বাংলা ভাষায় প্রচলিত একটি বাক্য হচ্ছে, সবুরে মেওয়া ফলে। ইতিহাসের সফল ব্যক্তিদের জীবন পর্যালোচনা করলেও এটা স্পষ্ট হয় যে, তাদের বিজয়ের পেছনে ধৈর্য শক্তি সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। যাদের ধৈর্যশক্তি নেই, তারা সামান্য বিপদেও ভেঙে পড়েন। কিন্তু ধৈর্যশীলরা একবার না পারিলে দেখো শতবার-এই নীতিতে বিশ্বাস করেন। মার্কিন বিজ্ঞানী টমাস এডিসন বৈদ্যুতিক বাতি তৈরির জন্য বারবার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। অবশেষে তিনি সফল হন। লেখক হেলেন কেলার অন্ধ হওয়ার পরও ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে লেখাপড়া শিখেছেন এবং মানুষের জন্য কাজ করেছেন। এমন অনেকেই ইতিহাস সৃষ্টি করতে পেরেছেন ধৈর্যশীল হওয়ার কারণেই। তবে ধৈর্য শক্তি ধরে রাখার জন্য কিছু বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণত: আমাদের ওপর যখন একাধিক দায়িত্ব এসে বর্তায় অথবা যখন কঠিন কোনো কাজ এসে পড়ে, তখন আমরা ধৈর্যহারা হয়ে পড়ি। এছাড়া যখন মানুষ তার শক্তি ও সামর্থের চেয়েও কঠিন কাজে হাত দেয়, তখন তাকে অবশ্যই তার কর্মসূচির বিষয়টি পরিবর্তনের চিন্তা করতে হবে। এ অবস্থায় কাজ ও দায়িত্ব এমনভাবে ভাগ করতে হবে- যাতে একই সময়ে একাধিক কাজের চাপ না থাকে। শক্তি ও সামর্থ অনুয়ায়ী সব কিছু করতে হবে।

মানুষের ধৈর্য-শক্তি বৃদ্ধির পেছনে ধর্মীয় জ্ঞান ও ঈমানি শক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধৈর্যশক্তি মানুষের জন্য সত কাজের সুযোগ ও ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা যায়। যারা ধৈর্যশীল হয়, তারা পরকালে পুরস্কারতো পায়ই, একইসঙ্গে ইহকালীন জীবনেও সাফল্য পায় এবং তাদের জীবন হয় প্রশান্তিময়। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে ধৈর্যশীলদের। এ ধরনের ব্যক্তিরা নিরর্থক অভিযোগ-অনুযোগ ও অন্যায় আচরণের মাধ্যমে অস্থির হয়ে ওঠে না বরং আল্লাহর সন্তুষ্টিকে গুরুত্ব দিয়ে নিজের প্রশান্তি নিশ্চিত করে। আল্লাহ যে কল্যাণকামী, সে বিষয়টি ধৈর্যশীল ব্যক্তিরা বিশ্বাস করেন এবং তিনি সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞানী, সবচেয়ে দয়াময়। এ কারণে এ ধরনের ব্যক্তিরা অনাকাঙ্খিত বিপদ-আপদের ধৈর্য হারায় না। দুঃখ-কষ্টের মাঝেও চূড়ান্ত কল্যাণ খোঁজার চেষ্টা চালায় এ ধরনের ব্যক্তিরা। এর ফলে সব ধরনের দুঃখ-কষ্টের মাঝেও শান্তভাব বজায় রাখে এবং অসদাচরণ থেকে বিরত থাকে।