PDA

View Full Version : কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আসছে সব ধরনের পেমেন্ট



DhakaFX
2021-12-14, 12:03 PM
সব ধরনের পেমেন্ট সিস্টেম কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে ‘পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইন ২০২১’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ আইন অনুযায়ী পেমেন্ট তথা পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনাকারী, পরিশোধ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণকারী ও পরিশোধ সেবাদানকারীর কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি প্রদান, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ থাকবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে। কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের যদি অবসায়ন ঘটে তাহলে দায়দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রে আইনে গ্রাহকদের অগ্রাধিকার দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
16204
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানান। তিনি বলেন, ব্যাংকে যেসব পেমেন্ট এবং সেটেলমেন্ট হচ্ছে, সেখানে কোনো আইন ছিল না। কিছু রেগুলেশন দিয়ে পরিচালিত হতো। বর্তমান অবস্থায় ডিজিটাল লেনদেন হওয়ার কারণে এ আইন নিয়ে আসা হয়েছে। খসড়া আইনে ৪৭টি ধারা রয়েছে। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রা এ আইনে যুক্ত করা হয়নি বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বলেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি সঙ্গে এ আইনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ক্রিপ্টোকারেন্সি ইজ নট আ কারেন্সি। ওটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনুমোদিত কোনো ট্রানজেকশন না। ডিজিটাল ব্যাংকিং ডাজ নট মিন ক্রিপ্টোকারেন্সি, এটা খেয়াল রাখতে হবে।
আইনটি প্রণয়নে যুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ আইনের মাধ্যমে দেশে কার্যরত সব পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনাকারী, নিকাশ ও নিষ্পত্তিকরণ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি প্রদান, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বাংলাদেশে কার্যরত স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর কার্যক্রম এ আইনের বাইরে থাকবে।
জানা গেছে, বর্তমানে অনেক ধরনের লেনদেন হচ্ছে—মূল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে ইন্টারনেট ও এজেন্ট ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক তহবিল স্থানান্তর, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডসহ বিকাশ, নগদ, রকেট, বিভিন্ন ব্যাংকের ই-ওয়ালেট, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক মুদ্রা, ইলেকট্রনিকভাবে তহবিল স্থানান্তর, চেক ইলেকট্রনিকভাবে উপস্থাপন, ডিজিটাল মুদ্রা, ট্যাংকেটেড চেক, ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট, সরকারি সিকিউরিটিজ সেটেলমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদি। এসব পদ্ধতির মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ, অর্থ গ্রহণ ও গ্রাহকের অর্থ চাহিদা নিষ্পত্তি হচ্ছে। আর এসব পদ্ধতি ব্যবহার করছে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এজেন্ট ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট। এদের কার্যক্রম তদারকি ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো এবং গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণে এ আইন গ্রণয়ন করা হচ্ছে।
এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডারের অধীনে তৈরি করা রেগুলেশন দ্বারা দেশের পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হতো। রেগুলেশনের বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার ও দণ্ড সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইন প্রণয়নের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। প্রযুক্তির আধুনিকায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে নতুন নতুন পেমেন্ট সেবা প্রতিষ্ঠান যুক্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইনের খসড়া তৈরি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও দীর্ঘ পর্যালোচনাশেষে পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস আইন-২০২১-এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
আইনের খসড়ায় বলা হয়, মূল ব্যাংকিং সেবার বাইরে অর্থ লেনদেন পরিশোধ ব্যবসায় আগ্রহী ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ সেবা প্রদানের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ-সংক্রান্ত পৃথক অনুমোদন নিতে হবে। ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১’-এর সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানবহির্ভ ত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানও অর্থ লেনদেন পরিশোধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নিতে হবে এবং ব্যবসা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত পরিমাণে, হারে ও পন্থায় মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে।
এ আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এতদিন শুধু রেগুলেশন দ্বারা দেশের পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হতো। তাই পেমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হলেও কোনো কারণে এ ধরনের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নিয়ম ভাঙলে ওই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে দেয়া ছাড়া আর কোনো শাস্তি দেয়া যেত না। এছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন ঘটলে বা বন্ধ হয়ে গেলে দায়দেনা পরিশোধেও কোনো উদ্যোগ গ্রহণের আইনি ভিত্তি ছিল না। কিন্তু এ আইনটি করার ফলে এসব দুর্বলতা কাটিয়ে সুষ্ঠুভাবে পেমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হবে।
খসড়া আইন অনুযায়ী, কোনো পেমেন্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গ্রাহক বা জনস্বার্থবিরোধী কোনো কার্যক্রমে লিপ্ত হলে সেটি অবসায়ন করতে হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে তৃতীয় কোনো পক্ষের আবেদনে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন হবে না। আর আদালত থেকে অবসায়ন কার্যক্রম জারি করা হলে ওই প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের সঙ্গে কোনো লেনদেন করতে পারবে না। গ্রাহকের দায়দেনা প্রশাসকের ওপর বর্তাবে। তবে অবসায়নকালে গ্রাহককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
খসড়া আইনে শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, বিধিবিধান লঙ্ঘন করে কোনো প্রতিষ্ঠান লেনদেন ব্যবসা পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর বিধিনিষেধ আরোপসহ সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা আরোপ করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত ও প্রত্যাহার করা হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স না নিয়ে বা কোনো বিধি লঙ্ঘনের দায়ে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর কেউ এ ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করলে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এর পরও একই কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে প্রতিদিনের জন্য ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।
নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা, তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অসহযোগিতা, কোম্পানির হিসাব, বহি বা নথিপত্র নষ্ট, ধ্বংস, পরিবর্তন, গোপন বা ভুলভাবে উপস্থাপন এবং অসাধু উদ্দেশ্যে পরিশোধের ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ১ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া কোনো ব্যক্তি যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স না নিয়ে বা কোনো বিধি লঙ্ঘনের দায়ে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পরও সে এ ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করলে সেটা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এজন্য তিনি ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এছাড়া এ ধরনের লেনদেনের মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে তার অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড, অনধিক ৫০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
ডি-৮ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) আওতায় আট দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এজন্য ডি-৮ প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্টের (পিটিএ) আওতায় অন্য সদস্য দেশগুলোর শুল্ক ছাড় দেয়ার পণ্য তালিকা ও সার্টিফিকেট অব অরিজিন অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা, জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।