PDA

View Full Version : কাঠামোগত দুর্বলতার ফাঁদে আটকা পড়েছে ব্যাংক



BDFOREX TRADER
2021-02-25, 04:35 PM
ঢাকার মতিঝিল-গুলশান আর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি-ডবলমুরিং থানাকে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের ব্যাংক খাত। এ চারটি থানাভুক্ত এলাকায় অবস্থিত ব্যাংকের শাখাগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকার ঋণ, যা দেশের মোট ব্যাংকঋণের ৫৭ শতাংশেরও বেশি। ধনীদের বসবাস ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত এসব এলাকায় বিতরণকৃত ঋণ গিয়েছে মূলত বৃহৎ করপোরেট ও ট্রেড ফাইন্যান্সে। দশকের পর দশক ধরে গড়ে ওঠা এ কাঠামোকেই দেশের ব্যাংক খাতের বড় বিপদের কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্যমতে, করোনাসৃষ্ট আর্থিক দুর্যোগ ও পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতি দেশের ব্যাংক খাতে প্রচুর পরিমাণে অলস তারল্য তৈরি করেছে, যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সুদহার ৫-৬ শতাংশে নামিয়েও এখন বড় করপোরেটকে ঋণ দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে ঋণের খরা চলছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান এবং কুটির শিল্প (সিএসএমই) খাতে। কৃষি খাতের দশাও তথৈবচ। এ পরিস্থিতিতে খাত দুটিতে নতুন ঋণ দেয়া দূরের কথা, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজও বাস্তবায়ন করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এজন্য দায়ী করা হচ্ছে ব্যাংকগুলোর কাঠামোগত সীমাবদ্ধতাকেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ব্যাংক খাত বেড়ে উঠেছে বৃহৎ শিল্প ও ধনীদের ঋণ দেয়ার মানসিকতা নিয়ে। দেশের ব্যাংকগুলোর কাঠামোগত ভিতও তৈরি হয়েছে বড় ঋণকে কেন্দ্র করে। এ কারণে বড় ঋণের চাহিদা না থাকায় ব্যাংকগুলোর নতুন বিনিয়োগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে সিএসএমই, কৃষি ও মধ্যবিত্তের ব্যক্তিগত ঋণের চাহিদা থাকলেও সেখানে যেতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এজন্য মূলত ব্যাংকিং প্রডাক্টে বৈচিত্র্যের অভাব ও ব্যাংকারদের মানসিকতাই সবচেয়ে বেশি দায়ী।
http://forex-bangla.com/customavatars/481023068.jpg

Rakib Hashan
2021-03-03, 02:25 PM
মূলধন ঘাটতি ২৯ হাজার কোটি টাকা, লভ্যাংশ দিতে পারবে না ১০ ব্যাংক।ছাড় নিয়ে খেলাপি ঋণ কম দেখাতে পারলেও মূলধন ঘাটতি থেকে বেরোতে পারছে না কয়েকটি ব্যাংক। গত ডিসেম্বর শেষে ১০ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে ৫৮টি নতুন ব্যাংকের মূলধন জোগান দেওয়া সম্ভব। ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৭টি সরকারি ও ৩টি বেসরকারি খাতের। লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়টি মূলধন সক্ষমতার সঙ্গে জুড়ে দেওয়ায় এসব ব্যাংক এবার লভ্যাংশ দিতে পারবে না।
ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যা বেশি, কমপক্ষে সেই পরিমাণ মূলধন রাখতে হয়। ঘাটতি থাকা অবস্থায় লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে অনেক ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় নিয়ে লভ্যাংশ দিয়ে আসছিল। করোনার প্রভাব শুরুর পর ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো লভ্যাংশ বিতরণে সীমা আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২০ সালের জন্যও ব্যাংক ইচ্ছেমতো লভ্যাংশ দিতে পারবে না।
13816
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে সরকারি ৭টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২৫ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা ঘাটতি জনতা ব্যাংকের। সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি তিন হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংক ডিসেম্বর শেষে তিন হাজার ২ কোটি টাকার ঘাটতিতে পড়েছে। বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি এক হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে এক হাজার ৪৫৮ কোটি ও রূপালী ব্যাংকে ঘাটতি রয়েছে ৬৭২ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি এক হাজার ৬২২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে এক হাজার ৩৫ কোটি টাকা ও পদ্মা ব্যাংকে ৩১০ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় না নেওয়া ব্যাংকের মূলধন ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১৫ শতাংশের বেশি হলে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদসহ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারবে। গত ডিসেম্বর শেষে এ তালিকায় রয়েছে- সরকারি মালিকানার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, বিডিবিএলসহ ২০টি ব্যাংক। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে- ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, আল-আরাফাহ্* ইসলামী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ও পূবালী ব্যাংক। আর নতুন প্রজন্মের মধুমতি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, সীমান্ত ও কমিউনিটি ব্যাংকও রয়েছে এ তালিকায়। সাড়ে ১৩ থেকে ১৫ শতাংশের নিচে মূলধন থাকা ব্যাংক সাড়ে ১২ শতাংশ নগদসহ ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারবে। এ তালিকায় রয়েছে- ইউসিবিএল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, শাহ্*জালাল ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ও এসআইবিএল ব্যাংক। মূলধন ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশের নিচে হলে ওই ব্যাংক সাড়ে ৭ শতাংশ নগদসহ ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারবে। এ তালিকায় রয়েছে- মার্কেন্টাইল, ন্যাশনাল, এনসিসি, ওয়ান, ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম, স্ট্যান্ডার্ড, এসবিএসসি ও এনআরবিসি ব্যাংক। আর ১০ দশমিক ৭২৫ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৮৭৫ শতাংশের নিচে রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, আইএফআইসি, ইউনিয়ন, এবি ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।

SaifulRahman
2021-06-08, 06:37 PM
14620
বড় অঙ্কের মূলধন ঘাটতিতে ১১ ব্যাংক, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ২৪ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে ১১টি ব্যাংক। বড় অঙ্কের এই ঘাটতি ব্যাংকগুলোর নাজুক পরিস্থিতিকে উন্মোচিত করেছে।মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলো হলো- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।ইতোপূর্বে সংঘটিত দুর্নীতির জের ধরে ব্যাংকগুলো এই বিরাট অঙ্কের মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক মার্চ পর্যন্ত ১১ হাজার ২২৯ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে, যা আগের তিন মাসের চেয়ে চার শতাংশ বেশি।একই সময় সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি তিন হাজার ৬৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে তিন হাজার ৬৯৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ সমস্যাটির ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কারণ, এ ধরনের পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যাংকিংখাত নিয়ে নেতিবাচক বার্তা দেয়।’তিনি জানান, কোনো দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিদেশি ব্যবসায়ীরা সাধারণত ব্যাংকের মূলধনের ভিত্তি ও খেলাপী ঋণ পর্যবেক্ষণ করে।এ ধরনের মূলধন ঘাটতি তাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।তবে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, তিন মাস আগে দেশের ব্যাংকিং খাতে ১৫ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা মূলধন উদ্বৃত্ত থাকলেও মার্চে তা বেড়ে ১৬ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা হয়েছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেগুলেটরি ফরবিয়ারেন্সের কারণে প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) জনতা ব্যাংকের মূলধন পরিস্থিতি যথেষ্ট উন্নতি হয়।রেগুলেটরি ফরবিয়ারেন্স এমন একটি নীতি, যার মাধ্যমে মূলধন পুরোপুরি নি:শেষ হয়ে গেলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থাৎ, ব্যাংকিং নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে এটি এক ধরনের ছাড়।প্রত্যেক ব্যাংককে খেলাপী ও সাধারণ ঋণের (যেটি খেলাপী হয়নি) বিপরীতে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা আমানতকারীদের স্বার্থে আলাদা করে রাখতে হয়, যাকে প্রভিশন বলা হয়।এই ধরনের প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড় দেয় জনতা ব্যাংককে। এর ফলে জনতা ব্যাংকের মূলধন কৃত্রিমভাবে বেড়ে যায়।কিন্তু এই ফরবিয়ারেন্স পাওয়া সত্ত্বেও, গত মার্চে জনতা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়ায় ৪১৭ কোটি টাকা, যা তিন মাস আগে ছিলো পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।তবে, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুস সালাম আজাদ জানান, গত মাসে আরেকটি রেগুলেটরি ফরবিয়ারেন্স পাওয়ায় ব্যাংকটিতে এখন ছয় হাজার ১৭ কোটি টাকার মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে।ব্যাংকটিকে গত মাসে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় মূলধন রাখার অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে যে মূলধন রাখার কথা ছিলো, জনতা ব্যাংক আগামী চার বছরে তা পর্যায়ক্রমে রাখতে পারবে।আজাদ বলেন, ‘নীতিমালার এই ছাড়ের কারণে গত বছর আমরা ১৪ দশমিক ৪৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছি।’এদিকে, মার্চে বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়ায় এক হাজার ৭২ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিকের চেয়ে এটি ২৮ দশমিক ১৫ শতাংশ কম।বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনিসুর রহমান জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসিক ব্যাংককে নিট ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। মূলধন ঘাটতি জের ধরে এই পরিস্থিতির উদ্ভব।তিনি বলেন, ‘আমরা খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি। ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে এটি।’এ ছাড়া, ব্যাংকটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছে স্বল্প সুদে আমানত খোঁজ করছে।তবে, ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের বড় অংশ এখন খেলাপী। এর প্রায় ৯০ শতাংশই আদায়যোগ্য নয়।এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকটি থেকে অন্তত চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ ব্যাংকটির আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও বোর্ড সদস্য এতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে।২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ব্যাংকটি উচ্চ সুদে দীর্ঘমেয়াদি আমানত ব্যবস্থা নিয়েছিলো। এসব আমানত এখন ব্যাংকের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই উচ্চ সুদ মূলধন ঘাটতির অন্যতম একটি কারণ।ওই ব্যাংক কর্মকর্তা আরও বলেন, বেসিক ব্যাংক যদি সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে স্বল্প খরচে আমানত পেতে সক্ষম হয়, তবে তারা সুন্দরভাবে ব্যালেন্সশিট ব্যবস্থাপনা করতে পারবে। পাশাপাশি, তা মুনাফাও অর্জন সাহায্য করবে।মার্চে ব্যাংকিং খাতে গড় মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশে দাঁড়ায়, যা ডিসেম্বরে ছিল ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এর অর্থ, প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকিংখাতে মূলধনের সামগ্রিক ভিত্তি একটু শক্ত হয়েছে।