Log in

View Full Version : কভিড নয় যুদ্ধে ভীতসন্ত্রস্ত স্পেনের ব্যবসায়ীরা।



Smd
2022-03-31, 08:27 AM
17260
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন স্পেনের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে যা কভিড-১৯ মহামারির চেয়ে বেশি আঘাত করেছে তাদের আত্মবিশ্বাসে। মহামারির অভিঘাত কাটিয়ে ওঠার জন্য ২০২২ সালকে একটি বিশাল বছর বলে মনে করেছিলেন স্পেনের ব্যবসায়ীরা। অর্থনীতি চাঙা করার চিন্তায় বিভোর ছিলেন তারা। তাদের সেই স্বপ্নভঙ্গ হয় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। এদিন তাদের হতাশ করে ইউক্রেনে আচমকা যুদ্ধ শুরু করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখের ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক স্টাডিজের আইফো ইনডেক্স দেশটির ব্যবসায়ীদের নিজস্ব অর্থনীতির ওপর আস্থা পরিমাপ করে। এই অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানায় ইউরোপের বৃহৎ অর্থনীতির দেশ জার্মানি। আইফো জানায় চলতি মাসে জার্মানির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ-সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে দেখা যায় এ মাসে ব্যবসায়িক পরিবেশের সূচক কমে ৯০ দশমিক ৮ পয়েন্টে নেমেছে যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯৮ দশমিক ৫ পয়েন্ট। এছাড়া আস্থার সংকটে ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের আস্থায় ধস নেমেছে ১৩ দশমিক তিন শতাংশ, যা কভিড-১৯ মহামারির চেয়ে বেশি। ইউরোপা প্রেসকে দেয়া এক বিবৃতিতে আইফোর প্রেসিডেন্ট ক্লিমেন্স ফুয়েস্ট বলেন জার্মানির ব্যবসায়ীদের আস্থায় চিড় ধরিয়ে দিয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। একইভাবে যুক্তরাজ্যের এএমইসিও স্পেনের ৩৫০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে এক জরিপ পরিচালনা করে। গত শুক্রবার এর ফল প্রকাশ করে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বৈশ্বিক বাণিজ্য সংস্থাটি। এতে দেখা যায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে অপ্রত্যাশিত পরিণতির আশঙ্কায় স্পেনের ৪৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে। এএমইসির প্রতিবেদনে বলা হয় যুদ্ধের কারণে জ্বালানির পাশাপাশি খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠান গুলোর ওপর নেতিবাচক চাপ বেড়েছে। কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে ইউরোপের অর্থনীতি, এ কারণে ৬০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এএমইসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জোয়ান ট্রিসট্যানি বলেন ফেব্রুয়ারির শেষের দিকেও স্পেনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ২০২২ সাল নিয়ে আশাবাদী ছিল। তবে ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে এবং সরবরাহ ব্যবস্থা সমস্যায় জর্জর হলে হঠাৎ পরিবর্তন দেখা দেয়। একই দিন স্পেনের কাইক্সা ব্যাংকের এক গবেষণার ফলও প্রকাশিত হয়। ইউরো অঞ্চলের ব্যবসায় আস্থা সূচকে কীভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তা দেখানো হয়েছে এ ফলে। এতে বলা হয় স্পেনের অর্থনীতি মন্দায় পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে। জ্বালানির দামে ঊর্ধ্বগতি ও সরবরাহ সংকটের কারণে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সবশেষে ব্যাংকটি জানায় ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে প্রতিষ্ঠান গুলোর খরচ বেড়ে গেছে এবং আসন্ন মাসগুলোয় প্রবৃদ্ধি চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে। স্পেনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিসটিকস (আইএনই) জানায় কোভিড-১৯-এর সংকট কাটিয়ে উঠতে না উঠতে যুদ্ধের ডামাডোলে পড়েছে অর্থনীতি। তবে পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায় গত বছর দেশটির অর্থনীতি আগের বছরের তুলনায় সন্তোষজনক ছিল। এ বিষয়টিকেই হাইলাইট করছে সরকার।অর্থ মন্ত্রণালয় জানায় গত বছর শেষ প্রান্তিকে স্পেনের অর্থনীতি এর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। তখন ২ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি হয় আইএনইর পূর্বাভাসের চেয়ে যা দুই দশমাংশ বেশি। একে সঠিক পুনরুদ্ধার বলে জানায় মন্ত্রণালয়। এর প্রভাবে শ্রমবাজার চাঙা হয়েছে বলে সরকার প্রচার করে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন পুনরুদ্ধার এখনও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে এবং সরকারি ঘোষণার ৬ দশমিক ৫ শতাংশের চেয়ে এখনও নিচে রয়েছে। স্বস্তির বিষয় স্পেনে রাশিয়া ও ইউক্রেনের কোনো বড় বিনিয়োগ নেই। এই দুই দেশেও স্পেনের উল্লেখজনক কোনো বিনিয়োগ নেই। তবে কিছু খাদ্যপণ্যের ওপর এই দেশ দুটির ওপর নির্ভরশীল স্পেন। এছাড়া রাশিয়ার অনেক নাগরিক স্পেনে বেড়াতে আসেন যা অব্যাহত থাকবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া স্পেনের প্রকৌশল ও কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।