রেকর্ড সর্বোচ্চের কাছাকাছি অবস্থানে গত বুধবার দিন শেষ করেছে ওয়াল স্ট্রিটের প্রায় সব সূচক। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) মুদ্রানীতি নিয়ে বিভ্রান্তি, গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য ও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক অবস্থান গ্রহণের কারণে এশিয়ার শেয়ারবাজারে গতকাল দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। যদিও একই সময় ইউরোপের বাজার প্রবণতা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে গতকাল শেয়ারবাজারে সবচেয়ে শক্তিশালী উত্থান দেখা গেছে জাপানে। গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিক্কেই ২২৫ বেড়েছে ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
চীনের মূল ভূখণ্ডে সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্সে পতন হয়েছে দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। যদিও হংকংয়ে হ্যাংসেং সূচক বেড়েছে দশমিক ৬৮ শতাংশ।
ভিয়েতনামে হ্যানয় স্টক এক্সচেঞ্জে এইচএনএক্স ৩০ সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য বাজারে দেখা গেছে নিম্নমুখী প্রবণতা। মালয়েশিয়ায় এফটিএসই বুরসা মালয়েশিয়া কেএলসিআই সূচকের পতন হয়েছে দশমিক ১১ শতাংশ। দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ কমেছে ইন্দোনেশিয়ার জেএসএক্স কম্পোজিট ইনডেক্স। ব্যাংককে থাইল্যান্ড এসইটি ইনডেক্সে পতনের হার ছিল দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। ফিলিপাইন স্টক এক্সচেঞ্জে পিএসইআই সূচক হারিয়েছে দশমিক ৩১ শতাংশ।
প্রতিবেশী ভারতের শেয়ারবাজারে গতকাল দেখা গেছে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। এ প্রতিবেদন লেখার সময় বিএসই সেনসেক্স সূচক বেড়েছে দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি এএসএক্স সূচক বেড়েছে দশমিক ১৪ শতাংশ।
এশিয়ার বাজারে গতকাল সবচেয়ে বেশি স্ফীত হয়েছে টোকিওর নিক্কেই ২২৫ সূচক। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশটিতে সরকারি বন্ডের চাহিদা এখন ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে। বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের বাজারসংক্রান্ত উদ্বেগ প্রশমনে সহায়তা করেছে। এর আগে অতি বিক্রয়চাপে দেশটির দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের ইল্ড রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। তবে বন্ডের বাজার এখন এ চাপ অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে।
জাপানের সরকারি বন্ডগুলোর মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি বন্ডের চাহিদা অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে গেছে বলে জানালেন মিজুহো ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের টোকিও অফিসের সুদহার ও বৈদেশিক মুদ্রাবাজার বিষয়ক চিফ ডেস্ক স্ট্র্যাটেজিস্ট শোকি ওমোরি। টোকিওর শেয়ারবাজারে এখন এরই প্রভাব দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
দেশটির বাজার উল্লম্ফনে প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতের জায়ান্ট সফটব্যাংক গ্রুপ করপোরেশনের শেয়ারমূল্য ৯ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধিরও বড় প্রভাব দেখা গেছে। ওপেনএআই ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে কৌশল পরিবর্তন নিয়ে কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্য এ শেয়ারদর বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
ইউরোপের বাজারে গতকাল আমস্টারডাম, কোপেনহেগেন ও হেলসিংকি বাদে মোটামুটি সবখানেই শেয়ারবাজার সূচকগুলো ছিল ঊর্ধ্বমুখী।
এর আগে গত বুধবার দিনশেষে ওয়াল স্ট্রিট্টের সব সূচক সর্বকালের সর্বোচ্চের কাছাকাছি পর্যায়ে এসে স্থির হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত মিশ্র অর্থনৈতিক তথ্য ও ফেডের সুদহার কমানোর প্রত্যাশায় বাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এদিন এসঅ্যান্ডপি ৫০০, ডাও জোন্স ও নাসডাক কম্পোজিট এ তিন প্রধান সূচকেই উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
এর মধ্যে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক দিনশেষ করেছে দশমিক ৩ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখিতায়। বর্তমানে অক্টোবরের শেষ দিকের রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ের মাত্র দশমিক ৬ শতাংশীয় পয়েন্ট নিচে অবস্থান করছে সূচকটি। অন্যদিকে ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ ও নাসডাক কম্পোজিট সূচক বেড়েছে যথাক্রমে দশমিক ৯ ও দশমিক ২ শতাংশ।
চলতি বছর মার্কিন শেয়ারবাজারের উত্থানে ভূমিকা রেখেছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। সেই প্রবণতা বছর শেষেও বিদ্যমান। বুধবার এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকে সবচেয়ে বড় উত্থান হয়েছে মাইক্রোচিপ টেকনোলজির শেয়ারদরে, যা ১২ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেকট্রনিকস চিপ খাতের কোম্পানিটি আশা করছে, বছরের শেষ কয়েক মাসের বিক্রয় ও মুনাফা পূর্বাভাসকে অতিক্রম করে যাবে।
একই দিন বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে মারভেল টেকনোলজি। সেমিকন্ডাক্টর পণ্য সরবরাহকারী কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকাশিত চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদনে বিশ্লেষকদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মুনাফা দেখিয়েছে কোম্পানিটি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন পুঁজিবাজারের ঊর্ধ্বমুখী এ প্রবণতায় ভূমিকা রেখেছে দেশটির ট্রেজারি বন্ডের ইল্ডের পতন এবং নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারি খাতে নতুন চাকরির তুলনায় কর্মসংস্থান কমার তথ্য। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার তথ্যে ফেডের আগামী সপ্তাহের বৈঠকে আরেক দফায় সুদহার কমানোর সম্ভাবনা বেড়েছে।
দেশটিতে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের রিটার্ন ৪ দশমিক শূন্য ৯ থেকে কমে ৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে নেমেছে। বিটকয়েনের দামও টানা পতনের পর বুধবার ৯৩ হাজার ডলারের ওপর উঠে আসে। ডিজিটাল এ মুদ্রার দাম গত মাসে কিছু সময়ের জন্য ৮১ হাজার ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল।
এদিন ওয়াল স্ট্রিটে তুলনামূলক কম কোম্পানির শেয়ারদরে পতন হয়েছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকে প্রতি তিনটি কোম্পানির একটির শেয়ারের দাম এদিন কমেছে। তবে এ তালিকায় কিছু প্রভাবশালী কোম্পানির উপস্থিতি সূচকের ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম টেনে ধরে। যেমন বুধবার একদিনে মাইক্রোসফটের শেয়ারদর কমেছে আড়াই শতাংশ, যা এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের ঊর্ধ্বগতিকে সীমিত করে রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে।

Thread: 

