SaifulRahman
2020-06-07, 05:39 PM
11171
২০০৮ সালের দিককার কথা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় কাবু বিশ্ব, আর মন্দাটা শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই। বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদরা ব্যস্ত কিভাবে বের হওয়া যায় মন্দা পরিস্থিতি থেকে। শুরু হলো সুদের হার কমানো, যাতে করে মানুষ ব্যাংক থেকে আরো বেশি ঋণ নেয়, ব্যাবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটা শুরু করে ও আস্তে আস্তে যেন মন্দা কেটে যায়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। মানুষের হাতে যেখানে টাকাই নেই, প্রতিনিয়ত চাকরি হারাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ,সেখানে সাহস করে ব্যবসা করতে নামবে কে? মানুষের হাতে কেনার টাকা থাকতে হবে তো!
অবস্থা যখন আরো খারাপের দিকে যেতে শুরু করল, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় ব্যাংক FED সিদ্ধান্ত নিল, তুরুপের শেষ তাসটি খেলার। মন্দা উত্তরনে FED চালু করল তার প্রণোদনামূলক প্রকল্প Quantitative easing . এর আওতায় FED বাজারে ব্যাপকভাবে অর্থ ছাড়া শুরু করল, বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রয়ের মাধ্যমে ।
তাতে কি লাভ হল? লাভ হল এই যে, অর্থ সংকটে ধুঁকতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে একদিকে যেমন টাকা এল, বাজারে অর্থ সরবরাহ বাড়ল , তার মানে মানুষের হাতেও বেশি টাকা আসল, ফলে মানুষের ক্রয ক্ষমতাও বাড়ল , মানুষ আগের থেকে বেশি জিনিসপত্র কেনা শুরু করল, ফলশ্রুতিতে ব্যবসা বাণিজ্যও আস্তে আস্তে মন্দা কাটিয়ে প্রসার ঘটা শুরু করল। আর এভাবেই ধীরে ধীরে মন্দা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে লাগল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি।
এতোক্ষন তো দেখলেন মুদ্রার এক পিঠ মাত্র, সব সাফল্যের গল্প। তবে এর ফলে কি সমস্যাটা তৈরি হল, চলুন সেটাও জেনে নেই।
বা প্রণোদনা প্রকল্পের একটা বড় সমস্যা হল, এর ফলে কেন্দ্রিয় ব্যাংককে বাজারে প্রচুর অর্থ ছাড়তে হয়। কোন একটি দেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংক চাইলেই ইচ্ছামত অর্থ ছাপিয়ে বাজারে ছাড়তে পারবে না, এর জন্য অনেক নীতিমালা আছে। কারন চাহিদার থেকে যদি যোগান বেশি হয়ে যায়, তাহলে তা মুদ্রার মূল্যমানকে কমিয়ে দেয়, জিনিসপত্রের দাম যায় বেড়ে। আর এভাবে দীর্ঘমেয়াদে প্রণোদনা প্রকল্প চালিয়ে যাওয়াও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
তাহলে কি করা? এক্ষেত্রে একটা সমাধান আছে। আর তা হল, অর্থনীতি যতদিন পর্যন্ত না মন্দা থেকে বের হয়ে একটা শক্ত ভিতের উপর দাড়াতে পারে, ততদিন পর্যন্ত প্রণোদনা প্রকল্প চালিয়ে যাওয়া । যখন অর্থনীতি মোটামুটি একটি শক্ত ভিতের উপর দাড়িয়ে যাবে, তখন কেন্দ্রিয় ব্যাংক আবার আস্তে আস্তে মন্দার সময় ছাড়কৃত অর্থ বাজার থেকে সরিয়ে নিবে। তার মানে, কেন্দ্রিয় ব্যাংক এখন কিছুটা সংকোচনমুলক নীতি গ্রহন করবে। আর এটাকেই বলা হচ্ছে ইংরেজিতে Tapering যা যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যেই শুরু করেছে এবং ফেড এর টেপারিং নামেই তা সর্বাধিক পরিচিত।
মন্দার সময়ে কেন্দ্রিয় ব্যাংক প্রতি মাসে ৮৫ বিলিয়ন ডলারের বন্ড কিনত বা সহজভাবে বলা যায় যে, প্রতি মাসে বাজারে ৮৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করত। এর ফলে আস্তে আস্তে যখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ঘুরে দাড়াতে শুরু করে, তখন ফেড সিদ্ধান্ত নেয়, আস্তে আস্তে বন্ড ক্রয় কমিয়ে আনার। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম বন্ড ক্রয়ের পরিমান ৮৫ বিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ৭৫ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রতি মাসে ১০ বিলিয়ন ডলার করে কমিয়ে ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে বন্ড ক্রয় ও প্রণোদনামূলক প্রকল্প একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হবে। সর্বশেষ গত মাসে ফেড বাজার থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের বন্ড ক্রয় করেছিল। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এ মাসে প্রণোদনামূলক প্রকল্প একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। এমনকি সুদের হারও বাড়তে পারে, যদিও ফেড বলেছিল যে সুদের হার দীর্ঘ সময় ধরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকবে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ক্রমান্বয়েই ভালো হচ্ছে এবং নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন যে, ২০১৭ সালের মধ্যেই বেকারত্তের হার মাত্র ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
ফেডের এই টেপারিং এর সাথে কি ফরেক্স মার্কেটের কোন যোগসূত্র আছে? কেন টেপারিং এই মুহূর্তে ফরেক্স মার্কেটের সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় এবং কেন ডলারের উঠানামা এর উপর অনেকখানি নির্ভর করবে আগামি দিনগুলোতে , এই নিয়েই আলোচনা থাকবে পরের পোস্টটিতে। আপনাদের ভালো বা খারাপ লাগলে অথবা কোন জিজ্ঞাসা থাকলে জানাতে ভুলবেন না।
বন্ড প্রকল্প কমিয়ে আনা হচ্ছে, তাহলে এর ফলশ্রুতিতে মার্কেটে ডলার সাপ্লাই অনেকাংশে কমে যাবে । তাহলে সাপ্লাই এবং ডিমান্ডের প্রচলিত থিউরি অনুযায়ী ডলারের দাম বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা থাকে এবং ট্রেডারদের সাইকোলজিকাল ভিউটাতেও এটি অনেক প্রভাব ফেলে। আশারাখি টেপারিং বিষয়ে সকলের বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।
২০০৮ সালের দিককার কথা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় কাবু বিশ্ব, আর মন্দাটা শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকেই। বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদরা ব্যস্ত কিভাবে বের হওয়া যায় মন্দা পরিস্থিতি থেকে। শুরু হলো সুদের হার কমানো, যাতে করে মানুষ ব্যাংক থেকে আরো বেশি ঋণ নেয়, ব্যাবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটা শুরু করে ও আস্তে আস্তে যেন মন্দা কেটে যায়। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। মানুষের হাতে যেখানে টাকাই নেই, প্রতিনিয়ত চাকরি হারাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ,সেখানে সাহস করে ব্যবসা করতে নামবে কে? মানুষের হাতে কেনার টাকা থাকতে হবে তো!
অবস্থা যখন আরো খারাপের দিকে যেতে শুরু করল, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় ব্যাংক FED সিদ্ধান্ত নিল, তুরুপের শেষ তাসটি খেলার। মন্দা উত্তরনে FED চালু করল তার প্রণোদনামূলক প্রকল্প Quantitative easing . এর আওতায় FED বাজারে ব্যাপকভাবে অর্থ ছাড়া শুরু করল, বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি ক্রয়ের মাধ্যমে ।
তাতে কি লাভ হল? লাভ হল এই যে, অর্থ সংকটে ধুঁকতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে একদিকে যেমন টাকা এল, বাজারে অর্থ সরবরাহ বাড়ল , তার মানে মানুষের হাতেও বেশি টাকা আসল, ফলে মানুষের ক্রয ক্ষমতাও বাড়ল , মানুষ আগের থেকে বেশি জিনিসপত্র কেনা শুরু করল, ফলশ্রুতিতে ব্যবসা বাণিজ্যও আস্তে আস্তে মন্দা কাটিয়ে প্রসার ঘটা শুরু করল। আর এভাবেই ধীরে ধীরে মন্দা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে লাগল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি।
এতোক্ষন তো দেখলেন মুদ্রার এক পিঠ মাত্র, সব সাফল্যের গল্প। তবে এর ফলে কি সমস্যাটা তৈরি হল, চলুন সেটাও জেনে নেই।
বা প্রণোদনা প্রকল্পের একটা বড় সমস্যা হল, এর ফলে কেন্দ্রিয় ব্যাংককে বাজারে প্রচুর অর্থ ছাড়তে হয়। কোন একটি দেশের কেন্দ্রিয় ব্যাংক চাইলেই ইচ্ছামত অর্থ ছাপিয়ে বাজারে ছাড়তে পারবে না, এর জন্য অনেক নীতিমালা আছে। কারন চাহিদার থেকে যদি যোগান বেশি হয়ে যায়, তাহলে তা মুদ্রার মূল্যমানকে কমিয়ে দেয়, জিনিসপত্রের দাম যায় বেড়ে। আর এভাবে দীর্ঘমেয়াদে প্রণোদনা প্রকল্প চালিয়ে যাওয়াও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
তাহলে কি করা? এক্ষেত্রে একটা সমাধান আছে। আর তা হল, অর্থনীতি যতদিন পর্যন্ত না মন্দা থেকে বের হয়ে একটা শক্ত ভিতের উপর দাড়াতে পারে, ততদিন পর্যন্ত প্রণোদনা প্রকল্প চালিয়ে যাওয়া । যখন অর্থনীতি মোটামুটি একটি শক্ত ভিতের উপর দাড়িয়ে যাবে, তখন কেন্দ্রিয় ব্যাংক আবার আস্তে আস্তে মন্দার সময় ছাড়কৃত অর্থ বাজার থেকে সরিয়ে নিবে। তার মানে, কেন্দ্রিয় ব্যাংক এখন কিছুটা সংকোচনমুলক নীতি গ্রহন করবে। আর এটাকেই বলা হচ্ছে ইংরেজিতে Tapering যা যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যেই শুরু করেছে এবং ফেড এর টেপারিং নামেই তা সর্বাধিক পরিচিত।
মন্দার সময়ে কেন্দ্রিয় ব্যাংক প্রতি মাসে ৮৫ বিলিয়ন ডলারের বন্ড কিনত বা সহজভাবে বলা যায় যে, প্রতি মাসে বাজারে ৮৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করত। এর ফলে আস্তে আস্তে যখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ঘুরে দাড়াতে শুরু করে, তখন ফেড সিদ্ধান্ত নেয়, আস্তে আস্তে বন্ড ক্রয় কমিয়ে আনার। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম বন্ড ক্রয়ের পরিমান ৮৫ বিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ৭৫ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয় এবং সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রতি মাসে ১০ বিলিয়ন ডলার করে কমিয়ে ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে বন্ড ক্রয় ও প্রণোদনামূলক প্রকল্প একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হবে। সর্বশেষ গত মাসে ফেড বাজার থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের বন্ড ক্রয় করেছিল। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এ মাসে প্রণোদনামূলক প্রকল্প একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। এমনকি সুদের হারও বাড়তে পারে, যদিও ফেড বলেছিল যে সুদের হার দীর্ঘ সময় ধরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকবে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ক্রমান্বয়েই ভালো হচ্ছে এবং নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন যে, ২০১৭ সালের মধ্যেই বেকারত্তের হার মাত্র ৫ শতাংশে নেমে আসবে।
ফেডের এই টেপারিং এর সাথে কি ফরেক্স মার্কেটের কোন যোগসূত্র আছে? কেন টেপারিং এই মুহূর্তে ফরেক্স মার্কেটের সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় এবং কেন ডলারের উঠানামা এর উপর অনেকখানি নির্ভর করবে আগামি দিনগুলোতে , এই নিয়েই আলোচনা থাকবে পরের পোস্টটিতে। আপনাদের ভালো বা খারাপ লাগলে অথবা কোন জিজ্ঞাসা থাকলে জানাতে ভুলবেন না।
বন্ড প্রকল্প কমিয়ে আনা হচ্ছে, তাহলে এর ফলশ্রুতিতে মার্কেটে ডলার সাপ্লাই অনেকাংশে কমে যাবে । তাহলে সাপ্লাই এবং ডিমান্ডের প্রচলিত থিউরি অনুযায়ী ডলারের দাম বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা থাকে এবং ট্রেডারদের সাইকোলজিকাল ভিউটাতেও এটি অনেক প্রভাব ফেলে। আশারাখি টেপারিং বিষয়ে সকলের বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।