PDA

View Full Version : নিসান এক্স-ট্রেইল!!!



DhakaFX
2021-04-20, 01:48 PM
14173
নিসান তাদের এক্স-ট্রেইল গাড়িটিকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশে বিক্রি করে “নিসান রোউগ” নামে। গত বছরের জুন মাসে নতুন জেনারেশনের রোউগ বাজারে আনার পরে সবাই বুঝতে পারে যে নতুন এক্স-ট্রেইল দেখতে কেমন হবে, কারণ প্রত্যেকবারই রোউগ ও এক্স-ট্রেইল দেখতে হুবহু একই হয়। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে নতুন এক্স-ট্রেইলের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি নিসান। অবশেষে অপেক্ষার শেষ হলো, আজকে চীনের ২০২১ সাংহাই অটো শো-তে নিসান অফিশিয়ালি ৪র্থ প্রজন্মের এক্স-ট্রেইল উন্মোচিত করেছে চীনের মার্কেটের জন্য!!
প্রতিবারের মতোই এবারও এক্স-ট্রেইল দেখতে হুবহু রোউগের মতোই, ইন্টেরিওরও একদম সেম টু সেম রোউগের ইন্টেরিওর। এবারের এক্স-ট্রেইল/রোউগ এবং সম্প্রতি রিলিজ হওয়া ৪র্থ জেনারেশনের নতুন মিতসুবিশি আউটল্যান্ডারের সাথে কো-ডেভেলপড, এবং এই নতুন আউটল্যান্ডারটি এই এক্স-ট্রেইলের চ্যাসিস ও ইন্টেরিওর শেয়ার করে। যাইহোক, সামনে স্প্লিট-ডিজাইন হেডলাইট, ও পিছনে চিকন পাঁচ-কোণা টেইলল্যাম্প। নতুন এই মডেলটি দৈর্ঘ্যে চলতি মডেলের থেকে মাত্র ১ ইঞ্চি সাইজ বেড়েছে ও চওড়ায় মাত্র ২০ মিমি, কিন্তু উচ্চতায় ১ ইঞ্চি যার মানে হেডরুম বেড়েছে। এতদিন জাপানী ৭-সিটার ডি-সেগমেন্ট ক্রসওভার এসইউভিদের মধ্যে সিআরভি-এর ৩য় সারিতে হেডরুম সবচেয়ে বেশি ছিলো, কারণ সিআরভি-এর পিছনের শেপটি মাইক্রোবাসের মতো খাঁড়াভাবে নামে, কিন্তু এক্স-ট্রেইল এবং আউটল্যান্ডারে একটা ৫-সিটার ক্রসওভার এসিউভির মতো ছাদ থেকে ডিমালো শেপে ঢালু হয়ে নামার কারণে ৩য় সারিতে হেডরুম থাকতো কম। কিন্তু এবার সিআরভি-এর মতো পিছনের শেপ এক্স-ট্রেইলে দেওয়ার কারণে এতদিনে ৭-সিটারের ফাইটে এক্স-ট্রেইল সিআরভি-এর সমকক্ষ হতে পেরেছে। ইন্টেরিওর তো সম্পূর্ণরূপেই বদলেছে! ১২.৩ ইঞ্চি সাইজের বিশাল বড় একটা ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে, যেটাতে অত্যাধুনিক সব ইনফোটেইনমেন্ট সফটওয়্যার আছে, ও বরাবরের মতোই স্পিকারের সাপ্লাইয়ার ‘বোস’। সবচেয়ে অসাধারণ ইন্টেরিওর ফিচার হলো ৩-জোন ক্লাইমেট কন্ট্রোল, অর্থাৎ ২য় সারির যাত্রীরা সামনের সারি থেকে আলাদা তাপমাত্রায় এসির বাতাস গ্রহণ করতে পারবে। সাথে এবার ব্যাবহৃত হয়েছে ‘গিয়ার বাই ওয়্যার’ সিস্টেম, যার কারণে গিয়ার সিলেক্টরটি হয়েছে বেশ স্মার্ট। এখন যেকোনো একটি গিয়ার সিলেক্ট করার পর গিয়ার স্টিকটি আবার নিজের জায়গায় ফিরে যাবে ও যেই গিয়ারে আছে সেটির লেখার উপরে আলো জ্বালিয়ে রাখবে, এবং পার্কিং গিয়ারে দেওয়ার জন্য স্টিকের উপরে ‘পি’ লেখা একটি বাটন আছে যেটি চাপ দিলেই গাড়ি পার্কিং গিয়ারে চলে যাবে। তারপর, আগে যেখানে ফোর-হুইল-ড্রাইভ ডায়ালে 2WD, 4WD Auto এবং 4WD Lock থাকতো, সেখানে এখন দেওয়া হয়েছে Off-Road, Snow, Standard, Eco এবং Sport।
এবার আসি সবচেয়ে বড় চমকে! চীনের মার্কেটের জন্য এক্স-ট্রেইলে ব্যাবহৃত হবে ১৫০০ সিসির টার্বোচার্জড ইঞ্জিন। এখন, চলতি মডেলের এক্স-ট্রেইলে জাপানের মতোই চীনেও ২০০০ সিসির ইঞ্জিন ব্যাবহৃত হয়। এখন যদি ভাগ্য ভালো হয়, জেডিএম এক্সট্রেইলেও তাহলে ইঞ্জিন হবে এই ১৫০০ সিসিরটাই!!! দেশে এখন এক্স-ট্রেইল হাইব্রিডের গিয়ারবক্স ইস্যুর ব্যাপারে জেনেও মানুষ কিনছে কম দামের জন্য। কিন্তু মজার ব্যাপার, ০-১৬০০ সিসি নন-হাইব্রিড এবং ১৮০০-২০০০ সিসি হাইব্রিডের ইম্পোর্ট ডিউটি একই --> ১৩০%, যার কারণে এবার নন-হাইব্রিড এক্স-ট্রেইল পাওয়া যাবে হাইব্রিডের দামে!!! যদি ইঞ্জিন স্পেসিফিকেশনের কথা বলি, এখানেও আছে আরেক চমক! এই ইঞ্জিনটি হলো দুনিয়ার প্রথম ভ্যারিয়েবল কম্প্রেশন রেশিও ইঞ্জিন। অর্থাৎ, ক্র্যাংকশ্যাফটের সাথে একটি বাড়তি লাঠি লাগানো আছে, যেটি ড্রাইভারের চাহিদামতে কানেক্টিং রডকে লম্বা আবার খাটো করতে পারে। অর্থাৎ, পিস্টনটি সিলিন্ডারের মধ্যে কত উঁচুতে উঠতে পারবে এটাও এখন কন্ট্রোল করা যাবে, যা নিসানের এই সিরিজের ২টি ইঞ্জিন ছাড়া দুনিয়ার আর কোনো গাড়ির ইঞ্জিন করতে পারে না! এই সিস্টেমের সুবিধা হলো, ইকো মোডে কানেক্টিং রড লম্বা হয়ে কম্প্রেশন রেশিও হবে বেশি, তাই তেল তত খাবে কম ও শক্তিও আসবে কম, যা দৈনন্দিন ড্রাইভিংয়ের জন্য আদর্শ। আবার স্পোর্টস মোডে কনরড হয়ে যাবে খাটো, তাই কম্প্রেশন রেশিও হবে কম, ফলে তেল পুড়বে বেশি ও শক্তিও তৈরি হবে বেশি! যদি এতো কিছু না বুঝেন, সোজা কথায় ইকো মোডে গাড়িটি হাইব্রিড গাড়ির মতো মাইলেজ দিবে আবার স্পোর্টস মোডে একগাদা পাওয়ার দিবে, যেন ২টা ইঞ্জিন একটা গাড়িতে ইউজ করার মতো। এই ইঞ্জিনের শক্তি হলো ২০৪ হর্সপাওয়ার ও ৩০০ নিউটন-মিটার টর্ক, যা হোন্ডা সিআরভি-এর ১৫০০ সিসির টার্বো ইঞ্জিনটির থেকে ১৪ হর্সপাওয়ার বেশি! সবদিক থেকে এই গাড়িটি এবার জেডিএমে যেন বাজার দখল করতেই নামবে, যদি এই ১৫০০ সিসির ইঞ্জিনটি জেডিএম এক্স-ট্রেইলে দেওয়া হয়।
দামের ব্যাপারে এখনো কিছু বলা হয়নি, কিন্তু আমাদের ব্যাক্তিগত মতামত শেয়ার করি। হাইব্রিড গাড়ির ব্র্যান্ড থেকে দাম হয় বেশি, কিন্তু আমাদের দেশে ইম্পোর্ট ডিউটি কম বলে হাইব্রিড কিনতে গেলে দাম পরে কম। এখন, এই গাড়িটি যদি জেডিএমে ১৫০০ সিসি ইঞ্জিন নিয়ে আসে, তাহলে যদি নতুন প্রযুক্তির ইঞ্জিনের জন্য দাম বেশি রেখে চলতি মডেলের হাইব্রিডটার সমানও রাখে, তাহলে দেশে দাম হবে এখনকার এক্স-ট্রেইল হাইব্রিডের সমান, কারণ ১৫০০ সিসি নন-হাইব্রিড এবং ২০০০ সিসি হাইব্রিডের ইম্পোর্ট ট্যাক্স সমান!