আর্জেন্টিনায় গত রোববার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাথমিক ভোট গ্রহণে এগিয়ে আছেন কট্টর ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত অর্থনীতিবিদ হ্যাভিয়ের মাইলেই। অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে নির্বাচনে তার এগিয়ে থাকার খবর প্রকাশের পর সোমবার থেকেই ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রা পেসোর বিনিময় হারে পতন অব্যাহত রয়েছে। হ্যাভিয়ের মাইলেই ঘোষণা দিয়েছেন, পেসোকে বাতিল করে আর্জেন্টিনার মুদ্রা হিসেবে ডলারের প্রচলন ঘটাবেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বৈদেশিক লেনদেন ও ঋণের অর্থ পরিশোধে চীনা ইউয়ানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল আর্জেন্টিনা। সর্বশেষ কিছুদিন আগেও চীনের কাছ থেকে কারেন্সি সোয়াপের ভিত্তিতে সংগৃহীত ইউয়ানে আইএমএফের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছে দেশটি। হ্যাভিয়ের মাইলেই ঘোষণা দিয়েছেন, অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় চূড়ান্ত ভোট গ্রহণে জয়লাভের পর বৈদেশিক লেনদেন ও ঋণ পরিশোধের জন্য ইউয়ান বা অন্য কোনো মুদ্রা নয়, ডলারের ওপরই নির্ভর করবেন তিনি।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/658027918.jpg[/IMG]
এসব ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে হ্যাভিয়ের মাইলেইর নির্বাচনী দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার খবর আর্জেন্টিনার মুদ্রা ও পুঁজিবাজারে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকো সেন্ত্রাল দে লা রিপাবলিকা আরহেনতিনা (বিসিআরএ) মুদ্রাবাজারে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করেছে ২৮৭ পেসো। যদিও খোলাবাজারে ও ব্যাংকগুলো থেকে ডলার সংগ্রহ করতে হচ্ছে এর অন্তত দ্বিগুণ দামে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে ডলারের বিনিময় হার এখন ঊর্ধ্বমুখী। লাতিন আমেরিকার অন্যতম বড় অর্থনীতির দেশ আর্জেন্টিনার বৈদেশিক লেনদেনে ডলারে প্রত্যাবর্তনের খবর এ ঊর্ধ্বমুখিতাকে এখন আরো জোরালো করে তুলেছে। যদিও কিছুদিন আগেও মুদ্রাবাজারে ডলারের বিনিময় হার ছিল নিম্নমুখী। মার্কিন মুদ্রাটির বাজার আধিপত্য হারানোর আশঙ্কা করছিলেন অর্থনীতিবিদ ও বাজার পর্যবেক্ষকদের অনেকেই। এর বিপরীতে ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছিল চীনা মুদ্রা ইউয়ান ও রুশ মুদ্রা রুবল।

তবে তাদের এ আশঙ্কা এখন পর্যন্ত সেভাবে বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি। বরং আর্জেন্টিনাসহ বেশ কয়েকটি দেশে এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক লেনদেনে ডলারনির্ভরতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মুদ্রাবাজারে ডলারের সঙ্গে চীনা ইউয়ান ও রুশ রুবলের এক জোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কার্ড পেমেন্ট ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দেয়। আশঙ্কা দেখা দেয় মুদ্রাবাজারে ডলারের আধিপত্য বজায় রাখা নিয়ে। বিশেষ করে গত বছর ডলারের বিনিময় হারে কিছুটা নড়বড়ে অবস্থা দেখা দেয়। ২০২২ সালে বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারের সবচেয়ে শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখানো মুদ্রা ছিল রাশিয়ার রুবল।

তবে রুশ-চীনা প্রয়াসকে ছাপিয়ে এখন আবারো শক্তিশালী হয়ে উঠছে ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে সোমবার ডলারের বিনিময় হার বেড়ে দাঁড়ায় এক মাসে সর্বোচ্চে। চীনের অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কা, জাপানে ইয়েনের বিনিময় হারে পতন ঠেকাতে দেশটির সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনা মুদ্রাবাজারে বিনিয়োগকারীদের কাছে ডলারের আকর্ষণকে বাড়িয়ে তুলেছে। ওইদিন মুদ্রাবাজারে অন্যান্য বৃহৎ মুদ্রার বিপরীতে ডলার সূচক বেড়েছে দশমিক ৩ শতাংশের বেশি। গতকালের বাজারে ডলারের বিনিময় হারে কিছুটা নিম্নমুখিতা দেখা গেলেও তা বেশি সময় স্থায়ী হবে না বলে অভিমত বাজার পর্যবেক্ষকদের।

এর বিপরীতে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের বিনিময় হার এখন কমেই চলেছে। একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েও ডলারের বিপরীতে মুদ্রাটিকে এখন শক্তিশালী অবস্থানে নিতে পারছে না রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেন্ট্রাল ব্যাংক অব রাশান ফেডারেশন (সিবিআর)। সর্বশেষ মাস খানেক আগে চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দেয় সিবিআর। রুশ মুদ্রাবাজার ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ভাষ্যমতে, মূলত রুবলের বিনিময় হারকে শক্তিশালী করতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া ক্রমাগত সুদহারও বাড়ানো হয়েছে।

যদিও এসব প্রয়াস এখন পর্যন্ত তেমন একটা কাজে আসেনি। বর্তমানে প্রতি রুবলের বিনিময় হার মার্কিন মুদ্রায় ১ সেন্টেরও নিচে নেমে এসেছে। মুদ্রাটির বিনিময় হার অবস্থান করছে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সর্বনিম্নে। চলতি বছরের শুরু থেকে রুবল নিম্নমুখী অবস্থায় রয়েছে। সোমবারের বাজারে প্রতি ডলারের বিনিময় হার দাঁড়ায় ১০১ রুবলে।

বার্তা সংস্থা তাসে প্রকাশিত এক মতামতে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ম্যাক্সিম ওরেশকিন রুবলের বর্তমান অবস্থার জন্য দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘*ঢিলেঢালা আর্থিক নীতিকে’ দায়ী করেন। তার ভাষ্যমতে, রুবলের বিনিময় হারকে স্থিতিশীল করতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ‘প্রয়োজনীয় সব উপকরণই’ ছিল।

তিনি বলেন, ‘*রুবলের বিনিময় হারে দুর্বলতার কারণে রুশ অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন জটিল হয়ে ওঠার পাশাপাশি প্রকৃত খানা আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সুতরাং রুশ অর্থনীতির স্বার্থেই এখন রুবলের বিনিময় হারকে শক্তিশালী করা উচিত।’

ভালো অবস্থায় নেই চীনের মুদ্রা ইউয়ানও। ডলার শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনা মুদ্রাটির বিনিময় হারও এখন ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। আর এ নিম্নমুখিতাকে এখন আরো জোরালো করে তুলেছে চীনা অর্থনীতির বেশ কয়েকটি সূচকের নিম্নমুখিতার খবর। জুলাইয়ে দেশটির শিল্প উৎপাদন, খুচরা বাজারে বিক্রি ও ভোক্তা চাহিদা কমার পাশাপাশি বেকারত্ব বেড়েছে। দেখা দিয়েছে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কাও।

বর্তমানে ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের বিনিময় হার নেমে এসেছে কয়েক বছরে সর্বনিম্নের কাছাকাছি। বর্তমানে চীনের মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার লেনদেন হচ্ছে ৭ দশমিক ৩২ ইউয়ানের বেশিতে।