চলমান অর্থনৈতিক দুর্বলতা ও ক্রমবর্ধমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই চীন আগামী সপ্তাহে বেইজিংয়ে বিশেষ বৈঠকে বিশ্বের বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বৈঠকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের চীনের অর্থনীতিকে সচল ও সমৃদ্ধ রাখতে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে। বাণিজ্যিক বৈঠকটি এমন সময়ে ডাকা হয়েছে, যখন চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা। চীনে মার্কিন ডলারভিত্তিক বিনিয়োগকারী ফার্মগুলো যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে, বৈঠকে তার সমাধান বের করে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করবে। এ ধরনের বাণিজ্যিক বৈঠকের মাধ্যমে বেইজিং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়াতে চায়। দেশী ও বিদেশী বড় তহবিল ব্যবস্থাপকরা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। বিনিয়োগকারীরা কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন, সে বিষয়ে পরামর্শ দেবেন তারা। বৈঠকে বৈশ্বিক তহবিলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করবেন।
কভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের কঠোর ব্যবস্থার কারণে ২০২২ সালে চীনের অর্থনীতি মাত্র ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশটির কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি। যদিও চলতি বছরের শুরুতে বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার পর অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হচ্ছিল, তবে তা দ্রুত সময়েই মন্থর হয়েছে। নীতিগত অনিশ্চয়তার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে উত্তেজনা উদ্বেগটিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। চীনে বিনিয়োগের সীমিত সুযোগ এবং বেসরকারি উদ্যোগের ওপর নিয়ন্ত্রণের কারণে বেশকিছু বেসরকারি ইকুইটি ফার্ম ও বিনিয়োগকারীরা চীন সম্পর্কিত বাণিজ্যিক কৌশল পুনর্বিবেচনা করছেন।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/443661966.jpg[/IMG]
এমএসসিআই চীনের শেয়ার সূচক এ বছর ২ শতাংশ কমেছে, যখন ইউয়ান আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে। এর ফলে কিছু বিনিয়োগকারী চীন থেকে তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছেন। বৈঠকে বক্তব্য রাখবেন চায়না সিকিউরিটিজ রেগুলেটরি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ফাং জিংহাই। বৈঠকটি চীনের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সংগঠিত করবে। মন্দ অর্থনৈতিক ডাটা চীনকেন্দ্রিক বিনিয়োগ তহবিলকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে আর মার্কিন ডলারে তহবিল সংগ্রহ ভালোভাবে হয়নি।
চীনের নীতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং কঠোর বিধিবিধান বৈশ্বিক কোম্পানিগুলোকে দেশটিতে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করেছে। চীন এখন তার অর্থনীতিতে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। অ্যান্ট গ্রুপ এবং টেনসেন্টের মতো কোম্পানিগুলোকে জরিমানা দিয়ে প্রযুক্তি খাতের ওপর দমন-পীড়ন শেষ হয়েছে বলে ইঙ্গিত পাওয়ার পর এ বৈঠকের কথা উঠেছে। বুধবার প্রিমিয়ার লি কিয়াং আলিবাবার ক্লাউড ইউনিট এবং মেইটুয়ানের মতো কোম্পানির সঙ্গে দেখা করেছেন। চীনের অর্থনীতিকে সমর্থন করার জন্য তাদের আরো কিছু করার আহ্বান জানান। হংকংভিত্তিক ওরিয়েন্ট ক্যাপিটাল রিসার্চের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্ড্রু কলিয়ার বলেন, ‘*নিরাপত্তা ব্যবস্থা, প্রযুক্তি শিল্পের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং বিদেশীদের ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণসহ চীনের নানা নীতি অনেক বৈশ্বিক কোম্পানিকে চীন থেকে বাণিজ্য সরিয়ে নিতে বাধ্য করছে। এখন যেহেতু অর্থনীতি ধীরগতিতে চলছে তাই বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে আনতে নতুন চেষ্টা করা হচ্ছে, যদিও তা যথেষ্ট নয়।’