বাংলাদেশে স্ক্রীল এবং নেটেলার দুটি আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসর বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।এতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং সোসাইটিতে চরম উৎকন্ঠা বিরাজ করছে ।তবে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে নির্ভরযোগ্য কোন বক্তব্য না পাওয়ার কারনে এবিষয়ে কোন মন্তব্য করা উচিত মনে করিনা।এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে অফিসিয়াল বক্তব্য ছাড়া কারো ব্যাক্তিগত মত কিংবা চেটিং রেকর্ড কে সোসাইল মিডিয়াতে প্রচারের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের মাঝে উৎকন্ঠা তৈরি কারা সমীচীন নয়।
আমরা সবাই জানি বর্তমানে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিং বিশ্বে ৩য় অবস্থানে রয়েছে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের গড় বাৎসরিক আয়ের পরিমান ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।বর্তমান তরুণ প্রজন্ম কে ফ্রিল্যান্সিং কিংবা আউটসোর্সিং মুখী করতে ইতোমধ্যেই সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে।বেসিসের ঘোষনা অনুযায়ী ১০ থেকে ১৫ লক্ষ তরুন কে এ পেশার সাথে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত ও এমর্মে গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ সকলেরই জানা।সুতরাং রাষ্ট্রের এতসব আয়োজন নিষ্ফল হয়ে যাবে যদি ফ্রিল্যান্সারদের জন্য উক্ত দুটি লেনদেন পদ্ধতি বন্ধ করে দেয়া হয়।আশা করি এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত কখনো রাষ্ট্র গ্রহন করবে না।
#স্ক্রীল/নেটেলার বন্ধ হওয়ার পরিণতি
-------------------------------------
ফ্রিল্যান্সিং বিশ্বে স্ক্রীল,নেটেলার,পে পাল হচ্ছে জনপ্রিয় পেমেন্ট প্রসেসরস।ফ্রিল্য ন্সিং বিশ্ব দাড়িয়ে আছে এসব পেমেন্ট প্রসেসরের উপরই নির্ভর করে।এসব ই-পেমেন্ট প্রসেসরের সাহায্যে বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফ্রিল্যান্সারগন তাদের কাজের পারিশ্রমিক গ্রহন করে থাকেন। বহু ছোট -বড় অনলাইন প্রতিষ্ঠান তাদের ক্লায়েন্টদের কে উক্ত গেটওয়ে সমূহ ব্যবহারের মাধ্যমেই পারিশ্রমিক দিয়ে থাকেন।
সুতরাং উক্ত সেবা সমূহ বন্ধ থাকলে কিংবা এ অচল অবস্থা বিরাজমান থাকলে আশা করা যায় বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিং বিশ্বে মুখ থুবড়ে পড়বে।কারন এসব গেটওয়ে ব্যবহারকারী গ্লোবাল মার্চেন্টগন বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের বিকল্প কর্মী খুঁজে নিবে।ফলে এদেশের লাখো ভাই-বোনের স্বপ্নময় ফ্রিল্যান্সিং কিংবা আউটসোর্সিং ক্যারিয়ার ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি এ সেক্টর কে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রের গৃহীত সকল প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে।
স্ক্রীল নেটেলার বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য কারন সমূহ
-------------------------------------
এক. বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা কে কেন্দ্র করে বর্তমানে অনলাইনে প্রচুর জুয়া (বেটিং) সাইটের প্রকাশ ঘটেছে।দীর্ঘদিন যাবত এসব সাইটগুলোতে জনপ্রিয় অনলাইন পেমেন্ট প্রসেসর নেটেলার এবং স্ক্রীলের সাহায্যে সমগ্র বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ জুয়া খেলাতে মেতে রয়েছে। এটা দুঃখজনক হলেও সত্য।ধারনা করা হচ্ছে এ কারনেই উক্ত দুটি পেমেন্ট পদ্ধতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে এ মূল্যায়নটির গ্রহণযোগ্যতা থাকেনা একারনেই যে ,চলমান আইপিএল আসর একেবারেই শেষ প্রান্তে। সুতরাং যেদিন থেকে বেটিং সাইটগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ঐদিনই এসব গেটওয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।কিন্তু এমনটি হয়নি।
দুই. সোসাইল মিডিয়া,ব্লগ ও ফোরাম সহ বিভিন্ন মহল থেকে এটা বহুবার আলোচিত হয়েছে যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পরিচালিত বেটিং সাইটগুলো বাংলাদেশে বেটিং সুবিধা প্রদানের পেছনে রয়েছে লেবাসধারী উচ্ছ পর্যায়ের কিছু মাফিয়া চক্র।যাদের রয়েছে কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য ।ধারনা করা হচ্ছে এসব মাফিয়া চক্রের অভ্যন্তরীণ বিভেদের বলি হয়েছে এদেশের ফ্রিল্যান্সারগন। হয়তোবা তাদের বিভেদ মিটে গেলে আবার খুলে যাবে পেমেন্ট প্রসেসর দুটি।সুতরাং দুই টাকার কামলাদের সাথে ঝগড়া করে কোন লাভ নেই।কারন তাদের পিছনের অদৃশ্য হাতটি বহু শক্তীশালী।সুতরাং সুফিয়ার ভাষায় কথা বলা ছাড়া আমলাদের কোন উপায় নেই।
তিন. ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে #বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদন্ধি হচ্ছে ভারত।তারা ফ্রিল্যান্সিং বিভিন্ন মার্কেট প্লেসে ইচ্ছাকৃত ভাবে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের বেড রিভিউ দেয়া,রেটিং কম দেয়া,প্রতারণা করা ইত্যাদি অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে।বহু ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদে জন্য বাধা সৃষ্টিকারী।এটা তাদের মুদ্রা দোষ। এটি হতে পারে বাংলাদেশের অন্য দশটি শিল্প ইন্ডাস্ট্রি ধ্বংসের মতই সম্ভাবনাময় ফ্রিল্যন্সিং সেক্টরকেও বেটিংয়ের অজুহাত দিয়ে কৌশলে ধ্বংস করে দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বিশেষ। সুতরাং স্ক্রীল এবং নেটেলার স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়েগেলে ফ্রিল্যান্সিং বিশ্বে বাংলাদেশের পজিশনটি নিঃসন্দেহে ভারতে হাতে চলে যাবে।
চার. এটি হতে পারে #আন্তার্জাতিক চক্রান্তেরই একটি অংশ বিশেষ।কারন এদেশের তরুন প্রজম্ম যেন প্রযুক্তি নির্ভর কেরিয়ারের পেছনে না দৌড়ে বরং বিদেশীদের বিনিয়োগকৃত বিভিন্ন শিল্প ইন্ড্রাস্ট্রির সল্প মজুরির লেবার হিসাবে আজীবন খেটে যায় সে পথ তৈরির একটি দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে কৌশলে #ফ্রিল্যান্সিং বিমুখীতা কিংবা এ পেশার প্রতি আস্থাহীনতা তৈরির অপচেষ্টা মাত্র। এ মন্তব্যের যৌক্তিকতা হচ্ছে বর্তমানে দেশে জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থার বিপরীতে দৈনন্দিন কারিগরি শিক্ষাকেই প্রধান্য দেয়া হচ্ছে ।সাধারন শিক্ষা ব্যবস্থায় উত্তীর্ণ জনশক্তির জন্য কর্ম সংস্থান তৈরি না করে সর্বত্র কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসার ঘটানো হচ্ছে। জেনারেল শিক্ষার বিপরীতে কারিগরি শিক্ষার জন্য বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে।
এ পলিসির কুফল হচ্ছে নির্দিষ্ট একটি সময়ের পর রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিশেষ একটি মহলের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে জনগন কে সম্পূর্ন রুপে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
প্রিয় পাঠক,আপনি হয়তো বিষয়টি এত গভীর ভাবে চিন্তা করাকে বুকামী মনে করতে পারেন। কিন্তু আপনার বোঝা উচিৎ যে বর্তমানে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের বাৎসরিক আয়ের পরিমান ৩০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।ধারনা করা হচ্ছে দশ পনের লাখ দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরি হলে অদূর ভবিষ্যতে এ সেক্টরটি গার্মেন্টস শিল্প কেও ছাড়িয়ে যাবে।সুতরাং বিষয়টি অতি সাধারন নয় যেমনটি আপনি ভাবছেন।