PDA

View Full Version : একটি নেতৃত্বহীন মহাদেশের কথা - পল ক্রুগম্÷



HELPINGHAND
2015-06-09, 03:23 PM
আমি ইউরোপ নিয়ে সত্যিকার অর্থেই চিন্তিত । আরো সত্য হলো আমি গোটা পৃথিবীটা নিয়েই চিন্তিত । চলমান অর্থনৈতিক মন্দা থেকে গোটা পৃথিবীতে কেউই নিরাপদ স্বর্গে বাস কর*ছে না । তা সত্ত্বেও আমি মার্কিন যুক্তরাস্ট্র অপেক্ষা ইউরোপ নিয়ে বেশি চিন্তিত ।

এটা প্রথমেই পরিস্কার করে নেয়া ভালো যে আমি এখানে গড়পড়তা আমেরিকানদের মতো ইউরোপের উচ্চ করের হার বা সরকার নিয়ন্ত্রিত সামাজিক সেবাখাত নিয়ে অভিযোগ কর*ছি না । বড় ওয়েলফেয়ার স্টেটগুলো ইউরোপের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দায়ি নয় । প্রকৃতপক্ষে আমি ওখানে সরকার নিয়ন্ত্রিত ওয়েলফেয়ার সিস্টেম যে এই সংকটা কাটাতে ভূমিকা রাখছে সেটাই বলার চেষ্টা করবো ।

ইউরোপের চলমান সংকট রাজস্ব ও মুদ্রানীতির বিভিন্ন দিকেই অত্যন্ত মারাত্মক আকার ধারন করেছে । গুরুত্ব বিচারে এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুলনা করা যেতে পারে । তবে ইউরোপিয় ইউনিয়ন এই সংকট মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে খুব বেশী রকমের পিছিয়ে আছে ।

প্রথমত রাজস্ব নীতির কথা বলা যায় । এখানে অনেক অর্থনীতিবিদের মতো আমি নিজেও মনে করি পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওবামা সরকারের গৃহীত স্টিমুলাস প্যাকেজ যথেষ্ট নয় । তবে এই স্টিমুলাস প্যাকেজ প্রশ্নটিতে ইউরোপের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব দ্রুতই সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছে ।

দ্বিতীয়ত, মুদ্রা নীতিতেও সেই একই পিছিয়ে পড়ার গল্প রয়েছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ইউরোপিয় ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্পষ্টতই পিছিয়ে আছে । ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমাতে খুব দ্রুতই এগিয়ে এসেছে । অন্যদিকে ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটা করতে অনেক গড়িমসি করেছে । এমনকি গত বছরের জুলাইতে তারা এই হার বাড়িয়েছে পর্যন্ত !

তবে এই চলমান সংকটে ইউরোপিয় ইউনিয়ন তাদের যে বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে থাকবে সেটা হলো তাদের সদস্য দেশগুলোতে সরকার নিয়ন্ত্রিত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা । এই সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যক্তিপর্যায়ে অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব সীমিত রাখতে সাহায্য করবে । এই সামাজিক নিরাপত্তা খুব ছোট ব্যাপার নয় । সবার জন্য নিশ্চিত স্বাস্থ্য বীমা ব্যবস্থা, চাকরি হারানো সবার জন্য বেকার ভাতা নিশ্চিতভাবেই অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব ব্যক্তিগত পর্যায়ে কমিয়ে আনবে । এবং এই সরকারি সুবিধাগুলো ভোক্তাদের বাজারে অর্থব্যয়ের সুযোগ তৈরী করে দেয় যেটা শেষ বিচারে অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনে ।

তবে এইসব স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থেকে এই মুহুর্তে যেটা দরকার সেটা হলো সরকারের এগিয়ে আসা । এবং ইউরোপ এদিক দিয়ে পিছিয়ে আছে ।

প্রশ্ন উঠতে পারে ইউরোপ এভাবে পিছিয়ে পড়লো কেন । অদক্ষ নেতৃত্ব এটার একটা কারন হিসেবে আমরা ধরতে পারি । ইউরোপের ব্যাংকিং সেক্টরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা চলমান অবস্থার গুরুত্ব বুঝতে পুরোটাই ব্যর্থতা দেখিয়ে চলেছেন । নিজেদের সাফল্যের কীর্তি প্রচারেই তাদের আগ্রহ বেশী । জার্মান অর্থমন্ত্রীর জুড়ি মেলা, যিনি এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না ও যার কথা শোনা সময় নষ্ট, এই আমেরিকাতে রিপাবলিকানদের মধ্যেই সম্ভব ।

তবে এর থেকেও বড় সমস্যা রয়ে গেছে । ইউরোপের অর্থনৈতিক একত্রিকরণ তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের একত্রিকরণ থেকে বহুদুর পিছিয়ে আছে । প্রায় গোটা ইউরোপের অর্থব্যবস্থা একই মুদ্রায় চলে এবং তাদের মধ্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক সহজেই আমেরিকার এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশের সম্পর্কের সাথে তুলনা করা যায় । তা সত্ত্বেও ইউরোপের নেতারা এই অর্থনৈতিক সুসম্পর্ককে রাজনৈতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন । এই ঐক্যের অভাব বড় বেশী টের পাওয়া যাচ্ছে এই মন্দাসময়ে ।

এই সমস্যাটাই সংকট মোকাবেলায় রাজস্ব নীতির অচলাবস্থার জন্য দায়ি করা যেতে পারে । কোন সরকারই ইউরোপের সম্মিলিত স্টিমুলাস প্যাকেজে বেশী টাকা ঢালতে রাজি নন । কারন ঐ টাকা তাদের নিজের দেশের নাগরিকদের কোন কাজে নাও লাগতে পারে ।

অন্যদিকে মুদ্রানীতিতে এতোটা জটিলতা না থাকলেও সেখানেও যথেষ্ট কর্মতৎপরতার অভাব দেখা যায় । ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের মতো সহজেই স্বাধীনভাবে একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে পারেনা । সেখানে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সারাক্ষনই ১৬টি দেশের প্রতিনিধিদের বাদানুবাদ লেগে থাকে যার ফলশ্রুতিতে অনিবার্যভাবেই কালক্ষেপন দেখা দেয় ।

ইউরোপ এসব কারনে এরকম সংকটকালে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল সংগঠন হিসেবে দেখা দিচ্ছে ।

Ekram
2015-08-21, 12:32 PM
আমি ইউরোপ নিয়ে সত্যিকার অর্থেই চিন্তিত । আরো সত্য হলো আমি গোটা পৃথিবীটা নিয়েই চিন্তিত । চলমান অর্থনৈতিক মন্দা থেকে গোটা পৃথিবীতে কেউই নিরাপদ স্বর্গে বাস কর*ছে না । তা সত্ত্বেও আমি মার্কিন যুক্তরাস্ট্র অপেক্ষা ইউরোপ নিয়ে বেশি চিন্তিত ।

এটা প্রথমেই পরিস্কার করে নেয়া ভালো যে আমি এখানে গড়পড়তা আমেরিকানদের মতো ইউরোপের উচ্চ করের হার বা সরকার নিয়ন্ত্রিত সামাজিক সেবাখাত নিয়ে অভিযোগ কর*ছি না । বড় ওয়েলফেয়ার স্টেটগুলো ইউরোপের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দায়ি নয় । প্রকৃতপক্ষে আমি ওখানে সরকার নিয়ন্ত্রিত ওয়েলফেয়ার সিস্টেম যে এই সংকটা কাটাতে ভূমিকা রাখছে সেটাই বলার চেষ্টা করবো ।

ইউরোপের চলমান সংকট রাজস্ব ও মুদ্রানীতির বিভিন্ন দিকেই অত্যন্ত মারাত্মক আকার ধারন করেছে । গুরুত্ব বিচারে এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুলনা করা যেতে পারে । তবে ইউরোপিয় ইউনিয়ন এই সংকট মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে খুব বেশী রকমের পিছিয়ে আছে ।

প্রথমত রাজস্ব নীতির কথা বলা যায় । এখানে অনেক অর্থনীতিবিদের মতো আমি নিজেও মনে করি পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওবামা সরকারের গৃহীত স্টিমুলাস প্যাকেজ যথেষ্ট নয় । তবে এই স্টিমুলাস প্যাকেজ প্রশ্নটিতে ইউরোপের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব দ্রুতই সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছে ।

দ্বিতীয়ত, মুদ্রা নীতিতেও সেই একই পিছিয়ে পড়ার গল্প রয়েছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ইউরোপিয় ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্পষ্টতই পিছিয়ে আছে । ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমাতে খুব দ্রুতই এগিয়ে এসেছে । অন্যদিকে ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটা করতে অনেক গড়িমসি করেছে । এমনকি গত বছরের জুলাইতে তারা এই হার বাড়িয়েছে পর্যন্ত !

তবে এই চলমান সংকটে ইউরোপিয় ইউনিয়ন তাদের যে বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে থাকবে সেটা হলো তাদের সদস্য দেশগুলোতে সরকার নিয়ন্ত্রিত সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা । এই সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যক্তিপর্যায়ে অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব সীমিত রাখতে সাহায্য করবে । এই সামাজিক নিরাপত্তা খুব ছোট ব্যাপার নয় । সবার জন্য নিশ্চিত স্বাস্থ্য বীমা ব্যবস্থা, চাকরি হারানো সবার জন্য বেকার ভাতা নিশ্চিতভাবেই অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব ব্যক্তিগত পর্যায়ে কমিয়ে আনবে । এবং এই সরকারি সুবিধাগুলো ভোক্তাদের বাজারে অর্থব্যয়ের সুযোগ তৈরী করে দেয় যেটা শেষ বিচারে অর্থনীতিতে সুফল বয়ে আনে ।

তবে এইসব স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থেকে এই মুহুর্তে যেটা দরকার সেটা হলো সরকারের এগিয়ে আসা । এবং ইউরোপ এদিক দিয়ে পিছিয়ে আছে ।

প্রশ্ন উঠতে পারে ইউরোপ এভাবে পিছিয়ে পড়লো কেন । অদক্ষ নেতৃত্ব এটার একটা কারন হিসেবে আমরা ধরতে পারি । ইউরোপের ব্যাংকিং সেক্টরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা চলমান অবস্থার গুরুত্ব বুঝতে পুরোটাই ব্যর্থতা দেখিয়ে চলেছেন । নিজেদের সাফল্যের কীর্তি প্রচারেই তাদের আগ্রহ বেশী । জার্মান অর্থমন্ত্রীর জুড়ি মেলা, যিনি এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না ও যার কথা শোনা সময় নষ্ট, এই আমেরিকাতে রিপাবলিকানদের মধ্যেই সম্ভব ।

তবে এর থেকেও বড় সমস্যা রয়ে গেছে । ইউরোপের অর্থনৈতিক একত্রিকরণ তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের একত্রিকরণ থেকে বহুদুর পিছিয়ে আছে । প্রায় গোটা ইউরোপের অর্থব্যবস্থা একই মুদ্রায় চলে এবং তাদের মধ্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক সহজেই আমেরিকার এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশের সম্পর্কের সাথে তুলনা করা যায় । তা সত্ত্বেও ইউরোপের নেতারা এই অর্থনৈতিক সুসম্পর্ককে রাজনৈতিক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন । এই ঐক্যের অভাব বড় বেশী টের পাওয়া যাচ্ছে এই মন্দাসময়ে ।

এই সমস্যাটাই সংকট মোকাবেলায় রাজস্ব নীতির অচলাবস্থার জন্য দায়ি করা যেতে পারে । কোন সরকারই ইউরোপের সম্মিলিত স্টিমুলাস প্যাকেজে বেশী টাকা ঢালতে রাজি নন । কারন ঐ টাকা তাদের নিজের দেশের নাগরিকদের কোন কাজে নাও লাগতে পারে ।

অন্যদিকে মুদ্রানীতিতে এতোটা জটিলতা না থাকলেও সেখানেও যথেষ্ট কর্মতৎপরতার অভাব দেখা যায় । ইউরোপিয়ান কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের মতো সহজেই স্বাধীনভাবে একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে পারেনা । সেখানে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সারাক্ষনই ১৬টি দেশের প্রতিনিধিদের বাদানুবাদ লেগে থাকে যার ফলশ্রুতিতে অনিবার্যভাবেই কালক্ষেপন দেখা দেয় ।

ইউরোপ এসব কারনে এরকম সংকটকালে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল সংগঠন হিসেবে দেখা দিচ্ছে ।

সব দিক দিয়ে চিন্তা করলে আমেরিকা অনেক এগিয়ে আছে। ইউরোপ এ একতার বড়ই অভাব লক্ষ করা যায়। সেই তুলনয়ায় আমেরিকা তাদের একক সিদ্ধান্তে যা করছে তাতে বাধা দেওয়ার মত কেহ নাই। ইউরোপ একেকজন নেতার একেক মতামতের কারনে বর্তমানে অনেক ধরনের বিপর্যয় ও দেখা দিচ্ছে সেখানে।

MotinFX
2015-08-22, 11:08 PM
উপরের কথার সাথে আমি একমত উইরোপ সব চেয়ে বিপদের মধ্যে আছে গ্রীস কে নিয়ে। অামেরিকা সক্ত অবস্হানে আছে কননা যেকোন কাজে একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে তাকে বাধা দেওয়ার মত কেউ নেই।

yasir arafat
2016-04-06, 12:28 PM
আপনার পোষ্টটা থেকে আমি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারলাম।আসলে একটা জিনিস লক্ষ্যনীয় যে আপনি যখন একটা দেশের অর্থনীতি নিয়ে পর্যালোচনা করবেন,তখন একটি দেশের সাথে অন্য আরেকটি দেশের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করবেন।যা আমরা প্রায় সময় ফরেক্স মার্কেটে লক্ষ্য করে থাকি।

Md Masud
2017-05-25, 09:56 PM
ইউরোপের চলমান সংকট রাজস্ব ও মুদ্রানীতির বিভিন্ন দিকেই অত্যন্ত মারাত্মক আকার ধারন করেছে । গুরুত্ব বিচারে এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তুলনা করা যেতে পারে । তবে ইউরোপিয় ইউনিয়ন এই সংকট মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে খুব বেশী রকমের পিছিয়ে আছে ।