PDA

View Full Version : কোয়ান্টাম কম্পিউটার



DhakaFX
2019-09-29, 02:48 PM
8971
অনেকদিন ধরেই দেশে দেশে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির নকশা ও পরিকল্পনা তৈরি করেছেন পদার্থ বিজ্ঞানীরা, কিন্তু এখনো সফল হননি। ধারনা করা হচ্ছে যারা এটা প্রথমে চালু করতে পারবে তারাই পৃথিবীর নিয়ন্ত্রন পাবে। এটা এমন একটা উন্নত প্রযুক্তির কম্পিউটার, যা দিয়ে কোটি কোটি বিলিয়ন বিলিয়ন ডাটা চোখের পলকেই হিসাব নিকাশ করা যাবে।কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পেছনের ধারণাটা খুবই সহজ সরল। সাধারন কম্পিউটারে লেঙ্গুয়েজে ব্যবহার করা হয় বিট, যা শুধুমাত্র দুইটা অবস্থা ধারণ করতে পারে, হয় 1 (on) নয়ত 0 (off)। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটারে লেঙ্গুয়েজে ব্যবহার করা হয় বাইনারি সংখ্যা কিউবিট। কোয়ান্টাম বিটস বা কিউবিটস নানা পদ্ধতিতে গঠিত হতে পারে। তবে এগুলো সব সময়ই ০ ও ১-এর প্রতিনিধিত্ব করে এবং এই পুরো প্রক্রিয়া ইলেকট্রনিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে প্রথাগত কম্পিউটার বিটসের চেয়ে বহুগুণ বেশি কাজ করতে পারে কিউবিটস।
যাইহোক যেসব সমস্যা সাধারন কম্পিউটার দিয়ে সমাধান করা যায়না সেসব সমস্যা কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়েও সমাধান করা যায়না। কিন্তু কোয়ান্টাম এলগরিদম সাধারন এলগরিদমের চেয়ে দ্রুত কাজ করবে। সম্প্রতি ভুলক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা–র ওয়েবসাইটে কোয়ান্টাম কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট নানা খসড়া গবেষণা প্রকাশিত হয়। পরে সেটি আবার ওয়েবসাইট থেকে সরিয়েও নেওয়া হয়। ফলে ধারণা করা হচ্ছে সবার আগেই শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল তৈরী করে ফেলছে এই সুপার কোয়ান্টাম কম্পিউটার। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এর ঘোষণা দেয়নি গুগল কিন্তু আবার অস্বীকারও করেনি।

Montu Zaman
2019-10-01, 11:45 AM
সহজ কথায় কোয়ান্টাম কম্পিউটার হল এমন একটা কম্পিউটার যেটা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিভিন্ন ধর্মকে সরাসরি কাজে লাগিয়ে সব কাজ করে। আমরা যেসব কম্পিউটার ব*্যবহার করি সেগুলো হলো ক্লাসিকাল কম্পিউটার। এখানে ০,১ দিয়ে সবকিছু হিসাব করা হয়, সার্কিটে নির্দিষ্ট মাত্রার ভোল্টেজের উপস্থিতি হলো ১, অনুপস্থিতি হলো ০। তাহলে ০,১ হলো ক্লাসিকাল কম্পিউটারে তথ*্যের একক যাকে বলা হয় ‘বিট’। কোয়ান্টাম কম্পিউটারে তথ*্যের একক হলো ‘কিউবিট’। সেই কিউবিট একটা ইলেকট্রণ হতে পারে, একটা আলোর কণিকা বা ফোটন হতে পারে, ডায়মন্ড বা অন*্য কিছুর অণু হতে পারে। কোয়ান্টাম মানেই হলো কোন কিছু ক্ষুদ্রতম অংশ। কোয়ান্টাম লেভেলের এই কণিকাগুলো প্রত*্যেকেই কিছু বিচিত্র আচরণ করে। প্রতিটি কোয়ান্টাম কণার একটা স্পিন থাকে, ক্লাসিক্যাল মেকানিক্সের স্পিন বা ঘুর্ণন থেকে এটা সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু যেসব কণার স্পিন মান ১/২ তাদের ক্ষেত্রে, আমরা কণাটা ডান দিকে অথবা বামদিকে ঘুরছে এরকম কল্পনা করে নিতে পারি।
http://forex-bangla.com/customavatars/695735869.JPG
আমরা বোঝার জন*্য সাদামাটা ভাবে ধরে নিলাম ডানে ঘুরলে কিউবিটের মান ১ আর বামে ঘুরলে কিউবিটের মান ০। এখন যে কেও ভাবতেই পারে এবার আমরা কম্পিউটারে অনেকগুলো কিউবিট আলাদা করে রেখে দিবো আর তাদের স্পিন মেপে ০ বা ১ বুঝবো, হয়ে গেল কোয়ান্টাম কম্পিউটার। আবার যেহেতু কণিকাগুলো জায়গা খুব কম নেয় তাহলে একটা ছোট কোয়ান্টাম হার্ডডিস্কে মিলিয়ন মিলিয়ন কিউবিট রেখে দিবো! কিন্তু মাপামাপির ব*্যাপারটা এত সহজ না। একটা কিউবিট বামে বা ডানে না ঘুরে দুই দিকেই একসাথে ঘুরতে পারে! তারমানে কিউবিটে ০ বা ১ নেই, আছে দুটি মানের একটা মিশ্রণ! একে বলা হয় সুপারপজিশন। আমরা কল্পনাও করতে পারিনা কিভাবে একটা গোলক একইসাথে বামে বা ডানে ঘুরবে, কিন্তু বাস্তবে এটাই হচ্ছে।
আরো অদ্ভূত ব*্যাপার হলো যেই আমরা সুপারপজিশনে থাকা কণিকাটা কোন দিকে ঘুরছে দেখার চেষ্টা করবো সাথে সাথে সে যে কোনো একদিকে ঘোরা শুরু করবে, কোন দিকে ঘুরবে আগে থেকে জানার কোন উপায় নেই। ধরা যাক আমি কিউবিটটাকে দেখার চেষ্টা করলে সেটা বামে ঘোরা শুরু করলো, এরপরে আরো ১০জন দেখার চেষ্টা করলেও বামেই ঘুরবে সেটা। কিন্তু তারমানে এই নয় আমি দেখার আগেই সে বামে ঘুরছিলো, এমন হতে পারে যে আমি দেখার পর ডানে ঘুরবে। কোনদিকে ঘুরবে সেটার “প্রোবালিটি” বা “সম্ভাব*্যতা” আমরা বের করতে পারি, কিন্তু নিশ্চিত করে বলতে পারিনা। ব*্যাপারটা এমন না যে আমরা মুর্খ, কম জানি তাই বের করতে পারিনা, আসলে গাণিতিক সমীকরণ দিয়ে প্রমাণ করে দেয়া যায় যে আগে থেকে জানা সম্ভব না।
এনট*্যাঙ্গলমেন্ট এবং টেলিপোর্টেশন:
আরেকটা বিচিত্র ব*্যাপার হলো এনট*্যাঙ্গলমেন্ট। সহজ কথায় দুটি বিষয় একটা আরেকটার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হলে আমরা বলতে পারি বিষয় দুটি এনট*্যাঙ্গলড হয়ে আছে। পৃথিবী আর চাঁদের গতি একটা আরেকটার অভিকর্ষ বলের উপর নির্ভরশীল। তারপরেও আমরা চঁাদের কথা উল্লেখ না করেই পৃথিবীকে অবস্থান আর গতি দিয়ে চিহ্ণিত করে ফেলতে পারি, তাই বিষয়দুটি এনট*্যাঙ্গলড না।
এখন ধরা যাক দুটি কিউবিট আছে A এবং B নামের। তারা এনট*্যাঙ্গলড মানে হলো একটার প্রোপার্টি আরেকটার সাথে জড়িয়ে আছে। কিউবিট A কিভাবে ঘুরছে আমরা যেই দেখার চেষ্টা করবো সাথে সাথে কিউবিট B এর স্পিন নির্দিষ্ট হয়ে যাবে। আমরা A এর স্পিন মাপার আগে দুইজনই একইসাথে বামে আর ডানে ঘুরছিলো। যেই আমরা A কে দেখলাম সাথে সাথে A যেকোন একদিকে ঘোরা শুরু করে দিলো, আর তখনই B ও একসাথে দুইদিকে ঘোরার বদলে যেকোন একদিকে ঘোরা শুরু করবে। তারমানে একটা কিউবিটকে মাপার চেষ্টা করে আমরা আরেকটির দিক নির্দিষ্ট করে দিলাম। এখানে অবাক করার মত ব*্যাপার হলো A আর B যদি ১০০০০ আলোকবর্ষ দূরেও থাকে তাহলেও এটা ঘটবে।
http://forex-bangla.com/customavatars/518782339.jpg
এনট*্যাঙ্গলমেন্ট ব*্যাপারটা অবিশ্বাস*্য হলেও কল্পনা না, বিজ্ঞানীর দুটি ল*্যাবে বসে পরীক্ষা করে দেখেছেন সত*্যিই এটা ঘটে থাকে। এনট*্যা্ঙ্গলমেন্ট ব*্যবহার করে কিউবিট “টেলিপোর্ট” করে দেয়া সম্ভব, তারমানে কণিকাটা বাতাস বা ভ*্যাকুয়াম বা অন*্য কোনো মাধ*্যম দিয়ে না পাঠিয়েই জাদুর মত আরেকজায়গায় পাঠিয়ে দেয়া যায়।
তবে আইনস্টাইন বলেছিলেন আলোর গতিকে কখনো অতিক্রম করা যাবেনা, এদিকে আমি বলছি এনট*্যাঙ্গলমেন্ট দিয়ে ১০০০০ আলোকবর্ষ কিউবিট দূরে টেলিপোর্ট করে দেয়া সম্ভব, তাহলে নিশ্চয় এটা ভূল। আসলে এনট*্যা্ঙ্গলমেন্ট হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে ঘটলেও কোন তথ*্য চলে যায় না কারণ সবকিছু “সম্ভাব*্যতা” অনুযায়ী হচ্ছে। টেলিপোর্ট করলে তথ*্য পাঠানো যায়, কিন্তু সেক্ষেত্রে সেই তথ*্য পড়ার জন*্য কিছু সাধারণ বিট ও পাঠিয়ে দিতে হয় গন্তব*্যে, সেটা আলোর গতি অতিক্রম করে না। তাই তথ*্য এখানে আলোর গতি অতিক্রম করছেনা, সিনেমার মত টেলিপোর্ট করে নিমেষেই অন*্য গ*্যালাক্সিতে চলে যাবার আশা করে থাকলে হতাশ করতে হচ্ছে।
শুধুই গাণিতিক থিওরি?
জাদুর মত এই ব্যাপারগুলো যে শুধুই কাগজে-কলমে ঘটে না তার একটা প্রমাণ “ট্রানজিস্টর”, যার সাহায্যে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন সহ হাজার রকমের যন্ত্রপাতি কাজ করে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়েই গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানিরা অনুমান করেছেন এই ধর্মগুলো ব*্যবহার করে ট্রানজিস্টর বানানো সম্ভব, একসময় টেকনোলজীর উন্নতির পরে সেটা বানানো সম্ভবও হয়েছে। এনট*্যাঙ্গলম*্যান্ ট, টেলিপোর্টেশন এখন ল*্যাবে খুব নিখুতভাবে পরীক্ষা করা যায়। আমি যেখানে কাজ করছি সেখানকার ল*্যাবেও এগুলো করা হয়।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি?
কোয়ান্টাম লেভেলের কণিকায় তথ*্য সংরক্ষণ করা যায়, এদেরকে বলা হয় কোয়ান্টাম ইনফরমেশন। এনট*্যাঙ্গলমেন্ট, টেলিপোর্টেশন, সুপারপজিশন ইত*্যাদি ধর্ম ব*্যবহার করে তথ*্য আদান-প্রদান, হিসাব নিকাশ করা সম্ভব। কোয়ান্টাম কম্পিউটারে সব গণনা এভাবেই করা হয়। কোয়ান্টাম কম্পিউটারে এমন অনেক কাজ করা যায় যেগুলো সাধারণ কম্পিউটারে করা যায় না। যেমন পলিনমিয়াল টাইমে প্রাইম ফ*্যাক্টরাইজেশন বা লিনিয়ার সার্চের কমপ্লিক্সিটি স্কয়ার রুট এ নামিয়ে নিয়ে আসা, রাসায়নিক বিক্রিয়া সিমুলেট করা ইত*্যাদি।
কিন্তু এখনো কোয়ান্টাম কম্পিউটার ল*্যাবে তৈরি করা যায় নি। গুগলের কেনা ডি-ওয়েভকে কোয়ান্টাম কম্পিউটার দাবী করা হলেও বেশিভাগ বিজ্ঞানীরা মনে করেন কোয়ান্টাম কম্পিউটার হবার সবগুলো শর্ত ডি-ওয়েভ পূরণ করে না। অনেক লেখাতে দাবী করতে দেখেছি কোয়ান্টাম কম্পিউটার গতির ঝড় তুলবে, অনেকে বলে np-complete সমস*্যা সমাধান করতে পারবে। এসব দাবীর কতটা সত*্যি আর কতটা কল্পনা, কি কাজে লাগবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার, কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির বাধা কোথায়, এসব নিয়ে আলোচনা হবে পরে...

SaifulRahman
2019-10-17, 01:45 PM
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি সেটা জানার আগে কোয়ান্টাম তত্ত্ব জানতে হবে। ভৌত জগতের সবচেয়ে সঠিকতম বর্ণনা হচ্ছে কোয়ান্টাম তত্ত্ব আর এই বিশ্বে কিছু ঘটনা কোনো কারণ আর ব্যাখ্যা ছাড়াই ঘটে তাই যদি তুমি যদি ভাবো কোয়ান্টাম তত্ত্ব বুঝে ফেলেছো, তাহলে তুমি আসলে বোঝনি।তাই হুঠ করে কেউ বুঝেছে দাবি করার অর্থ হয়তো সে কোনো একটা ক্লাসিক্যাল চিত্র আঁকছে মনে মনে, আর যে কোনো ক্লাসিক্যাল চিত্রই আসলে ভুল (এটা তাত্তিক আর পরীক্ষামূলক উভয়ভাবেই প্রমাণিত)। ক্লাসিক্যাল চিত্র আর অক্লাসিক্যাল চিত্র বলতে কি বোঝাচ্ছি সেটা অল্পতে বলি। যেমন আমাদের সেট থিওরীর কথাই ভাবা যাক, আপনি যদি কোনো একটা সেট আর কোনো একটা ইলিমেন্ট নেন। তাহলে ইলিমেন্ট বা উপাদানটি হয় ঐ সেটের মধ্যে থাকবে, অথবা সেটের বাইরে থাকবে। এই দুইটি ঘটনার বাদে আর কিছুই হতে পারে না। আমাদের সকল যুক্তিবিদ্যা এ ধরনের “ক্লাসিক্যাল” রিজনিং এর উপর নির্ভর করে গঠিত। কিন্তু কোয়ান্টাম তত্ত্বএর দৃষ্টিতে একই সঙ্গে বিভিন্ন মাত্রায় উভয়ই ঘটা সম্ভব! কেমন উদ্ভট শোনাচ্ছে না? এ কারণেই ক্লাসিক্যাল রিজনিংএ কোয়ান্টাম জগৎকে বোঝা ও বর্ণনা করা অসম্ভব। তাই হুঠ করে “বুঝে ফেলেছি” দাবি করাটা বেশিরভাগ সময়ই “বুঝিনি” বের হয়। নিজের ধারণার জগতে এ ধরনের “প্যারাডাইম শিফ্ট” ঘটানো সহজ সাধ্য নয়। এছাড়াও, ওসব কথা যখন বলা হয়েছে, তখন কোয়ান্টাম তত্ত্ব একেবারেই নতুন শিশু। যার সম্পর্কে তেমন কিছুই এক্সপ্লোর করা হয়নি। ফলে এমনকি ঐ তত্ত্বের প্রবক্তাদের কাছেও অনেক কিছুই ছিলো অজানা। কিন্তু সেই অবস্থা দ্রুত বদলাচ্ছে।

BDFOREX TRADER
2020-09-29, 01:13 PM
[আমার বর্তমান (২০১৪ সাল) গবেষণার বিষয় “কোয়ান্টাম কম্পিউটার” নিয়ে ২য় লেখা এটা। কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি ধরণের সমস*্যা সমাধানে ব*্যবহার করা যাবে এবং এর সীমাবদ্ধতা কোথায় সেগুলো নিয়ে আজকে আলোচনা করব]

কোয়ান্টাম কম্পিউটার কী পারে যেটা সাধারণ কম্পিউটার পারে না? কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি সত*্যি ঝড়ের গতিতে সমস*্যা সমাধান করে দিতে পারে? রিচার্ড ফাইনম*্যান কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে একধাপ এগিয়ে ধারণা দেন কোয়ান্টাম কম্পিউটারের। এখনো কোয়ান্টাম কম্পিউটার ল*্যাবে তৈরি করা সম্ভব না হলেও আমরা এরই মধ*্যে তাত্ত্বিকভাবে অনেক কিছু জেনে গিয়েছি, হয়তো সেই তত্ত্বগুলো বাস্তবে পরিণত হতে খুব বেশি দেরী নেই। কোয়ান্টাম কম্পিউটার কেন শক্তিশালী, আবার কোথায় তাঁর দূর্বলতা এগুলো নিয়ে আজকের এই লেখা।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার আপেক্ষিকভাবে বেশ নতুন একটা বিষয়। এই লেখায় কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি সেটা নিয়ে বিস্তারিত লিখব না, জানতে চাইলে আমার আগের একটা লেখা এবং তানভীরুল ইসলামের কোয়ান্টাম তত্ত্ব লেখাটা পড়া যেতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারে সব হিসাব-নিকাশ করা হয় হয় “কিউবিট” দিয়ে, কিউবিট হতে পারে একটা ফোটন কণিকা বা একটা ইলেক্ট্রণ বা অন*্য কোনো কণিকা। এসব কণিকাকে ব*্যবহার করে তথ*্য সংরক্ষণ করা যায়, বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ করা যায়, “কোয়ান্টাম ইনফরমেশন” হলো কিউবিটে রাখা তথ*্য। বিজ্ঞানীরা যখন দেখলেন কোয়ান্টাম ইনফরমেশন ব*্যবহার করে এমন কাজ করা সম্ভব যেটা সাধারণ কম্পিউটার দিয়ে সম্ভব না, স্বাভাবিকভাবেই তারা এই ব*্যাপারে খুব আগ্রহী হয়ে পড়লেন। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের গবেষণাক্ষেত্র শুরু করার কৃতিত্ব দেয়া হয় রিচার্ড ফাইনম*্যানকে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে অনেক লেখাতেই দাবী করা হয় সাধারণ কম্পিউটারের থেকে হাজার বা লক্ষ*্যগুণ দ্রুত কাজ করবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার, অথবা সাধারণ কম্পিউটার যেসব সমস*্যার সমাধান করতে পারে না সেগুলোকে সমাধান করা সম্ভব হবে। এসব দাবীর কতটা সত*্য আর কতটা কল্পনা? এই লেখাতে আমরা এসব নিয়েই জানব। আগেভাগেই জানিয়ে রাখি লেখার একটা বড় অংশ সায়েন্টিফিক অ*্যামেরিকান ২০০৮ এ প্রকাশিত MIT’র স্কট অ*্যারনসনের প্রবন্ধের সারমর্ম[১]।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার সম্পর্কে বাস্তবতা হল এটা কিছু সমস*্যা যেমন প্রাইম ফ*্যাক্টরাইজেশন খুব দ্রুত করতে পারবে কিন্তু অন*্য অনেক সমস*্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সাধারণ কম্পিউটারের থেকে ভালো পারফরমেন্স দিতে পারবে না।
ব*্যাপারটা আরেকটু বিস্তারিত বোঝার চেষ্টা করি। একটা সমস*্যা সমাধানের জন*্য কম্পিউটারকে অনেকগুলো ধাপে কিছু হিসাব-নিকাশ করতে হয় যেটাকে আমরা বলি অ*্যালগোরিদম। অ*্যালগোরিদমে ধাপ সংখ*্যা যত কম থাকবে তত কম হিসাব করতে হবে এবং তত দ্রুত কম্পিউটার সমস*্যাটা সমাধান করতে পারবে। এখন ধাপ সংখ*্যা নির্ভর করে ইনপুটের আকারের উপর। যদি ইনপুট হয় n আকারের এবং ধাপ লাগে n^2 টা তাহলে সেই অ*্যালগোরিদমটাকে বলা হয় O(n2) অ*্যালগোরিদম (পড়তে হবে order of n square algorithm)। O(n2) অ*্যালগোরিদমে ইনপুটের আকার যদি হয় ১০০, তাহলে সর্বোচ্চ ১০০০০ ধাপে সমস*্যাটা সমাধান করা যাবে। ঠিক সেরকম O(n), O(logn) অ*্যালগোরিদম হতে পারে। এগুলোকে বলা হয় অ*্যালগোরিদমের টাইম কমপ্লেক্সিটি, যা দেখে আমরা বুঝি কোন অ*্যালগোরিদম দ্রুত কাজ করবে।

এখন কিছু প্রশ্ন, তোমার কাছে যদি দুটি অ*্যালগোরিদম থাকে, একটা O(n^2) আরেকটা O(n3) তাহলে কোনটা ব*্যবহার করলে দ্রুত সমস*্যা সমাধান করা যাবে? যদি n টা বইয়ে মধ*্য থেকে একটা বই খুজে বের করতে হয় তাহলে সর্বোচ্চ কয়টা বইয়ের টাইটেল তোমাকে পড়তে হবে? বই খুজে বের করার কমপ্লেক্সিটি তাহলে কত? এবার আরেকটু চিন্তা করার মত একটা প্রশ্ন, ডিকশনারিতে যদি ১০০ টা শব্দ থাকে তাহলে বুদ্ধিমানের মত খুজলে সর্বোচ্চ কয় ধাপে নির্দিষ্ট শব্দ খুজে পাওয়া যাবে? ১০০ এর জায়গায় n টা শব্দ থাকলে?

এখন n2, n3, nk এগুলো সবই হলো পলিনমিয়াল কমপ্লেক্সিটি। আরেক ধরণের কমপ্লেক্সিটি আছে যেগুলোকে বলা হয় এক্সপোনেনশিয়াল কমপ্লেক্সিটি, সেগুলো হলো kn আকারের, যেমন 2n, 3n। n এর মান যত বাড়ে অ*্যালগোরিদমের ধাপসংখ*্যা তত বাড়ে, পলিনমিয়াল অ*্যালগোরিদমের ধাপ সংখ*্যা যে হারে বাড়ে তার থেকে অনেক দ্রুত হারে বাড়ে এক্সপোনেনশিয়াল অ*্যালগোরিদমের ধাপ। একটা গল্প মনে আছে যেখানে বাচ্চা ছেলে তার মায়ের কাছে প্রথমদিন ১টাকা, পরেরদিন ২টাকা, পরেরদিন গুলোতে ৪ টাকা, ৮ টাকা, ১৬ টাকা এভাবে করে ১ বছর টাকা চেয়েছিল? তারমানে n তম দিনে 2n টাকা দিতে হবে। নিচের টেবিলে দেখ এভাবে বাড়াতে থাকলে ৫০ ধাপ পরেই সংখ*্যাটা কত বড় হয়ে যায়:
12388
ইনপুটের আকার মাত্র ৫০ হলেই 2n অ*্যালগোরিদমের জন*্য ধাপ সংখ*্যা ১৬ অঙ্কের একটা সংখ*্যা হয়ে গিয়েছে।

দু:খজনক ভাবে বাস্তবজীবনে এমন অনেক সমস*্যা আছে যেগুলোর জন*্য আমরা এক্সপোনেনশিয়াল অ*্যালগোরিদমের থেকে ভালো কিছু এখন পর্যন্ত জানি না। বিজ্ঞানীরা এগুলোকে np বা non-deterministic-polynomial ক*্যাটাগোরির সমস*্যা বলেন। কেও যদি এই ক*্যাটাগরির কোনো সমস*্যার পলিনমিয়াল সমাধান বের করে দিতে পারে ১০০% নিশ্চিত ভাবে পৃথিবীর চেহারা সেই মূহুর্তে বদলে যাবে, কম্পিউটার বিজ্ঞানের “হলি গ্রেইল” বলা যেতে পারে এই সমস*্যাটাকে। আরো ইন্টারেস্টিং ব*্যাপার হলো, মাত্র ১টা np সমস*্যা কেও সমাধান করতে পারলে সবগুলো np সম*স*্যার সমাধান হয়ে যাবে। বর্তমানে এ ধরণের সমস*্যার ক্ষেত্রে সবধরণের সম্ভাব*্য ফলাফল দেখে সেরাটা বেছে নেয়া হয় এবং বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে ধাপ কিছুটা কমানো হয়।

এখন একটা সুপারকম্পিউটার হয়ত তোমার-আমার কম্পিউটারের থেকে কয়েক হাজার গুণ দ্রুত কাজ করতে পারে কিন্তু সেগুলোকেও 2100
ধাপের একটা অ*্যালগোরিদম নিয়ে বসিয়ে দিলে গ*্যালাক্সি আয়ুর শেষ হয়ে যাবে কিন্তু সমস*্যার সমাধান হবে না। সুপারকম্পিউটার তাই সাধারণ কম্পিউটারের থেকে দ্রুত কাজ করতে পারলেও অ*্যালগোরিদমের কমপ্লেক্সিটি কমিয়ে আনতে পারে না। আমাদের দরকার এমন একটা কম্পিউটার যে অ*্যালগোরিদমের ধাপ সংখ*্যা কমিয়ে আনতে পারে। তাহলেই আমরা np ক*্যাটাগরির সমস*্যা দ্রুত সমাধান করে ফেলতে পারব।

এবার প্রশ্ন হলো কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি np ক*্যাটাগরির সমস*্যা সমাধান করতে পারে? দু:খজনক হলেও উত্তর হলো এখন পর্যন্ত পারে না। তাই কোয়ান্টাম কম্পিউটারও এসব সমস*্যার ক্ষেত্রে সাধারণ কম্পিউটারের থেকে ভালো করতে পারবে না।

তাহলে কোয়ান্টাম কম্পিউটার কোন সম*স*্যা সমাধানে ভালো কাজ করবে? সাধারণ কম্পিউটারের একটা বিট যেমন ০ বা ১ হতে পারে ঠিক সেরকম কিউবিটও ০ বা ১ হতে পারে। তবে কিউবিটের মজার ব*্যাপার হলো সেটা একই সাথে ০ এর ১ এর মিলিত একটা অবস্থায় থাকতে পারে যাকে সুপারপজিশন বলা হয়। আমাদের কাছে ১০০০টা কিউবিট থাকলে সেখানে একই সাথে 21000 টা সংখ*্যা ভরে রাখা সম্ভব যেটা দৃশ*্যমান মহাবিশ্বের অণূর সংখ*্যার থেকেও বেশি । এখন যদি আমাদের এমন একটা অ*্যালগোরিদম থাকে যেটা একই সময়ে কিউবিটগুলোর উপর কোনো অপারেশন করে সবগুলো সংখ*্যাকে একটা করে সম্ভাব*্য উত্তর বানিয়ে দিবে তাহলে আমরা খুব দ্রুত সঠিক উত্তরটা খুজে বের করতে পারতাম। কিন্তু সমস*্যা হল যখন আমরা অ*্যালগোরিদম শেষে কিউবিটগুলোর কোন স্টেট এ আছে সেটা দেখার চেষ্টা করব তখন আমরা মাত্র ১টা স্টেট পাবো, কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়ম অনুযায়ী বাকিগুলো আমরা কিছুতেই পড়তে পারব না। [১]

তবে ব*্যাতিচার বা ইন্টারফেয়ারেন্স(inte rference) বলে একটা ব*্যাপার আছে যেটা ব*্যবহার করে আমরা কিছু সুবিধা পেতে পারি, প্রথমে তরঙ্গের অ*্যামপ্লিচিউড বা বিস্তারের একটা ছবি দেখি:

এবার ইন্টারফেয়ারেন্স[৬] দেখি:
উপরের ডানের ছবিটাতে পজিটিভ আর নেগেটিভ অ*্যামপ্লিচিউড একসাথে মিলিত হয়ে একটা আরেকটাকে বাতিল করে দিয়েছে, বামের ছবিতে একই ধরণের অ*্যামপ্লিচিউড একসাথে হয়ে অ*্যামপ্লিচিউড আরো বাড়িয়ে তুলেছে। আমরা যদি এমন একটা অ*্যালগরিদম তৈরি করতে পারি যেটা ভুল উত্তরগুলোকে ডিস্ট্রাক্টিভ ইন্টারফেয়ারেন্সে মাধ*্যমে বাতিল করে দিবে এবং সঠিক উত্তরের অ*্যামপ্লিচিউড বাড়িয়ে দিবে তাহলে সবার শেষের স্টেটে সঠিক উত্তর পাবার প্রোবাবিলিটি অনেক বেড়ে যাবে। [১]

এই প্রোপার্টি ব*্যবহার করে প্রাইম ফ*্যাক্টরাইজেশন বা মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষনের একটা অ*্যালগোরিদম আছে যা শোর’স অ*্যালগোরিদম(shor’s algorithm)। এই অ*্যালগোরিদম O(n3) ধাপে n কে কিছু প্রাইম স*ংখ*্যার গুণফল হিসাবে লিখতে পারে, ক্লাসিকাল কম্পিউটারে পলিনমিয়াল সময়ে কাজটা করতে পারে না (তবে এটা np ক*্যাটাগরির কোনো সমস*্যা না)। ক্রিপ্টোগ্রাফির অনেক প্রটোকল হয়েছে সাধারণ কম্পিউটার বড় সংখ*্যাকে দ্রুত প্রাইম ফ*্যাক্টরাইজেশন করতে পারে না এটাকে মূলনীতি ধরে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার এসব প্রটোকলকে খুব দ্রুত ভেঙে ফেলতে পারবে। [৪]

শুরুর দিকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম যে n টা বই থেকে ১টা বই খুজে বের করতে সর্বোচ্চ কয়টা বইয়ের টাইটেল পড়তে হবে? উত্তর খুব সহজ, বইটা সবার শেষে থাকতে পারে তাই n বইয়েরই টাইটেল পড়া দরকার হতে পারে, কমপ্লেক্সিটি হল
O(n)। ডাটাগুলো কোনো নির্দিষ্ট নিয়মে (যেমন ছোট থেকে বড়) সাজানো না থাকলে তথ*্য খুজে বের করতে O(n)
সময় লাগবে বলেই এতদিন আমরা ধরে নিয়েছি। গ্রোভার সার্চ নামের একটা কোয়ান্টাম অ*্যালগোরিদম দিয়ে দেখানো হয়েছে O(squareroot(n))
বা n এর বর্গমূল সংখ*্যক ধাপেই ডাটা খুজে বের করা সম্ভব যেকোন ডাটাবেস থেকে! [৩]

তবে ক্রিপ্টোগ্রাফী ভাঙাটাই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের একমাত্র কাজ না, আরো দারুণ কিছু সম্ভাবনা আছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়ে আমরা রাসায়নিক বিক্রিয়া সিমুলেট করতে পারব, কোনো পরমাণু কার সাথে কিভাবে বিক্রিয়া করে সেগুলো কম্পিউটার দিয়ে বের করতে পারব। ন*্যানোটেকনোলজি যেহেতু কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর নির্ভরশীল, সেখানেও কোয়ান্টাম সিমুলেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। [২] সে সময় হয়তো নতুন ঔষধের কার্যকারিতা প্রাণীর উপর পরীক্ষা না করে আমরা কম্পিউটারে সিমুলেট করে ফেলতে পারব। তবে এমআইটির স্কট অ*্যারনসনের মতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে গবেষণা করতে করতে যদি দেখা যায় যে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি আসলে সম্ভব না তাহলেও আমরা বিশ্বজগৎ কিভাবে কাজ করে সেটা নিয়ে নতুন অনেক ধারণা পাব। [১]

কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানিয়ে ফেলতে সমস*্যা কোথায়? প্রধান সমস*্যা হলো কোয়ান্টাম ডিকোহেরেন্স [১][৫] । কিউবিটগুলো পরিবেশের সাথে ইন্টার*্যাকশনের কারণে সে যে স্টেট এ ছিল সেটা নষ্ট হয়ে যায়, পদার্থবিজ্ঞানীরা যাকে বলেন “ওয়েভ ফাংশন কলাপস” করে। আমরা জানি কিউবিট একই সাথে একাধিক স্টেট এ সুপারপজিশন অবস্থায় থাকতে পারে, ডিকোহেরেন্স এর ফলে একটা মাত্র স্টেট এ

FXBD
2020-10-01, 06:37 PM
কম্পিউটিংয়ের জগতে ঘটতে চলেছে অভাবনীয় এক বিপ্লব। আর সেই বিপ্লব এসে গেছে গুগলের হাত ধরে। এসে গেল সুপার কম্পিউটারের চেয়েও ক্ষমতাবান কোয়ান্টাম কম্পিউটার! নেচার সাময়িকী গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর ২০১৯) গুগলের ৭৮ জন বিজ্ঞানীর একটি দল প্রকাশ করেছে তাদের গবেষণার ফলাফল। এ গবেষণা দলে প্রধান হিসেবে ছিলেন জন মার্টিনিস। আরো ছিলেন চার্লস নিল, সের্গিও বইক্সো, পেডরাম রওশান, প্রযুক্তি দুনিয়ায় আসছে নতুন চমক। হাই-ফিডেলিটি কোয়ান্টাম লজিক গেটস, ৫৩ কিউবিটসের ‘সিকামোর’ প্রসেসর আর সেই প্রসেসরের দ্বিমাত্রিক গ্রিডে থাকা প্রতিটি কিউবিট অন্য আরো চারটি কিউবিটের সাথে যুক্ত। আজকের ২০০ পেটাফ্লপস কিংবা আইবিএম কোম্পানির প্রতি সেকেন্ডে ২০০০০০ ক্যালকুলেশন করার ক্ষমতাধর ‘সামিট’ বা ৯৩ পেটাফ্লপ্স চাইনিস ‘সানওয়ে তাইহুলাইট’ এর চেয়েও ঢের ঢের শক্তিশালী যন্ত্রগণক হতে চলেছে এই কম্পিউটারটি!এডুইন পেডনল্ট, জন গানেল, অ্যান্টনি ম্যাগগ্রেন্ট এবং অন্যান্যরা। তাদের তৈরি গুগলের এই নতুন কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি একটি অতি-জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে ফেলেছে একশ সেকেন্ডে, যেটি কিনা এখনকার সুপার কম্পিউটারগুলোর করতে ১০ হাজার বছরেরও বেশি সময় লেগে যেতো বলে তাদের দাবি!
12436

DhakaFX
2020-10-05, 07:12 PM
12461
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে আলোচনা শুনলে আপনার মনে হবে বৈজ্ঞানিক কোনো কল্পকাহিনি বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা এমন এক কম্পিউটার প্রযুক্তির চূড়ায় পৌঁছে গেছি, যা যুক্তি অমান্য করে, কল্পনাকেও হার মানায়। এখনকার কম্পিউটারের ব্যবহৃত ট্রানজিস্টরগুলো এতটাই ক্ষুদ্র যে তা হাতের নাগালে থাকা প্রযুক্তি দিয়েই বানানো যায়। তাই কম্পিউটার উদ্ভাবকেরা পারমাণবিক ও অতিপারমাণবিক স্তরে সম্ভাব্য সমাধান খোঁজা শুরু করেছেন, যা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং হিসেবে পরিচিত। প্রযুক্তি দুনিয়ার বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু করেছে এবং বাণিজ্যিকভাবে তা বাজারে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার এমন কম্পিউটিং শক্তি দিতে সক্ষম হবে, যা প্রচলিত ক্ল্যাসিক্যাল কম্পিউটারের পক্ষে সম্ভব নয়। এটা যেকোনো সমস্যা দ্রুত সমাধান করে ফেলবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের কাজ সম্পর্কে বুঝতে হলে আগে কোয়ান্টাম কম্পিউটার কী তা জানতে হবে। ২০ শতকের শুরুর দিকে যখন পরমাণু নিয়ে প্রথম গবেষণা চালানো হয়, তখন থেকে কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান লজিক বা যুক্তি অস্বীকার করেছে। কোয়ান্টামের জগতে পরমাণু প্রচলিত পদার্থবিদ্যার সূত্র মানে না। কোয়ান্টাম কণা একই সময়ে সামনে বা পেছনে যেতে পারে, একই সময়ে দুই জায়গায় অবস্থান করতে পারে। অর্থাৎ একটি কোয়ান্টাম কণা বা পারমাণবিক মাত্রার একটি কণা একই সঙ্গে তার সব রকম অবস্থায় থাকতে পারে। এই অদ্ভুতুড়ে আচরণের কারণে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে সুবিধা নেওয়ার কথা ভাবেন গবেষকেরা।
হিসাবের সময় কমবে
এখনকার কম্পিউটার চলে বিটের হিসাবে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার চলবে কিউবিটের হিসাবে। বর্তমান কম্পিউটার মূলত বিটের মধ্যেই তথ্য সংরক্ষণ করে। এই বিট হচ্ছে বাইনারি ‘০’ অথবা ‘১’-প্রতিনিধিত্বকারী, যা বৈদ্যুতিক বা আলোক সংকেতের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। এই বিটস পদ্ধতিতে আট বিট মিলে তৈরি হয় বাইট, যা সাধারণত একটি সংকেতকে সংরক্ষণে সক্ষম। তাহলে কিউবিট কী জিনিস?
এটিও ০-১ বাইনারিকেই ব্যবহার করে তথ্য সংরক্ষণের জন্য। কিন্তু আলাদাভাবে নয়। একই সঙ্গে। অনেকটা কোয়ান্টাম তত্ত্বে বর্ণিত পদার্থের কণা ও তরঙ্গ ধর্মের মতো। কারণ, কোয়ান্টাম দুনিয়ায় একই কণা একই সঙ্গে একাধিক জায়গায় থাকতে পারে এবং তরঙ্গ ও কণাধর্মী অচরণের মধ্যে তার বিচরণও সাবলীল। এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল শক্তি, যা ০-১–এর সহাবস্থানের মাধ্যমে একসঙ্গে বহু তথ্য সংরক্ষণে একে সক্ষম করে তোলে। এটি এর শক্তিকে দ্বিগুণ নয়, বহুগুণ করবে। কারণ, এই শক্তি জ্যামিতিক হারে বাড়ে। যেমন দুই কিউবিটে যদি চারটি সংখ্যা সংরক্ষণ করা যায়, তবে তিন কিউবিটে যাবে আটটি, আর চার কিউবিট পারবে ১৬টি সংখ্যা সংরক্ষণ করতে। এটি একই সঙ্গে একাধিক হিসাব করার সক্ষমতাও দেয়। এতে হিসাবের সময় কমে। প্রতিদিন আমরা প্রচুর তথ্য উৎপাদন করি। এসব তথ্য প্রসেস করে তা থেকে অর্থপূর্ণ ইনসাইট বের করতে অনেক কম্পিউটিং শক্তির প্রয়োজন। এতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার সেই সময় বাঁচাবে।
অবাস্তবকে বাস্তব করবে
ধরুন, কোনো একটি সমস্যা শেষ করতে বিলিয়ন বছর লাগত। অর্থাৎ প্রায় অসম্ভব গাণিতিক সমস্যার সমাধান এক তুড়িতেই করে ফেলতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। একসময় যা অসম্ভব বলে ধরে নেওয়া হতো, তা অসম্ভব থাকবে না। প্রচলিত কম্পিউটারকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
ডেটা নিরাপত্তা
অনেকেই তথ্যের নিরাপত্তায় এনক্রিপশনকে যথেষ্ট মনে করেন। কিন্তু ভার্চ্যুয়াল যে এনক্রিপশন ভাঙা সম্ভব নয় তা তৈরি করা যাবে। এতে ডেটা নিরাপত্তার পরিস্থিতি বদলে যাবে। এখনকার বেশির ভাগ এনক্রিপশন পদ্ধতি ভেঙে দিতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। এর বদলে হ্যাক ঠেকানোর মতো বিকল্প ব্যবস্থা পাওয়া যাবে।
সব কাজের কাজি
কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে বলা যেতে পারে সব কাজের কাজি। প্রচলিত কম্পিউটারে হয়তো মেইল, স্প্রেডশিট বা ডেস্কটপ পাবলিশিংয়ের মতো কাজগুলো ভালোভাবে করা যায়। তবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির লক্ষ্যটাই ভিন্ন। এটা মূলত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন টুল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এটা প্রচলিত কম্পিউটারের জায়গা নেবে না। যেমন কোনো বিমানবন্দরের ফ্লাইট শিডিউল সবচেয়ে নিখুঁতভাবে নির্ণয় করার কাজ করা যাবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে।
গতির রাজা
গুগল সম্প্রতি কোয়ান্টাম কম্পিউটারে সুপ্রিমেসি অর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গুগলের এআই কোয়ান্টাম টিম কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে। গুগলের সিকামোর প্রসেসর সাড়ে তিন মিনিট সময়ে এমন এক হিসাব সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে, যা প্রচলিত সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটারের করতে ১০ হাজার বছর সময় লাগত। আর্মহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্যাথরিন ম্যাকগিওচের মতে, প্রচলিত কম্পিউটারের চেয়ে হাজার হাজার গুণ গতিসম্পন্ন কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
বিগ ডেটার সমাধান
প্রতিদিন আমরা ২ দশমিক ৫ হেক্সাবাইট তথ্য উৎপন্ন করছি, যা ৫০ লাখ ল্যাপটপে থাকা কনটেন্টের সমান। বিশাল এ তথ্য ভান্ডার বিশ্লেষণ করবে কোন কম্পিউটার? কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পক্ষেই এ পরিমাণ তথ্য প্রসেস করে বিগ ডেটা যুগের চাহিদা মেটানো সম্ভব। ভবিষ্যতে মেশিন বা যন্ত্রের যুগ আসছে। প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্ যন্ত্র থেকেও তৈরি হবে ডেটা। এসব তথ্যের নিখুঁত বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়েই।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী
কোয়ান্টাম কম্পিউটারে অধিক বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে না। এটি ১০০ থেকে এক হাজার গুণ কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে, কারণ কোয়ান্টাম টানেলিং নামের এক পদ্ধতি এতে ব্যবহৃত হয়, যাতে বিদ্যুতের খরচ কমে। এ ছাড়া এ কম্পিউটার নাজুক। যেকোনো ধরনের কম্পন পরমাণুর ওপর প্রভাব ফেলে অসংগতি তৈরি করতে পারে।
উন্নত সফটওয়্যার ও মেশিন লার্নিং
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জন্য ইতিমধ্যে কয়েক ধরনের অ্যালগরিদম তৈরি হয়ে গেছে। এর মধ্যে আনস্ট্রাকচারড ডেটাবেইস খুঁজতে গ্রোভারস অ্যালগরিদম ও বৃহৎ সংখ্যাকে উৎপাদন কাজে লাগাতে সর অ্যালগরিদ উল্লেখযোগ্য। টেকসই কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি হয়ে গেলে মেশিন লার্নিং সমস্যা সমাধানের জন্য সময় কমাতে সাহায্য করবে।

Montu Zaman
2022-03-10, 02:12 PM
আজকের কম্পিউটারে ব্যবহৃত ট্রানজিস্টরগুলো এতই ছোট যে সেগুলো হাতের কাছে থাকা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা যায়। তাই কম্পিউটার উদ্ভাবকরা পারমাণবিক ও অতি-পরমাণু স্তরে সম্ভাব্য সমাধানগুলো সন্ধান করতে শুরু করেছেন, যা কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নামে পরিচিত। যুক্তি জগতের বড় কোম্পানিগুলো টেকসই কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু করেছে এবং সেগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আনার চেষ্টা করছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার বহুগুণ কম্পিউটিং শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম হবে যা প্রচলিত ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের জন্য সম্ভব নয়। এটি দ্রুত যে কোনো সমস্যার সমাধান করবে। চলুন কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
http://forex-bangla.com/customavatars/1273903516.jpg
যুক্তির বাইরে নতুন কম্পিউটিং
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের কাজ বোঝার জন্য প্রথমে কোয়ান্টাম কম্পিউটার কী তা জানতে হবে। পরমাণু বা কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার যুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছে যেহেতু বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পরমাণুর ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়েছিল। কোয়ান্টামের জগতে পরমাণু বলতে পদার্থবিজ্ঞানের প্রচলিত সূত্রকে বোঝায় না। কোয়ান্টাম কণা একই সময়ে দুই জায়গায় অবস্থান করে। একই সময়ে সামনের দিকে বা পেছনে যেতে পারে। অর্থাৎ একটি কোয়ান্টাম কণা বা পারমাণবিক কণা একই সময়ে তার পরিধির সকল স্থানে বিদ্যমান থাকে। গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে এই অদ্ভুত উদ্দেশ্যে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করা যেতে পারে। এটাকে পরমাণুর বা কোয়ান্টাম সুপার পজিশন বলে।
গণনার সময় কমে যাবে
আজকের কম্পিউটারগুলো বিট হিসাবে চলে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার কিউবিট হিসেবে চলবে। বর্তমান কম্পিউটারগুলো মূলত বিটগুলোতে ডেটা সংরক্ষণ করে। এই বিট একটি বাইনারিতে '০' বা '১'-প্রতিনিধি। যা একটি বৈদ্যুতিক বা আলোক সংকেত হিসেবে কাজ করে। এই বিট পদ্ধতিটি আটটি বিটকে বাইটে একত্রিত করে, যা সাধারণত একটি সংকেত সংরক্ষণ করতে সক্ষম। তাহলে কিউবিট কী?
কিউবিট ০-১ বাইনারিকেই ব্যবহার করে তথ্য সংরক্ষণের জন্য। তবে আলাদাভাবে নয়। একই সময়ে। অনেকটা কোয়ান্টাম তত্ত্বে বর্ণিত পদার্থের কণা ও তরঙ্গ বৈশিষ্ট্যের মতো। কারণ কোয়ান্টাম জগতে একই কণা একই সময়ে একাধিক স্থানে থাকতে পারে এবং তরঙ্গ এবং কণার গতির মধ্যে এর চলাচলও মসৃণ। এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল শক্তি, যা এটিকে 0-1 সহাবস্থানের মাধ্যমে একসাথে একাধিক ডেটা সংরক্ষণ করতে সক্ষম করে।

এটি এর শক্তিকে দ্বিগুণ নয়, বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে। কারণ, এই শক্তি জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি জটিল রাস্তায় আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হলো আপনার সামনে ২০ থেকে ৩০ টা রাস্তা আছে যাওয়ার কিন্তু আপনার নির্দিষ্ট একটি স্থানে পৌঁছানোর রাস্তা এই ২০ থেকে ৩০ টা রাস্তার মধ্য একটি। এখন আপনি কি করবেন? সাধারণ যুক্তিতে আপনাকে প্রত্যেকটি রাস্তায় যেয়ে যাচাই করতে হবে।

এখন এই ব্যাপারটিকে আমরা ক্ল্যাসিকাল কম্পিউটারের সঙ্গে তুলনা করি। অন্যদিকে বিষয়টি যদি এমন হয় আপনার অনেকগুলো কার্বনকপি তৈরি হবে এবং সবগুলো কার্বনকপি এই ২০ থেকে ৩০ টা রাস্তায় একই সময় যাচাইয়ের জন্য বেরিয়ে পড়বে। তাহলে সঠিক রাস্তা যাচাই করে বের করতে কত সময় লাগবে? অবশ্যই খুবই কম সময় লাগবে। সেই সঙ্গে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ঠিক এইভাবেই কাজ করবে তার সুপার পজিশন বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে।
কিউবিট ০-১ বাইনারিকেই ব্যবহার করে তথ্য সংরক্ষণের জন্য। তবে আলাদাভাবে নয়। একই সময়ে। অনেকটা কোয়ান্টাম তত্ত্বে বর্ণিত পদার্থের কণা ও তরঙ্গ বৈশিষ্ট্যের মতো। কারণ কোয়ান্টাম জগতে একই কণা একই সময়ে একাধিক স্থানে থাকতে পারে এবং তরঙ্গ এবং কণার গতির মধ্যে এর চলাচলও মসৃণ। এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল শক্তি, যা এটিকে 0-1 সহাবস্থানের মাধ্যমে একসাথে একাধিক ডেটা সংরক্ষণ করতে সক্ষম করে।

এটি এর শক্তিকে দ্বিগুণ নয়, বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে। কারণ, এই শক্তি জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি জটিল রাস্তায় আপনাকে ছেড়ে দেওয়া হলো আপনার সামনে ২০ থেকে ৩০ টা রাস্তা আছে যাওয়ার কিন্তু আপনার নির্দিষ্ট একটি স্থানে পৌঁছানোর রাস্তা এই ২০ থেকে ৩০ টা রাস্তার মধ্য একটি। এখন আপনি কি করবেন? সাধারণ যুক্তিতে আপনাকে প্রত্যেকটি রাস্তায় যেয়ে যাচাই করতে হবে।

এখন এই ব্যাপারটিকে আমরা ক্ল্যাসিকাল কম্পিউটারের সঙ্গে তুলনা করি। অন্যদিকে বিষয়টি যদি এমন হয় আপনার অনেকগুলো কার্বনকপি তৈরি হবে এবং সবগুলো কার্বনকপি এই ২০ থেকে ৩০ টা রাস্তায় একই সময় যাচাইয়ের জন্য বেরিয়ে পড়বে। তাহলে সঠিক রাস্তা যাচাই করে বের করতে কত সময় লাগবে? অবশ্যই খুবই কম সময় লাগবে। সেই সঙ্গে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ঠিক এইভাবেই কাজ করবে তার সুপার পজিশন বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে।
বড় ডেটা সমাধান
আমাদের প্রতিদিনের জীবনে আমরা ২ দশমিক ৫ হেক্সাবাইট তথ্য উৎপন্ন করছি। যা ৫০ লাখ ল্যাপটপে থাকা কনটেন্টের সমান। ভ্যবিষ্যৎ এ বিশাল এ তথ্য ভান্ডার বিশ্লেষণ করবে কোন কম্পিউটার? কোয়ান্টাম কম্পিউটারের পক্ষেই এ পরিমাণ তথ্য প্রসেস করে বিগ ডেটা যুগের চাহিদা মেটানো সম্ভব! ভবিষ্যতে মেশিন বা যন্ত্রের যুগ আসছে। প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্ যন্ত্র থেকেও তৈরি হবে ডেটা। এসব তথ্যের নিখুঁত বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার দিয়েই।

উন্নত সফ্টওয়্যার এবং মেশিন লার্নিং
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন ধরনের অ্যালগরিদম তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আনস্ট্রাকচারড ডেটাবেইস খুঁজতে গ্রোভারস অ্যালগরিদম ও বৃহৎ সংখ্যাকে উৎপাদন কাজে লাগাতে সর অ্যালগরিদ উল্লেখযোগ্য। টেকসই কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি হয়ে গেলে মেশিন লার্নিং সমস্যা সমাধানের জন্য সময় কমাতে সাহায্য করবে।

তবে আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের স্থান কোয়ান্টাম কম্পিউটার হয়তো বা দখল করতে পারবে না। বিজ্ঞানীদের মতে এই ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ক্ল্যাসিকাল কম্পিউটারের মত পারফরমেন্স দেখাতে পারবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের থেকে বেশি সময় নিয়ে নিবে। সুতরাং আপতত ক্ল্যাসিকাল কম্পিউটার কে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। ত্রিমাত্রিক (থ্রি -ডাইমেনশিয়াল) মহাবিশ্ব কি শুধু মাত্র বিভ্রম বা ইলিউশন? হলোগ্রাফিক মহাবিশ্বের কনসেপ্ট কিন্তু সেটাই বলে।

Rakib Hashan
2022-06-26, 04:01 PM
কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে অনেক প্রকল্প রয়েছে আইবিএম ও গুগলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টের। অ্যামাজন তাতে দেরিতে যুক্ত হলেও বেশ অগ্রসর হয়েছে। সম্প্রতি অ্যামাজন জানায়, তারা কোয়ান্টাম নেটওয়ার্কিং নিয়ে একটি গবেষণা কেন্দ্র চালু করেছে। কয়েক বছরের মধ্যেই এ খাতে বেশ অগ্রগতির আশা করছে জেফ বেজোস নেতৃত্বাধীন কোম্পানিটি। গত বছরে এডব্লিউএস সেন্টার ফর কোয়ান্টাম কম্পিউটিং চালু করেছিল অ্যামাজন। কোয়ান্টাম নেটওয়ার্কিং সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় গবেষণায় জোর দিয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টটি। এজন্য এডব্লিউএস সেন্টার ফর কোয়ান্টাম নেটওয়ার্কিং (সিকিউএন) চালুর ঘোষণা দিয়েছে তারা। কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সুবিধা অনেকেই ঘরে তুলতে পারলেও কোয়ান্টাম নেটওয়ার্কিংয়ের সম্ভাবনা অনুধাবনে আরো সময় লাগবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বেশির ভাগ কোয়ান্টাম প্রযুক্তির সুবিধা ঘরে তুলতে গবেষকদের আরো অনেক বছর লাগবে বলে মনে করেন তারা। তবে এ খাতে বিনিয়োগের জন্য অ্যামাজনের কাছে পর্যাপ্ত মূলধন রয়েছে।
http://forex-bangla.com/customavatars/710124050.jpg