[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1180677461.jpg[/IMG]
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় আসেনি। সম্প্রতি ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে জানতে পেরেছেন। অনেকের ধারণা, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক সুদহার বৃদ্ধির কঠোর নীতির এটাই শেষ চক্র। কিন্তু শিগগিরই এমন কিছু হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর পরিবর্তে পরিস্থিতির আরো অবনমন হবে, বাড়তে পারে সুদহার। মূল্যস্ফীতি কমানোর প্রয়াসে ফেড তার সর্বশেষ ১২টি নীতিসভার মধ্যে ১১টিতেই সুদহার বাড়িয়েছে। ২৬ জুলাই এক-চতুর্থাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধির মাধ্যমে সুদহারকে ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে বাড়িয়েছে। ফেডের কঠোর নীতির অবলম্বন মূল্যস্ফীতিকে ধীর করতে অবদান রেখেছে। ভোক্তামূল্য সূচক গত বছরের তুলনায় জুনে ৩ শতাংশ বেড়েছে, যা গত গ্রীষ্মের তুলনায় প্রায় তিন গুণ কম। রয়টার্সের জরিপে অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশার চেয়ে কম পরিমাণে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ৮৭ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে বলে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা যায়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে গড় কর্ম সপ্তাহ সংকুচিত হয়েছে, যা শ্রমবাজারে শ্রমের চাহিদা কমার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মার্কিন চাকরি বাজারের পরিস্থিতি গতি হারাচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। জুনে নতুন চাকরি সৃষ্টির সংখ্যা ছিল দুই বছরের সর্বনিম্ন। মানুষের চাকরি ত্যাগের অর্থ তারা তুলনামূলক ভালো কোনো কিছুতে যুক্ত হচ্ছে। জুনের পরিসংখ্যানে এ হারেরও পতন ঘটেছে। ফেড চাকরি ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা চায়। কর্মীদের জন্য বেশি চাহিদা তৈরি হলে মজুরি বাড়ার প্রতিযোগিতা তৈরি হয়, যার খরচ পোহাতে প্রভাব পড়ে পণ্যের দামে। এখনো অনেক প্রতিষ্ঠানই কর্মী সংকটে।
আটলান্টা ফেডের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল বোস্টিক ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে বলেন, ‘*আমি আশা করেছিলাম অর্থনীতি মোটামুটি সুশৃঙ্খলভাবে ধীর হয়ে যাবে এবং কর্মসংস্থানের সংখ্যা ১ লাখ ৮৭ হাজার থেকে আরো বাড়বে। শ্রম ডিপার্টমেন্ট প্রতিবেদনে ফেড নীতিনির্ধারকদের জন্য কম উৎসাহব্যঞ্জক ছিল। তারা মূল্যস্ফীতিতে নিম্নমুখী চাপ দেয়ার জন্য শ্রমবাজারের নমনীয়তার ওপর নির্ভর করেছে। টানা চতুর্থ মাস ধরে গড় কর্মঘণ্টার আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে এবং বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।’
শিকাগো ফেডের প্রেসিডেন্ট অস্টান গুলসবি জানান, মার্কিন শ্রমবাজারে মজুরি বৃদ্ধি উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে হয়েছে। চলতি সপ্তাহে চাকরিবিষয়ক প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিক এমন এক ডাটা পয়েন্ট, যা দেখায় শ্রম সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভালোভাবে ভারসাম্যে ধীরে ধীরে ফিরে আসছে।
ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে তিনি আরো বলেন, ‘*বেকারত্বের হার না বাড়িয়ে আমরা মূল্যস্ফীতিকে ন্যায্য পরিমাণে নামিয়ে এনেছি।’ তিনি আশাবাদী ফেডারেল রিজার্ভ মন্দা সৃষ্টি না করে মূল্যবৃদ্ধির চাপ কমাতে পারবে।
যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের ধীরগতির স্থিতিশীল অবতরণ সবসময় পরিচালনা করেনি। তবে গুলসবিসহ অন্যরা যুক্তি দেখিয়েছেন কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী প্রতিক্রিয়া এতটা স্বাভাবিক ছিল না। তাছাড়া এটি ভোক্তাদের আচরণেও পরিবর্তনসহ সরবরাহ চেইনকে ভেঙেছে, ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তবে অবস্থা এখন কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ফেডের পলিসি রেটের সঙ্গে সংযুক্ত ট্রেডাররা চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরেকটি সুদহার বৃদ্ধির সম্ভাবনা ৩০ শতাংশেরও কম দেখছেন।
গ্লাসডোরের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড্যানিয়েল ঝাও বলেন, ‘*আমি মনে করি সামগ্রিকভাবে এটি এখনো এমন একটি শ্রমবাজারের দিকে ইঙ্গিত করছে, যা ধীরে ধীরে স্থিতিশীল অবতরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আরো বেশ কয়েকটি ডাটা প্রকাশিত হয়েছে, যা সেপ্টেম্বরে পরবর্তী নীতিসভার আগে ফেড নীতিনির্ধারকদের মতামতকে এক ধরনের আকার দেবে।’
ন্যাশনালের প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্যাথি বোস্টজানসিক জানান, অফিশিয়াল কর্মকর্তারা শ্রমচাহিদা ও মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে আরো সুদহার বাড়ানোর প্রয়োজন আছে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আগস্টের নতুন কর্মসংস্থান প্রতিবেদন ও পরবর্তী দুটি মূল্যস্ফীতির মাসিক রিডিং দুটিই দেখবেন।