়িয়েছে ১২ শতাংশে। এপ্রিলে এ হার ছিল ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।

তারল্য নির্দেশক সূচক সিটি ইন্ডিয়া ফিন্যান্সিয়াল কন্ডিশনস ইনডেক্স নির্দেশ করছে, এপ্রিল ও মে মাসে বেশকিছুটা স্তিমিত থাকলেও জুনে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ভারতের মূল অবকাঠামো খাতের প্রবৃদ্ধি, যা মোট শিল্পোৎপাদনের ৪০ শতাংশ, এপ্রিলের ৬ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে মে মাসে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশে। শিল্পোৎপাদন প্রবৃদ্ধি এপ্রিলের ৪ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে মে মাসে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশে। গাড়ি, পারিবারিক সরঞ্জামের মতো পণ্য ও অভোগ্য পণ্যের উৎপাদন কমেছে।


নিউজ বনিকবার্তা