View Full Version : ডলারের বিপরীতে মূল্য হারাচ্ছে টাকা
Montu Zaman
2022-03-28, 11:37 AM
ই মাস ডলারের দাম স্থিতিশীল থাকলেও, রবিবার (২২ মার্চ) তা আবার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অস্বাভাবিক আমদানি ব্যয় বাড়ায় ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে শক্তিশালী হচ্ছে ডলার; বিপরীতে দুর্বল হচ্ছে টাকা। ইতিপূর্বে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলারের জন্য ৮৬ টাকা খরচ করতে হয়েছিল; সেখানে আজ লেগেছে ৮৬ টাকা ৫৪ পয়সা। আর ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে এর চেয়েও পাঁচ-ছয় টাকা বেশি দরে। ফলে খোলা বাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯১-৯৩ টাকায়। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থির ছিল ডলারের দর। ৫ আগস্ট থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। বাড়তে বাড়তে ৮৬ টাকায় উঠার পর ১০ জানুয়ারি থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত ওই দামে স্থিতিশীল ছিল। অর্থাৎ প্রায় আড়াই মাস পর মঙ্গলবার থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। এই হিসাবে গত সাত মাসে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা ১ টাকা ৪০ পয়সা দর হারিয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মানের অবমূল্যায়নে কিছুটা স্বস্তিতে থাকেন দেশের রফতানিকারকরা। তাদের মতে, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার মান কমিয়েছে। করোনা মহামারির সময়ে তারা মুদ্রার মান অবমূল্যায়ন করেই চলছে, কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশ এখনও সেভাবে অবমূল্যায়ন করেনি। রফতানিকে উৎসাহিত করতে টাকার মান আরও অবমূল্যায়ন করা উচিত বলে তারা মন্তব্য করেন তারা।
17194
তবে, ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন আমদানিকারকরা। একদিকে করোনায় সামুদ্রিক জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি এবং কন্টোইনার সংকটে পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। কাঁচামাল ও উৎপাদনে মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে বর্ধিত দামে। এর সঙ্গে ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধি যোগ হচ্ছে পণ্যের উৎপাদন খরচে। ফলে ভোক্তাসাধারণকে আগের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এতে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। আর সেই মূল্যস্ফীতির চাপে নাকাল হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে চাল, ডাল, ভোজ্য ও জ্বালানি তেল, শিশুখাদ্য, মসলা, গম, বিমানের টিকিট ও বিদেশে চিকিৎসা খরচ। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গিয়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) জাতীয় বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে পাঁচ শতাংশের ঘরে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। যদিও ফেব্রুয়ারি শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ১৭ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, আমদানি ব্যয় বাড়লেও পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকায় এতে এখনই উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। তবে মুদ্রা বিনিময় হারে যে অসামঞ্জস্য সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করতে মুদ্রার আরো অবমূল্যায়ন করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তারা বলেন, এই সময়ে বিদেশি আয় ধরতে টাকার মান আরও কমাতে হবে। এতে প্রবাসী আয় ও রফতানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর প্রভাব পড়বে পুরো অর্থনীতিতে। প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারি থেকে প্রবাসী আয়ের ওপর আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। আগে যা ছিল ২ শতাংশ।
SumonIslam
2022-04-28, 12:26 PM
টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেশ কিছু দিন ধরেই বাড়ছে। ডলারের চাহিদা বাড়তে থাকায় সম্প্রতি ডলারের দামে বেশ খানিকটা অস্থিরতাও তৈরি হয়েছে। এতে আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে টাকার বিপরীতে ডলারের দামও গিয়ে ঠেকেছে সর্বোচ্চে। এ সংকট সামাল দিতে প্রতিদিন ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। এর আগে গত ১১ এপ্রিল এক সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন হার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্ক পদক্ষেপেও কাজে আসছে না। অর্থাৎ আন্তঃব্যাংক লেনদেনে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। ব্যাংক কিংবা খোলা বাজারে নগদ ডলার কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে ৯২ টাকার মতো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান কমে গেছে দেশের মুদ্রাবাজারে। এমন পরিস্থিতিতে আমদানি দায় পরিশোধে কোনও ব্যাংক যেন সমস্যায় না পড়ে সেজন্য ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া বিলাসপণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণসহ আরও কিছু নীতি নির্ধারণী পদক্ষেপও নিয়েছে গত কয়েকদিনে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডলারের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের যা যা করণীয়, তাই করছে। তিনি জানান, সরবরাহ বাড়াতে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে বিলাসবহুল পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডলারের সরবরাহ বাড়াতে ‘ডলার বন্ডে’ সীমাহীন বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে সরকার। প্রবাসীদের জন্য চালু থাকা এ বন্ডের সুদের হারও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে সুদ আকারে ডলার দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়া কমে যাবে। আবার এ বন্ডে বিনিয়োগ বাড়লে ডলার দেশে ঢুকবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার বিক্রির মাধ্যমে বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি আন্তঃব্যাংকে মৌখিকভাবে ডলার ঠিক করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এলসি খোলার জন্য বর্তমানে প্রতি ডলারের দাম ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। গত আগস্টের শুরুতে যেখানে আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায়।
17666
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের দর ছিল ৮৬ টাকা ২০ পয়সা। কিন্তু বুধবার (২৭ এপ্রিল) আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে কিনতে খরচ হ*য়ে*ছে ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। গত ১ মার্চ যা ছিল ৮৬ টাকা। এক বছর আগে ২০২১ সালে এ দর ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক দশমিক ৯০ শতাংশ দাম বেড়েছে।
ডলারের চাপ বাড়ছে কেন?
ব্যাংকাররা বলছেন, কোভিড মহামারি পরবর্তী আমদানি বাড়তে থাকার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত ডলার ব্যয় হচ্ছে। এর সঙ্গে বিদেশ ভ্রমণ ও শিক্ষা ব্যয়ের জন্যও ডলারের চাহিদা বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় পরিশোধ করা হয়েছে ৮৩২ দশমিক ৪৮ কোটি ডলার, যা এক বছর আগের একই মাসের তুলনায় প্রায় ৪৯ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।
এদিকে দেশে পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার পরিমাণ বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬ হাজার ৮৩৬ কোটি ১৮ লাখ (৬৮.৩৬ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ৫ লাখ ৮৯ হাজার ২৬৩ কোটি টাকার এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের কাছাকাছি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানি ব্যয় বৈদেশিক মুদ্রার জোগানে চাপ তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে আমদানির লাগাম টানার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রফতানি ও রেমিট্যান্স বাড়লেও আমদানি ব্যয় তার চেয়ে বেশি হচ্ছে।
আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণেই ডলারের চাপ বেড়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, রফতানি করতেও আমাদের আমদানি করতে হয়। ভোগ্যপণ্যের জন্যও আমদানি করতে হয়। তিনি মনে করেন, উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া আর কোনও পথ নেই।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখন থেকেই অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে সরকার ও দেশের সব ধরণের মানুষকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন, যে করেই হোক আমদানি কমাতে হবে। এছাড়া এখন আর অন্য কোনও পথ খোলা নেই।
ডলারের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব
ব্যাংক কর্মকর্তারা ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন ধারাবাহিকভাবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। এ প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির সরাসরি এর প্রভাব পড়েছে আমদানিতে। আর এ কারণে বাড়ছে পণ্যের ব্যয়। জিনিসপত্রের দাম সে কারণেই বেড়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পাশাপাশি চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে বিদেশ যেতে যাদের নগদ ডলারের প্রয়োজন তাদেরও গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ।
গত বছরের উল্টো চিত্র
চলতি অর্থবছরে গত ২১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে রেকর্ড পরিমাণ ৪৫৬ কোটি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও গত অর্থবছরে বাজার থেকে ৭৯৪ কোটি ডলার কিনতে হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত যে পরিমাণ ডলার বিক্রি করেছে তাতে বাজার থেকে উঠে এসেছে ৩৯ হাজার কোটি টাকার মতো। যদিও গত অর্থবছর ডলার কেনার বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাজারে যায় ৬৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। অবশ্য গত অর্থবছর কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রি করে ২ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে উঠে আসে।
কোন কোন খাতে ডলার ব্যবহৃত হচ্ছে?
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-মার্চ সময়ে এলসি খুলতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা খরচ হয়েছে রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড় ও অন্য পণ্য আমদানিতে। এর পরিমাণ ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ (৯.৬৬ বিলিয়ন) ডলার, গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ৪৩ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি।
সুতা আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৩৮৭ কোটি ৬ লাখ ডলারের আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। তুলা ও সিনথেটিক ফাইবার আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৩৩২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের। ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি ৩৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
রাসায়নিক দ্রব্য ও সার আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৪১৮ কোটি ১৮ লাখ ডলার। ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। এ ছাড়া ওষুধের কাঁচামালের এলসি খোলা হয়েছে ৯১ কোটি ৯২ লাখ ডলারের। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২০ দশমিক ২৫ শতাংশ।
শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানির জন্য ৬৩৫ কোটি ৫১ লাখ ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ বেশি।
মূলধনি যন্ত্রপাতি বা ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির জন্য ৪০৭ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৫৫৪ কোটি ৮৩ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। জুলাই-মার্চ সময়ে জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ৩১৯ কোটি ১৯ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। বেড়েছে ১২৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মধ্যে গম আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ১৭৩ কোটি ৯২ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪২ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি।
চিনি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৮৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের। প্রবৃদ্ধি ৭৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ভোজ্যতেল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ১৬২ কোটি ৭১ লাখ ডলারের; বেড়েছে ৫৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্য ও শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের। অর্থাৎ এক্ষেত্রে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।
তারল্য সংকটে ব্যাংক
একদিকে ডলারের চাহিদা মেটাতে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া সম্প্রতি বেড়েছে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা। অন্যদিকে করোনায় ক্ষতিগ্রস্তরা টাকা ফেরত দিতে পারেনি। তারল্য সংকটের চিত্র দেখা যায়, কল মানি মার্কেটে। বর্তমানে ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সুদে যা লেনদেন হচ্ছে। গত মাসের শেষ দিনে গড়ে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ সুদ ছিল। চলতি বছরের শুরুর দিকে কলমানিতে লেনদেন ও সুদহার ছিল অনেক কম। বছরের প্রথম কর্মদিবস ২ জানুয়ারি কল মানি মার্কেটে সুদহার ছিল গড়ে ২ দশমিক ৭২ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে টানাটানির কারণে অনেক ব্যাংক এখন আগের মতো সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে টাকা খাটাতে চাইছে না। যে কারণে কলমানির পাশাপাশি ট্রেজারি বিলের সুদহারও বাড়তির দিকে।
SUROZ Islam
2022-05-18, 11:32 AM
খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়ে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। মঙ্গলবার (১৭ মে) খোলাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১০১ টাকা দিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় স্থির ছিল ডলারের দর। এরপর থেকেই শক্তিশালী হতে থাকে ডলার; দুর্বল হচ্ছে টাকা।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই ৯ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়েছে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ। মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া ও চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা। এদিকে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দামে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সোমবার পর্যন্ত (সাড়ে ১০ মাসে, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১৬ মে পর্যন্ত) ৫২০ কোটি (৫.২০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে ডলারের দর।
http://forex-bangla.com/customavatars/1650203691.jpg
Rakib Hashan
2022-06-07, 02:51 PM
টাকার বিপরীতে ডলারের সবোর্চ্চ দাম বৃদ্ধি হয়েছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রোববার (০৫ জুন) একবারেই বাড়ানো হয়েছে এক টাকা ৬০ পয়সা। আর সোমবার (০৬ জুন) কমানো হয়েছে ৪৫ পয়সা। ফলে ২ দিনে টাকার মান কমল ২ টাকা ৫ পয়সা। এর ফলে সর্বশেষ প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা। আজ বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন দামে ডলার বিক্রি করেছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ডলারের দাম ৯০ পয়সা বাড়িয়েছে। একইভাবে গত সোমবার (২৭ মে) একবারেই ১ টাকা ১০ পয়সা বাড়ানো হয়েছিল ডলারের দাম। এই নিয়ে ডলারের দাম বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার পর তিন দফায় ডলারের দাম বাড়ানো হয়েছে।
ডলারের দাম বাড়ায় রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হবেন। অন্যদিকে আমদানিকারকদের খরচ বাড়বে
বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা নির্ধারণ করলেও ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে তিন থেকে চার টাকা বেশি দরে। অনেক ব্যাংক বাড়তি দামেই প্রবাসী আয় সংগ্রহ করছে ও রপ্তানি বিল নগদায়ন করছে। এতে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার ডলার কেনাবেচা হচ্ছে ৯৭ থেকে ৯৮ টাকায়।
অস্থির ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডলারের বাজার। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে। আর ডলারের চাহিদা বেশি হওয়ায় ধীরে ধীরে দাম বাড়াচ্ছে। এভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও ডলারের দাম চাহিদা-জোগানের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশে একদিকে ব্যাপক হারে আমদানির চাপ বেড়েছে। ফলে আমদানির দায় পরিশোধে বাড়তি ডলার লাগছে। কিন্তু সেই তুলনায় রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়েনি। ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা ও খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের ওপর চাপ বাড়ছে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যার কারণে টাকার বিপরীতে বাড়ছে ডলারের দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করছে। এতে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। কিন্তু তারপরও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না ডলারের দাম। এ অবস্থায় ডলারের দাম নির্ধারণ না করে চাহিদা-যোগানের উপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
ব্যাংকাররা বলছেন, চাহিদা বাড়ায় ডলারের দাম বাড়ছে। অনেক বিদেশি ব্যাংক ডলার ৯৪/৯৫ টাকায় কিনছে। এখন দর ঠিক রাখতে হলে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারণ করা রেটে কেনাবচা করছে না অধিকাংশ ব্যাংক। ফলে মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা বাড়ছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই ডলারের দাম বাজারের ওপর নির্ভয় করে। আমাদেরও সেই দিকেই যাওয়া উচিত।
তাদের মতে, ডলার নিয়ে দেশের মুদ্রাবাজারে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। শিগগিরই এ সংকট কমার কোনো লক্ষণ নেই। এ সংকটের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থায় নগদ টাকারও সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে চলতি হিসাবে লেনদেন ভারসাম্যেও ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।
এদিকে, আমদানি পণ্যের দাম ও জাহাজভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে সেই খরচ মেটানো যাচ্ছে না। এতে ডলারের সংকট তৈরি হচ্ছে। সংকট সামলাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতেই বেড়ে গেছে ডলারের দাম। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের দামের সীমা বেধে দেওয়ার ৪দিন পর আবার তুলে নেওয়া হয়েছে। কারণ, এতে কমে আসছিল প্রবাসী আয়। যা এখন ব্যাংকগুলোর উপরেই ছেড়ে দেওয়া হযেছে।
বৃহস্পতিবার (০২ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়, বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যাংকগুলো নিজেরাই ডলারের দাম নির্ধারণ করতে পারবে। তবে হঠাৎ যেন ডলারের দাম বেশি বাড়িয়ে না ফেলা হয়, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। পাশাপাশি বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো যাতে দাম বেশি বাড়াতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।
http://forex-bangla.com/customavatars/365355469.jpg
এদিকে, ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করছে। তারপরেও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা দাম নির্ধারণ করলেও ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে ৯২-৯৩ টাকায়। ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে ৯৭-৯৮ টাকায়।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। ৩ আগস্ট থেকে দু’এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো ৮৫ টাকা ছাড়ায়। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি এটি বেড়ে ৮৬ টাকায় পৌঁছে। এরপর ২২ মার্চ পর্যন্ত এ দরেই স্থির ছিল। পরে গত ২৩ মার্চ আন্তঃব্যাংকে আরও ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়ায়। ২৭ এপ্রিল আরও ২৫ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ১০ মে বাড়ে আরও ২৫ পয়সা। আজ ১৬ মে বাড়লে ৮০ পয়সা। ফলে এখন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম গিয়ে ঠেকেছে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সায়। যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। অর্থাৎ গত ৯ মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারে দর বেড়েছে তিন টাকা ১০ পয়সা।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১২ মে পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫০২ কোটি (৫.০২ বিলিয়ন) ডলার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত অর্থবছরে ডলার কেনায় রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে, আমদানির চাপে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের (রিজার্ভ) ওপর চাপ বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ আগের সব রেকর্ড ভেঙে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। যা বর্তমানে ৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৪১ দশমকি ৪২ শতাংশ। আলোচিত ১০ মাসে রপ্তানি থেকে দেশ আয় করেছে ৪ হাজার ১১০ কোটি ডলার। পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৮৬৭ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় থেকে রপ্তানি আয় বাদ দিলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় দুই হাজার ৭৫৬ কোটি ডলার। এসময় দেশে ১ হাজার ৫৭৮ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম।
DhakaFX
2022-06-08, 02:18 PM
ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কমানোর পর থেকে প্রতিদিনই কমছে টাকার মান, বাড়ছে ডলারের দাম। এতে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা সীমিতভাবে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ভোক্তারা। টাকার মান কমে যাওয়ায় ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। বাড়ছে পণ্যের দাম। সব মিলে অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। এটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও আপাতত নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না কবে নাগাদ টাকার অবমূল্যায়নে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। গত ছয় মাসে ১২ দফায় টাকার মান কমানো হয়েছে। এক বছরে টাকার মান কমেছে ৮ টাকা। অর্থাৎ ডলারের দাম বেড়েছে ৮ টাকা।
সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ডলারের দাম আরও বেড়েছে। গড়ে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ১ টাকা। অর্থাৎ ওই হারে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে। ফলে মঙ্গলবার ব্যাংকগুলোতে আমদানির জন্য প্রতি ডলার গড়ে বিক্রি হয়েছে ৯৩ টাকা করে। আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন হয়েছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। আগের দিন ডলার বিক্রি হয় ৯২ টাকা করে। ডলারের একক দর গত বৃহস্পতিবার থেকে তুলে নেওয়া হয়। এর আগে গত ২৯ মে থেকে ডলারের একক দর কার্যকর করা হয়। বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ একেবারেই কম থাকায় একক দর চার দিনের বেশি ধরে রাখতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ডলারের দামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করে নেয়। এতে ওই দিনই ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে সর্বোচ্চ ২ টাকা ৩৫ পয়সা। গত রোববার কমেছে ৪০ থেকে ৬০ পয়সা।
সোমবার কমেছে ২ টাকা ১০ পয়সা। মঙ্গলবার কমল ১ টাকা। অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের পর থেকে প্রতিদিনই কমেছে। এ সপ্তাহে ডলারের দাম আরও বাড়তে পারে। কমতে পারে টাকার মান। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৮ টাকা। অর্থাৎ ডলারের দাম ৮ টাকা বেড়েছে। গত বছরের ১ জুলাই প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা করে।
মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ৯৩ টাকা করে। ওই সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। অথচ বছরের শুরুতে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ডলারের বিপরীতে টাকার মান ১ থেকে ২ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল। গত অর্থবছরে টাকার মান কমেছিল দেড় শতাংশ। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান স্থিতিশীল ছিল। গত বছরের আগস্ট থেকে ডলারের চাহিদা বাড়তে থাকে। গত মার্চ থেকে ডলার সংকট শুরু হয়। এপ্রিলে এসে সংকট বাড়ে। মে মাসে প্রকট আকার ধারণ করে।
আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম দীর্ঘদিন ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা ছিল। গত বছরের জুলাই থেকে ৫ পয়সা করে দাম বাড়তে থাকে। বছর শেষে তা ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়ায়। গত জানুয়ারির শুরুতে ডলারের ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা হয়। ২৩ মার্চ আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম আরও ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় ওঠে। ২৭ এপ্রিল এর দাম ২৫ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায় দাঁড়ায়। ৯ মে ডলারের দাম ২৫ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় হয়। গত ১৬ মে আরও ৮০ পয়সা বেড়ে প্রতি ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়ায়। ২৩ মে এর দাম ৪০ পয়সা বেড়ে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা হয়। এর পর ১ টাকা ১০ পয়সা দাম বেড়ে ৮৯ টাকা হয়।
আন্তঃব্যাংকে বৃদ্ধির সঙ্গে বাজারেও দাম বাড়তে থাকে। গত ৪ জানুয়ারি আমদানির জন্য ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করেছে ৮৬ টাকা করে। ১ ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা হয়। ২৩ মার্চ তা আরও বেড়ে ৮৬ টাকা ৪০ পয়সায় দাঁড়ায়। এভাবে ২৭ এপ্রিল ৮৬ টাকা ৮০ পয়সা, ৯ মে ৮৭ টাকা, ১৬ মে ৮৭ টাকা ৮০ পয়সা, ২৩ মে ৮৮ টাকা ১০ পয়সা, ২৬ মে ৮৯ টাকা, ২ জুন ৯১ টাকা ৩৫ পয়সা, ৫ জুন ৯১ টাকা ৫০ পয়সা, ৬ জুন ৯২ টাকা, ৭ জুন ৯৩ টাকা দরে ডলার বিক্রি হয়।
সূত্র জানায়, বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। কেননা, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে ৪৪ শতাংশ। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়েনি। রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩৪ শতাংশ ও রেমিট্যান্স কমেছে ১৬ শতাংশ।
বর্তমানে প্রতি মাসে আমদানি ব্যয়, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, ভ্রমণ ও চিকিৎসা খাত মিলিয়ে গড়ে ৯৫০ কোটি থেকে ১ হাজার কোটি ডলারের প্রয়োজন হয়। এর বিপরীতে রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, বিনিয়োগ মিলিয়ে ৭৪০ থেকে ৭৫০ কোটি ডলার পাওয়া যায়। এতে প্রতি মাসে ঘাটতি থাকে ২১০ কোটি থেকে ২৫০ কোটি ডলার। মাসে গড় ঘাটতি দাঁড়ায় ২৩০ কোটি ডলার।
ওই ঘাটতি মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হচ্ছে। এতে রিজার্ভের স্থিতিও কমছে। গত জুনে রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। এখন তা কমে ৪ হাজার ২২০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। রিজার্ভ থেকে খুব বেশি দিন ডলারের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে না। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার রেমিট্যান্স বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। একই সঙ্গে পাইপলাইনে যেসব বৈদেশিক সহায়তা আটকে রয়েছে সেগুলোও ছাড় করানোর প্রচেষ্টা চলছে। এদিকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস রপ্তানি আয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মে মাসে রপ্তানি আয় কম এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগাম পূর্বাভাস দিয়েছে আগামী জুলাই থেকে রপ্তানির আদেশ কমে যেতে পারে। ফলে রপ্তানির কাঁচামাল আমদানিও কমবে। এর প্রভাব পড়বে আগামী অক্টোবর থেকে। রপ্তানি আয় কমে গেলে তা হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। কেননা এখন রপ্তানি আয় বাড়ছে, রেমিট্যান্স কমছে, তারপরও ডলার বাজার সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। দুটোই কমতে থাকলে বাজারে কী অস্থিরতা দেখা দিতে পারে তা নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত।
http://forex-bangla.com/customavatars/245067317.jpg
Rakib Hashan
2022-06-29, 01:26 PM
মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান আবারও কমেছে। মঙ্গলবার (২৮ জুন) ডলারের বিপরীতে আরও ৫০ পয়সা দাম বেড়েছে। যা আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলার বিক্রি হয় ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সায়। এর আগে সোমবার (২৭ জুন) প্রতি ডলার বিক্রি হয় ৯২ টাকা ৯৫ পয়সা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত বছরের ৩০ জুন আন্তঃব্যাংকে প্রতি এক ডলারের জন্য ব্যাংকগুলোকে ৮৪ টাকা খরচ করতে হয়েছিল। আজ (২৮ জুন) তা ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা হয়েছে। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সবশেষ এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে ৫ শতাংশ কমেছে টাকার মান। আর চলতি বছরে ডলারের বিপরীতে অন্তত ১৩ বার মান হারিয়েছে টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, আন্তঃব্যাংক রেট ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সায় বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী (এডি) ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যাংকের নির্ধারিত রেটই কার্যক্রম হবে সেসব ব্যাংকে। অর্থাৎ বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্ব-স্ব ব্যাংকগুলো নিজেরাই ডলারের দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করতে পারবে। আজ (মঙ্গলবার) কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা দরে চার কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
এদিন খোলাবাজারে ডলারের দাম ১০০ টাকার ওপরে। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিক্রি করেছে ৯৩ থেকে ৯৫ টাকার মধ্যে।
http://forex-bangla.com/customavatars/458347063.jpg
Powered by vBulletin® Version 4.1.9 Copyright © 2025 vBulletin Solutions, Inc. All rights reserved.