PDA

View Full Version : টয়োটা সেঞ্চুরি



BDFOREX TRADER
2021-02-07, 05:25 PM
13633
টয়োটা সেঞ্চুরি, বাংলাদেশে এর দাম :- ১০.২ কোটি (সকল ট্যাক্স-সহ)
রোলস-রয়েসের জাপানী প্রতিযোগী, যার দাম রোলস-রয়েস গোস্টের অর্ধেক হলেও লাক্সারিতে প্রায় সমানে সমান। স্বয়ং জাপানের সম্রাট এই গাড়িটির একজন ব্যাবহারকারী।
এই গাড়িটির প্রোডাকশন হয় এই গাড়িটির জন্য বানানো একটি বিশেষায়িত ফ্যাক্টরিতে, ও টয়োটার সবচেয়ে অভিজ্ঞ হাতেগোনা কয়েকজন কর্মী দ্বারা। গাড়িটির প্রত্যেকটি জিনিসেই টয়োটা ব্যাবহারিক বিলাসিতা নিশ্চিত করেছে। এখন, ব্যাবহারিক বিলাসিতা কি? এই যে রোলস-রয়েসে মদের বোতল ও গ্লাস রাখার ফ্রিজ, ছাদে লাইটিং ও আরও কত কি থাকে, এগুলো জিনিস কিন্তু রিয়েল-লাইফে সেভাবে কাজে লাগে না। রিয়েল-লাইফে একজন ধনী ব্যক্তি গাড়িতে ঠিক যেই যেই জিনিসগুলো ব্যাবহার করে থাকেন, সেগুলোই দিয়েছে টয়োটা এই গাড়িটিতে। যেখানে রোলস-রয়েস বা বেন্টলে তাদের লাক্সারি সেডানে ব্যাবহার করে লেদার সিটস, টয়োটা সেখানে ব্যাবহার করেছে স্বাস্থ্যবান ও কমবয়সী ভেড়া থেকে নেওয়া উল। উল ব্যাবহারের যুক্তি হলো, লেদারের সিটের উপর মানুষ নড়াচড়া করলে ঘষা লেগে ‘পচ’ করে খুবই আস্তে একটি শব্দ হয়, কিন্তু উলে তা হয় না। যেহেতু আল্ট্রা-লাক্সারি গাড়ির একটি বড় ফিচার হয় শব্দহীনতা, তাই তারা যেন ওই আস্তে শব্দটিও না হয়, তাই উল ব্যাবহার করেছে। যদিও কাস্টমার চাইলে লেদার সিটও নিতে পারেন অর্ডার করিয়ে, এবং বলাই বাহুল্য সেই লেদারটিও সর্বশ্রেষ্ঠ কোয়ালিটির। সাথে গাড়িটির অন্য সবকিছুও শব্দহীন করা হয়েছে, যার একটি অংশ গাড়িটিকে হাইব্রিড ড্রাইভট্রেইন দেওয়া। এয়ার সাস্পেনশনটি এমনভাবেই টিউন করা, যেন এক ফোঁটাও ঝাঁকি না অনুভব করা যায়। গাড়িটি টয়োটা এমনভাবে বানায়, যেন গাড়িটির মালিক গাড়িতে চড়ে অফিসে যাওয়ার সময়ে খবরের কাগজ পড়লে যেন তার মনোযোগ একটুও এদিক-ওদিক না হয়।
গাড়িটিতে যেই পেইন্ট দেওয়া হয় তা হলো এই দুনিয়ার সবচেয়ে সেরা কার পেইন্ট। দুনিয়ার অন্য কোনো গাড়িতেই সেঞ্চুরির সমকক্ষ পেইন্ট দেওয়া হয় না, এমনকি রোলস-রয়েসেও নয়। ৭টি পদার্থ দ্বারা সেই রঙটি তৈরি, ও অগণিত লেয়ারে তা দেওয়া হয়। শেষে পলিশ করে যেই চূড়ান্ত গ্লেজ আসে, তা এমনভাবে করা যেন গাড়ির মালিক গাড়িটি নিয়ে তার ব্যাবসায়িক মিটিংয়ে যাওয়ার সময়ে গাড়ির বডিতে পড়া তার নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে টাই ঠিক করে নিতে পারেন।
পিছনের সারির বামপাশের সিটটি মূলত বানানো গাড়ির মালিকের জন্য। কারণ, সামনের বামপাশের সিটে কোনো প্যাসেঞ্জার না বসলে সিটটিকে একটি বাটন চেপে পা-দানি বানানো যায়, যার উপরে পা রেখে গাড়ির মালিক পা টান-টান করে আরামে বসতে পারেন। সিট ম্যাসাজিং তো বলাই বাহুল্য যে আছে, এসি ভেন্টও পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে গাড়িতে পছন্দসই তাপমাত্রা বজায় রাখতে। গাড়িটিতে যেই ২০টি স্পিকারের সাউন্ড সিস্টেম আছে তা টয়োটা এমনভাবে বানিয়েছে যেন একজন মিউজিক স্পেশালিস্টও কোনো খুঁত না ধরতে পারেন।
গাড়িটিতে আছে ৫০০০ সিসির ভি-৮ ইঞ্জিন ও ইলেকট্রিক মোটর, যার কম্বাইন্ড আউটপুট ৪২৫ হর্সপাওয়ার। লাক্সারি সেডান হিসেবে গাড়িটির আউটপুট যথেষ্ট! যদিও রোলস-রয়েসের মতো ৬০৫ হর্সপাওয়ার নেই, কিন্তু রোলস-রয়েসে থাকে ৬৭৫০ সিসির টুইন-টার্বো ভি-১২ ইঞ্জিন, এবং এতো শক্তি সত্যি বলতে কখনোই ব্যাবহার হয় না একটা লাক্সারি কারে। সেক্ষেত্রে টয়োটা সেঞ্চুরির পাওয়ার ফিগার বেশ পার্ফেক্ট একটি পরিমাণের। সাথে সেঞ্চুরির ইঞ্জিন যে এর প্রতিযোগী অর্থাৎ রোলস-রয়েস গোস্ট, বেন্টলে ফ্লাইং স্পার, মার্সিডিজ-বেঞ্জ এস-ক্লাস, বিএমডব্লিউ ৭-সিরিজ বা অডি এ৮ থেকে অনেক বেশি রিলায়েবল তা আর নতুন করে বলা লাগেনা। কারণ? এটি একটি টয়োটা! আর কোনো কারণ জানতে চান যে কেনো এটির ইঞ্জিন সবচেয়ে বেশি টেকসই?
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এতোই যখন ভালো তাহলে গাড়িটি কেন সেভাবে প্রচলিত না সারা বিশ্বে? কারণ হলো, এটি একটি টয়োটা। যারা এতো দাম দিয়ে একটি গাড়ি কিনেন, তারা সাধারণত একটি টয়োটা কিনেন না। কারণ, টয়োটা ব্র্যান্ডটি করোলার মতো ইকোনমিক গাড়ির নির্মাতা হিসেবেই বেশি পরিচিত, তাই তাদের সামাজিক মর্যাদার সাথে একটি টয়োটা ঠিক সেভাবে যায় না, হোক সেটা রোলস-রয়েসের সমান লাক্সারিয়াস। ব্র্যান্ড ভ্যালু একটা বড় ব্যাপার, ও এই কারণেই লেক্সাস এলএফএ সুপারকারটি একটি মাস্টারপিস হলেও সেভাবে মার্কেট পায়নি, কারণ সবার কথা ছিলো “এতো দাম দিয়ে একটা টয়োটার সুপারকার কিনব কোন যুক্তিতে?”। কিন্তু হ্যাঁ, জাপানে কিন্তু হাই প্রোফাইল বিজনেসম্যান, উচ্চ সরকারি কর্মকর্তাদের আছে সেঞ্চুরি গাড়িটি একটি লাক্সারি কার হিসেবে খুবই জনপ্রিয়।