এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তথা জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) উচ্চতর সোপানের দিকে যাচ্ছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগে আস্থাহীনতাসহ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তারপরও এসব বাধা অতিক্রম করে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। 'এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৫' এডিবির হালনাগাদ বার্ষিক প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়।


গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এডিবির ঢাকা অফিসে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজুহিকো হিগুচি বক্তব্য রাখেন। এ সময় এডিবির ঢাকা কার্যালয়ে সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ পারভেজ ইমদাদ প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এ বছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্পর্কে যে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি, তা সরকারের প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধির চেয়ে দশমিক ৩ শতাংশ কম। গত ৪ জুন চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭ শতাংশ। এডিবির প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে মনে করে এডিবি। এ বছর মূল্যস্ফীতির হার কমে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলেও ধারণা ম্যানিলাভিত্তিক বহুজাতিক দাতা সংস্থাটির। গত বছর যা ছিল ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।


এর আগে গত জুন মাসে ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের 'গ্গ্নোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস' প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় চলতি অর্থবছর বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ করে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে এবার প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি হবে না। রাজনৈতিক সহিংসতাসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও গত অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন ছিল ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।


প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে কাজুহিকো হিগুচি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। বেসরকারি খাতে গতি বেড়েছে। পোশাক খাতের অবস্থাও অনেক ভালো। পরিবহন, শিক্ষা ও বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নও অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা মনে করছি, চলতি অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকা, সরকারি-বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় বাংলাদেশে উলি্লখিত হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে।


চলতি অর্থবছর কৃষি প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩ দশমিক ২ হবে। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির হার গত অর্থবছর ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এ অর্থবছর তা ৯ দশমিক ২-এ পেঁৗছাবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।


এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ পারভেজ ইমদাদ বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রশংসনীয় দৃঢ়তা দেখিয়ে প্রতি বছর গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে এই হার ছিল গড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। তিনি বলেন, অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো ইতিবাচক। কৃষি, শিল্পসহ সেবা খাতের প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে। তা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বিচক্ষণ মুদ্রানীতি বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে গতি এনেছে। এসব বিবেচনায় বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন পে স্কেলের কারণে মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কেননা, বাড়তি টাকা বাজারে এলে তখন অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও উৎপাদন বাড়বে। এর আগে সপ্তম পে স্কেলের পর থেকে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। পাশাপাশি জাতীয় আয় বেড়েছে ৭০-৭৫ শতাংশ।


সার্বিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি ব্যবস্থা খুবই ভালো। এসব উদ্যোগের ফলে এ বছর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর আরও বলেন, ঢাকা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থারও অনেক উন্নতি হয়েছে। অনেক ফ্লাইওভার তৈরি হয়েছে এবং বেশক'টি বাস্তবায়নাধীন। পরিবহন খাতও উন্নতি করছে। বিশেষ করে রেলওয়ে, সড়ক, আঞ্চলিক যোগাযোগ, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন সড়ক ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনেও বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।