PDA

View Full Version : দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের প্রবৃদ্ধি ২৭ বছরের সর্বনিম্নে



kohit
2019-07-16, 05:51 PM
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি প্রায় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে মন্থর গতিতে সম্প্রসারণ হয়েছে। মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ এবং দুর্বল বৈশ্বিক চাহিদার কারণে স্থানীয় বাজার ও বিদেশে চাহিদায় পতনের ঘটনায় এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গতকাল সরকারি পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর রয়টার্স, এএফপি।

চলতি মাসে চীনের শক্তিশালী কারখানা উৎপাদন ও খুচরা বিক্রি উন্নতির আভাস দিচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেন, এ অর্জন টেকসই না-ও হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বেইজিং আগামী মাসগুলোয় আরো প্রণোদনা পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্থর অর্থনীতি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে বাণিজ্যযুদ্ধ চালানো কঠিন করে তুলবে। অন্যদিকে অর্থনীতি উদারে বেইজিংকে বাধ্য করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি দুটির এ বাণিজ্যযুদ্ধ ক্রমাগত দীর্ঘায়িত ও ব্যয়বহুল হচ্ছে, যা একটি বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে চীনের বাণিজ্য অংশীদার ও আর্থিক বাজারগুলো।

গতকাল ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের (এনবিএস) প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রথম প্রান্তিকের ৬ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে মন্থর হয়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ১৯৯২ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর সবচেয়ে মন্থর প্রবৃদ্ধি। তবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এএফপির মতামত জরিপে বিশ্লেষকদের দেয়া পূর্বাভাসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে ভোক্তা ব্যয় ও বিনিয়োগ শক্তিশালী করতে এবং ব্যবসা আস্থা পুনরুদ্ধারে বেইজিং আরো পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চীনের হওয়াবাউ ট্রাস্টের অর্থনীতিবিদ নিই ওয়েন বলেন, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে চীনের প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে ৬ থেকে ৬ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়াতে পারে; যা চলতি বছরের জন্য বেইজিংয়ের নির্ধারিত ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার নিম্ন পরিসীমার সমান হবে। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ দীর্ঘমেয়াদে প্রকৃত অর্থনীতি সমর্থন করতে চায়, ফলে এখনো ব্যাংকের রিজার্ভ রিকোয়্যারমেন্ট রেশিও (আরআরআর) কর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে স্থিতিশীল হওয়ার আগে অর্থনীতির মন্থর গতি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছেন তিনি।

ঋণের জন্য আরো তহবিল অবমুক্ত করতে এরই মধ্যে ২০১৮ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ছয় দফা আরআরআর কর্তন করেছে চীন। চলতি ও আগামী প্রান্তিকে আরো দুই দফা আরআরআর হ্রাস করা হতে পারে বলে রয়টার্স পরিচালিত মতামত জরিপে বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছেন।

এনবিএসের মুখপাত্র মাও সেংইয়ং বলেন, স্থানীয় ও বাহ্যিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হচ্ছে এবং বহিঃস্থ অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। চীনের অর্থনীতি নিম্নমুখী চাপের মধ্যে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

অর্থনীতি শক্তিশালী করতে চলতি বছর প্রণোদনা কর্মসূচি শুরু করেছে বেইজিং। প্রায় ২৯ হাজার ১০০ কোটি ডলারের (প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান) কর কর্তন ও স্থানীয় সরকারগুলোর বন্ড ইস্যুর জন্য প্রায় ৩১ হাজার ২৬৯ কোটি ডলার বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ মন্থরতা কাটানোর জন্য এসব কর্মসূচি যথেষ্ট সাফল্য আনতে পারছে না। এছাড়া মন্থর বৈদেশিক চাহিদা চীনের জন্য পরিস্থিতি আরো নাজুক করে তুলছে।

চলতি বছরের মে মাসে ওয়াশিংটন চীনা পণ্যের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করার পর বাণিজ্য চাপ আরো বেড়ে যায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটির। যদিও এরপর উভয় পক্ষই বাণিজ্য আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয় এবং পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপ স্থগিত রাখে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি।

শুক্রবার প্রকাশিত পরিসংখ্যানে গত মাসে চীনের রফতানিতে পতন দেখা গেছে। আমদানিতেও উল্লেখযোগ্য সংকোচন ঘটেছে। এক সরকারি জরিপে এক দশক আগের আর্থিক সংকটের পর কারখানাগুলোকে দ্রুত ছাঁটাই করতে দেখা গেছে।

নিউজ বনিকবার্তা