বিশ্বের প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভুত এবং মজার কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (সংক্ষেপে SNB)। সাধারনত বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মালিক দেশগুলোর সরকার তথা জনগণ হলেও SNB এর ৪০ শতাংশ মালিকানাই বেসরকারিভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে। শুধু তাই নয়, এই কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং স্টক মার্কেটেও অন্তর্ভুক্ত। তার থেকেও মজার ব্যাপার হল, বিশ্বের অন্য দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শেয়ারের মালিক হতে পারেন আপনিও, কেননা বিদেশীরাও কিনতে পারে SNB এর শেয়ার। এরকম অদ্ভুত কেন্দ্রীয় ব্যাংক আছে বলেই সুইস ব্যাংকগুলো সারা বিশ্বের কালো টাকা জমা রাখার ভান্ডারে পরিনত হতে পেড়েছে। কেননা, সুইজারল্যান্ডের মনেটারি পলিসি বা আর্থিক নীতি তো SNB ই নির্ধারন করে। bdpips_1500797992__53820_fav_swissbank.p ১৯০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটি সুইস সরকারের মালিকানাধীন নয়। ব্যাংকটির ৪৫ শতাংশ মালিকানা সুইস কান্টনগুলোর (সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন প্রদেশ), ১৫ শতাংশ মালিকানা বিভিন্ন ক্যান্টনের ব্যাংকগুলোর এবং বাকি ৪০ শতাংশ বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানাধীন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই (১৯০৭), SNB সুইজারল্যান্ডের প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জে (SIX Swiss Exchange) তালিকাভুক্ত। বর্তমানে এই স্টক এক্সচেঞ্জে SNB এর শেয়ার কেনাবেচা হয় SNBN নামে, যার প্রতিটি শেয়ারের মূল্য বর্তমানে ১৯৩৩ সুইস ফ্রাংক। সাম্প্রতিককালে SNB সবচেয়ে আলোচনায় আসে ইউরোপ্রতি সুইস ফ্রাংকের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করে দিয়ে। ২০১১ সালে ব্যাংকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে যে, ১ সুইস ফ্রাংকে সর্বোচ্চ ১.২০ ইউরো পাওয়া যাবে। সুইস ফ্রাংকের মূল্য এর বেশি হতে পারবে না। ফলে, ব্যাপক মূল্যপতন ঘটে তখন সুইস ফ্রাংকের। তবে, ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে ব্যাংকটি এই আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। SNB এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য SNB এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মতই। এখানে কোন পার্থক্য নেই। সংবিধান অনুসারে, SNB এর প্রধান কাজ হচ্ছে সুইস অর্থনীতি ও জনসাধারনের উন্নয়নের জন্য একটি কার্যকর আর্থিক নীতি প্রণয়ন করা। এছাড়াও ব্যাংকটির অন্যান্য কার্যক্রম এর মধ্যে রয়েছে বাজারে অর্থ সরবরাহ ও বিতরণ, ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইলেকট্রনিকভাবে অর্থ স্থানান্তেরর ব্যবস্থা করা, কারেন্সি রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগ করা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা, বিভিন্ন ধরনের অর্থ নৈতিক গবেষণা ও সমীক্ষা চালানো ইত্যাদি। এছাড়াও সুইজারল্যান্ডের কারেন্সি সুইস ফ্রাংকের ব্যাংকনোট ইস্যু করাও SNB এর কাজ। যেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংকটিতে প্রাইভেট শেয়ারহোল্ডার আছে, তাই প্রতি বছর এপ্রিল মাসে ব্যাংকটির শেয়ারহোল্ডারদের সাধারন মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ব্যাংকটির নিজস্ব কাউন্সিলও রয়েছে, যা গঠিত ১১ জন সদস্য নিয়ে। এই ১১ জনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট সহ ছয় জনই নিয়োগপ্রাপ্ত সুইস ফেডারের কাউন্সিল তথা সরকার কত্রিক, যাতে ব্যাংকটির আর্থিক নীতিতে সুইস জনগণের স্বার্থরক্ষা হয়। বাকি ৫ জন নিয়োগ পান শেয়ারহোল্ডারদের মিটিং এর মাধ্যমে। এছাড়াও চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং আরও একজন সদস্য নিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট SNB এর নিজস্ব গভর্নিং বোর্ডও রয়েছে। এই বোর্ডই ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনার প্রধান দায়িত্ব পালন করে। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে SNB এর প্রেসিডেন্ট এবং এর গভর্নিং বডির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন থমাস জর্ডান, যিনি ইউনিভার্সিটি অফ বার্নের প্রাক্তন অধ্যাপক ছিলেন। উল্লেখ্য, BOE এর মত SNB এরও বিপুল গোল্ড রিজার্ভ রয়েছে, যার পরিমান ১১৪৫ টনের মত এবং যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩০ বিলিয়ন ফ্রাংক। এক নজরে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক হেডকোয়ার্টারঃ সুইজারল্যান্ডের বার্ন এবং জুরিখ প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৬ জানুয়ারী, ১৯০৬ চেয়ারম্যানঃ থমাস জর্ডান অন্যান্যঃ সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সুইস ফ্রাংকের ইস্যুকারী ওয়েবসাইটঃ www.snb.ch