অর্থনীতি সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ধীরে চলো নীতি অনুসরণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে চীন। নিজেদের রফতানিকারকদের বাড়তি সুবিধা দিতে সম্প্রতি দেশটি মুদ্রার অবমূল্যায়ন করলে পুরো বিশ্বে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, ধস নামে শেয়ারবাজারগুলোয়। এ অবস্থায় অর্থনীতির স্বার্থে আর আগ্রাসী না হওয়াকেই শ্রেয় মনে করছে চীন। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকপ্রধানরাও সদ্যসমাপ্ত জি২০ সম্মেলনে মুদ্রাযুদ্ধ এড়িয়ে চলা সাপেক্ষে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। খবর ব্লুমবার্গ ও ইকোনমিক টাইমস।

গত শনিবার আঙ্কারায় দুই দিনব্যাপী জি২০ সম্মেলনটি শেষ হয়। এখানে অংশ নেয়া সদস্য দেশগুলোর অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রধানরা মুদ্রার মান প্রতিযোগিতামূলক অবমূল্যায়নের চর্চা থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চীন কেন মুদ্রার অবমূল্যায়ন করল দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর ঝু জিয়াওচুয়ান সে বিষয়ে সম্মেলনে ব্যাখা প্রদান করেন। চীনা পরিস্থিতির পরই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমিয়ে দেয়।

শেয়ারবাজারের ধস নিয়ন্ত্রণে কী পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন পিপলস ব্যাংক অব চায়নার (পিবিওসির) এ গভর্নর। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র সুদহার বৃদ্ধির প্রস্তুতি শুরুর পরই উদীয়মান অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে; যার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের রক্ষা করতেই তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে।

জি২০ সম্মেলন শেষে প্রকাশিত চূড়ান্ত ইশতেহারে আর্থিক বাজারে সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতাকে উল্লেখ করে বলা হয়, ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় ঘটে কিনা, সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকতে হবে। এখানে আরো বলা হয়, আমরা প্রতিযোগিতাপূর্ণ মুদ্রার অবমূল্যায়ন থেকে বিরত থাকব। পাশাপাশি রক্ষণশীলতা থেকে দূরে থাকা হবে। অন্যদিকে বেইজিংয়ে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নীতি নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে উদ্বেগমুক্ত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চীনা কর্মকর্তারা।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এতে গতি আসবে বলে আশাবাদী জি২০। অন্যদিকে চীনের অর্থমন্ত্রী লুউ জিওয়েই এ সম্মেলনে জানান, তিনি আশা করছেন আগামী চার-পাঁচ বছর তাদের দেশের অর্থনীতি প্রায় ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মধ্যে থাকবে।

উল্লেখ্য, গত মাসে হঠাৎ করেই মুদ্রার মান অবমূল্যায়িত করে চীন, যা শুধু আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারেই নয়, বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মানেও অবনতি ঘটাতে থাকে। গত ২১ বছরের মধ্যে একসঙ্গে এত বেশি দেশের মুদ্রা অবমূল্যায়িত হয়নি। আশঙ্কা করা হয়, অবমূল্যায়িত ইউয়ানের কারণে চীনে পণ্য রফতানি করা দেশগুলো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

এ প্রসঙ্গে জি২০ সম্মেলনে চীনা অর্থমন্ত্রী জানান, এতটা দীর্ঘসময় ধরে ইউয়ান আর অবমূল্যায়িত হওয়ার কারণ দেখছেন না তিনি। আরো একবার জাপানের জন্য জি২০কে এ ধরনের বিবৃতি দিতে হয়েছিল। মুদ্রা নীতিমালা সংশ্লিষ্ট প্রণোদনার কারণে ডলারের বিপরীতে জাপানের ইয়েনের মান পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে

আসে। অন্যদিকে জুনে তিন মাসের সর্বোচ্চ অবস্থা থেকে সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্সটির ২০ শতাংশ পতন হলে ইউয়ান অবমূল্যায়িত করে চীন।

পিবিওসির আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান ঝু জুন জানান, নিজেদের রফতানিকারকদের সুবিধা দেয়ার জন্য মুদ্রা অবমূল্যায়িত করেননি তারা। সরকার আশা করছে, বাজারের অস্থিতিশীলতা এখন শেষ হওয়ার পথে।

মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যাক লু চীনের উদ্দেশে বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগে অবশ্যই আভাস দিতে হবে।