সুদহার কমানোর প্রত্যাশা নিয়ে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সর্বশেষ বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিলেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই বৈঠকে সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এমন সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও চলতি বছর সুদহার তিন দফা কমতে পারে বলে প্রত্যাশা করছেন ফেড কর্মকর্তারা। সম্প্রতি দুদিনের নীতিসংক্রান্ত বৈঠক শেষে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়। কয়েক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ও সুদহারের টানাপড়েন দেখা যাচ্ছে মার্কিন অর্থনীতিতে। বিষয়টি সামনে রেখে প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার পরিবর্তনের আগে কিছু বিষয় দেখতে চায়। এ অনুসারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে উচ্চ ঋণ ব্যয় কতটা কার্যকর হয়েছে তার পক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ খুঁজছে। বর্তমানে মার্কিন সুদহার ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা এখনো ২০২৪ সালে সুদহার কমানোর পক্ষে আশাবাদী। তবে ২০২২ সালে আগ্রাসীভাবে ঋণের ব্যয় বাড়ানোর পর ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, ‘সৌভাগ্যক্রমে মার্কিন অর্থনীতি সম্প্রসারণ হচ্ছে, শ্রমবাজার শক্তিশালী এবং মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে আসছে। এজন্য আমরা সতর্কভাবে এগোচ্ছি।’ ব্যাংক অব ইংল্যান্ড তাদের নিজস্ব সুদহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার একদিন আগে ফেডের এ সিদ্ধান্ত এল। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাজ্যে সুদহার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে থাকবে, যা গত ১৫ বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/665598670.jpg[/IMG]
উচ্চ সুদহার নির্ধারণের মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো। মূলত উচ্চ সুদহার ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক স্তরে ঋণ আরো ব্যয়বহুল করে। এটি অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ধীর এবং মূল্যবৃদ্ধির চাপ কমাতে সাহায্য করে। তবে সুদহার অনেক সময় ধরে বেশি রাখা হলে তা কঠোর অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি তৈরি করে।
সুদহার বেশি থাকার পরও বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিটি আশ্চর্যজনকভাবে বেশ শক্তিশালী বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের। ফেডের বৈঠকের পরে প্রকাশিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি বছর মার্কিন অর্থনীতি ২ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে, যা ডিসেম্বরে ১ দশমিক ৪ শতাংশের পূর্বাভাসের তুলনায় অনেক ইতিবাচক।
পূর্বাভাসে আরো দেখা গেছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে। এটি মূল্যস্ফীতিকে ফেডের ২ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি নিয়ে আসবে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩ দশমিক ২ ও জানুয়ারিতে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। ফেড কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন নন মন্তব্য করে জেরোম পাওয়েল বলেন, ‘আমরা এ দুই মাসের পরিসংখ্যান নিয়ে এখনই অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাচ্ছি না।’
সামগ্রিকভাবে বৈঠকের পর দেয়া পূর্বাভাসে ফেডের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে, অর্থনীতিকে দুর্বল না করেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। যুক্তরাজ্যভিত্তি ক্রাউন এজেন্ট ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগের প্রধান চার্লস ম্যানগিন বলেন, ’যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি বেশ প্রশংসনীয়। এমন শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি থাকা সত্ত্বেও যদি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় সুদহার বেশি রাখে, তবে তা অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণ হতে পারে।’
উদীয়মান বাজারগুলোয় বিদেশী বিনিয়োগ তীব্রভাবে কমেছে। কারণ বিনিয়োগকারীরা উচ্চ সুদহারের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রতিষ্ঠিত অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।
চার্লস ম্যানগিন আরো বলেন, ‘মার্কিন উচ্চ সুদহার উদীয়মান অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। মিসর ও নাইজেরিয়ার মতো দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আগ্রাসীভাবে সুদহার ২০ শতাংশের বেশি বাড়িয়েছে। বিনিয়োগকারীদের ফিরিয়ে আনতে হয়তো অন্যদের একই পথ অনুসরণ করতে হতে পারে।’