বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের জন্য বৈশ্বিক জিডিপি র্যাং্কিংয়ে এক ধাপ নেমে গেছে ভারতের অবস্থান। এ র্যাংকিংয়ে ২০১৭ সালে ষষ্ঠ থাকলেও ২০১৮ সালে দেশটির অবস্থান সপ্তম। পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। ২০১৭ সালের র্যাংপকিং টেবিলে ফ্রান্সের অবস্থান ছিল সপ্তম। ২০১৮ সালে যথারীতি শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও বিজনেস টুডে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সালে র্যাংংকিংয়ে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির আকার ২০ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় বৃহত্তর অর্থনীতি চীন, জিডিপি ১৩ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার। তৃতীয় স্থানে থাকা জাপানের জিডিপির আকার ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে জার্মানি, জিডিপির আকার ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এর পরে থাকা যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের জিডিপির আকার যথাক্রমে ২ দশমিক ৮২ ও ২ দশমিক ৭৭ ট্রিলিয়ন ডলার। ২০১৭ সালে ভারতের জিডিপি ছিল ২ দশমিক ৬৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এ থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে দেশটির জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৭৩ ট্রিলিয়ন ডলার। ভারতের জিডিপির আকার বাড়লেও তা যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে পেছনে ফেলার জন্য যথেষ্ট ছিল না।

২০১৭ সালে ভারতের জিডিপি ছিল ২ দশমিক ৬৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যুক্তরাজ্যের ২ দশমিক ৬৪ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ফ্রান্সের ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এ হিসাবের কারণে ওই সময় বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তর অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হয় এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূলত মুদ্রার পতন ও প্রবৃদ্ধির শ্লথগতির কারণে ২০১৮ সালের র্যাং কিংয়ে বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি হয়েছে ভারত।

ইন্ডিয়া রেটিংসের প্রধান অর্থনীতিবিদ দেবেন্দ্র পান্তের তথ্যানুসারে, ২০১৭ সালে রুপির মান বেড়েছিল ৩ শতাংশ, ২০১৮ সালে মুদ্রাটির মান কমেছে ৫ শতাংশ। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে ভারতের অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়ার কারণে এমনটা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের এ প্রতিবেদন নিঃসন্দেহে মোদি সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়াবে। এমনিতে সময়টা ভালো যাচ্ছে না এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটির। ভারত মার্চসহ টানা চার প্রান্তিক প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি দেখেছে। চলতি বছরের মে মাসে দ্রুততম প্রবৃদ্ধিকারী অর্থনীতির তালিকায় ভারতকে হটিয়ে প্রথম হয়েছে চীন। এদিকে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করতে চান। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এ লক্ষ্য পূরণ করতে হলে দেশটিকে ৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। অন্যদিকে অর্থনীতির শ্লথগতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশটির বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে, অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, চাকরি হারিয়েছে উল্লেখযোগ্যসংখ্য মানুষ। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আরো কঠিন সময় দেখতে হবে ভারতকে। বাণিজ্যযুদ্ধ ও ব্রেক্সিটের কারণে সৃষ্ট বাহ্যিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিও দেশটির প্রবৃদ্ধির শ্লথগতির জন্য অনেকাংশে দায়ী।

সম্প্রতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে সিআরআইএসআইএল। ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির হিসেবে এ অর্থবছরে দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। কম বৃষ্টিপাত, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি ও প্রথম প্রান্তিকে দেশটির প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি হিসাবে নিয়ে এ পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

তবে গত মাসে আইএইচএস মারকিট জানায়, ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যকে হটিয়ে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হবে ভারত এবং ২০২৫ সালের মধ্যে জাপানকে হটিয়ে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে দেশটি।

অন্যদিকে ভারতের বেশির ভাগ বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ প্রত্যাশা করছেন, চলমান অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশের কাছাকাছি এবং সরকারের গ্রহণ করা পদক্ষেপ ফল দিতে শুরু করায় আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।

নিউজ বনিকবার্তা