[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/702713082.jpg[/IMG]
জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (বিওজে) ১৭ বছর পর প্রথমবারের মতো নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে দেশটি নেতিবাচক সুদহার নীতি থেকে সরে এল। অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে লম্বা সময় ধরে জাপানে সুদহার অপরিবর্তনীয় রাখা হয়েছিল। জরুরি এক সভায় সম্প্রতি ব্যাংক অব জাপান ব্যাংক ঋণের হার মাইনাস দশমিক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে শূন্য থেকে দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত করেছে। পদক্ষেপটির মাধ্যমে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারির পর এ প্রথম নীতি সুদহার বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ব্যাংক অব জাপানের গভর্নর কাজুও উয়েদা জানান, নেতিবাচক সুদহার নীতিসহ অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে নগদ অর্থের প্রভাব স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ঋণ গ্রহণে ব্যয়ও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল। মূলত জাপান মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়েছে কিনা সেটি দেখার জন্য এ বেঞ্চমার্ক নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোয় মূল্যস্ফীতি নির্ধারিত পর্যায়ে থাকলেও নেতিবাচক সুদহার নীতি বহাল রাখার বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে ছিল ব্যাংক।
গভর্নর কাজুও উয়েদা জানান, বেতন-ভাতা ও পণ্যের দাম বৃদ্ধি ইতিবাচক ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক নীতিমালা বেশকিছু সময়ের জন্য সহজ অবস্থায় থাকবে বলেও জানান তিনি। তবে বেসরকারি ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থা তাদের সুদহার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানিয়েছেন উয়েদা। তিনি বলেন, ‘২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস পাওয়ায় আমরা নেতিবাচক সুদহার নীতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
সুদহার বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাংক অব জাপানকে আরো একটি বিষয় সহায়তা করেছে বলে জানিয়েছে বিশ্লেষকরা। জাপানের বিভিন্ন খাতের কোম্পানিগুলো ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চলতি বছর মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে।
‘জাপানের অর্থনীতি অনেকটাই পুনরুদ্ধার হয়েছে’ উল্লেখ করে বিওজে জানায়, বিভিন্ন কোম্পানির মুনাফা বাড়ছে, সেই সঙ্গে মজুরিও বাড়ানো হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে জাপানের সংবাদমাধ্যমগুলোয় সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে আভাস দেয়া হয়েছিল। বিশ্লেষকদের মতে, ঋণ প্রদানে বর্তমানে যে সহজ কাঠামো রয়েছে, সেখান থেকে হয়তো ব্যাংকগুলো সহজেই সরে আসবে না। এছাড়া মুদ্রা বিনিময় হারও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
ক্রেডিট রেটিং সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ হারুমি তাগুচি জাপানের মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের নিচে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া মজুরি বাড়লেও ভোক্তা পর্যায়ের চাহিদা যেমন হবে সে অনুযায়ী ব্যয় বাড়বে কমবে বলেও জানান।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষকদের তথ্যানুযায়ী, সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাংকের সিদ্ধান্ত আর্থিক কার্যক্রমের বাজারে প্রভাব ফেলবে। কিন্তু দেশের মূল অর্থনীতিতে এর প্রভাব খুবই সীমিত থাকবে। বিওজের গভর্নর বারবার জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেতিবাচক সুদহারসহ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে গৃহীত অন্যান্য সহজীকরণ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে। এজন্য মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশে থাকার লক্ষ্য পূরণ এবং বেতন বৃদ্ধির উদ্যোগ কার্যকর করতে হবে।
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তুলনায় জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি আলাদা। কেননা এ অঞ্চল দুটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার সর্বোচ্চ বাড়ানোর পর এখন কমাচ্ছে।