PDA

View Full Version : ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন ঢাকার কাছের ৫ স্থানে



SUROZ Islam
2022-04-25, 01:50 PM
বর্তমানে সবাই কর্মব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এর মধ্য থেকে একটু সময় পেলেই অনেকেই রাজধানীর আশপাশে কোথায় ঘুরতে যাবেন তা খোঁজ করেন। কেউ পরিবার নিয়ে আবার কেউ প্রিয়জনের সঙ্গে নিরিবিলিতে সময় কাটানোর জন্য ঢাকার অদূরেই সুন্দর স্থানে যেতে চান। তারা চাইলেই একদিনে ঘুরে আসতে পারেন বেশ কয়েকটি স্থানে। তাও আবার ঢাকার খুব কাছেই। এসব স্থানে গেলে আপনি সত্যিই মুগ্ধ হবেন। যেহেতু কাল পহেলা বৈশাখের ছুটি ও তার পরের দিন আবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন, তাই চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার অদূরের কয়েকটি মনোরোম স্থানে।
http://forex-bangla.com/customavatars/1003737349.jpg
বেলাই বিল: ঢাকার আশপাশের মনোরম স্থানগুলোর মধ্যে বেলাই বিল অন্যতম। গাজীপুরের বেলাইবিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরা। বিকেলে এই বিলের চারপাশে অপূর্ব দৃশ্য তৈরি হয়, সঙ্গে শাপলার ছড়াছড়ি। ঘুরে বেড়ানোর জন্য মনোরম একটি জায়গা। সেখানে ইঞ্জিনচালিত আর ডিঙ্গি নৌকা দু’টোই পাওয়া যায়। সারাদিনের জন্য ভাড়া করে নিতে পারেন। ইঞ্জিনচালিত নৌকা চাইলে নিজেরাও চালাতে পারেন।কীভাবে যাবেন? বেলাই বিলে যেতে হলে প্রথমে গাজীপুর সদরে যাবেন। সেখানে নেমে টেম্পুতে কানাইয়া বাজার যান। ভাড়া নেবে ১০ টাকা জনপ্রতি। রিকশাতেও যেতে পারেন। কানাইয়া বাজারে নেমেই সামনে ব্রিজ আছে, ব্রিজ পার হয়েই নদীতে বাঁধা নৌকা ঠিক করে উঠে পড়ুন। পৌঁছে যাবেন বিলে।

মৈনট ঘাট: প্রিয়জনকে নিয়ে একদিনেই ঘুরে আসতে চাইলে যেতে পারেন মৈনট ঘাটে। ঢাকার দোহার উপজেলার পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর কোলে মৈনট ঘাট। দোহার থেকে দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। নদীর ওপারে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন। এই স্থানটি ‘মিনি কক্সবাজার’ নামে পরিচিত। ঢাকার খুব কাছাকাছি হওয়ায় ২ ঘণ্টার মধ্যেই আপনি মিনি কক্সবাজারে যেতে পারবেন। তাও আবার মাত্র ৯০ টাকায়। সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার ঢাকায় ফিরেও আসতে পারবেন। মৈনট ঘাটে যাবেন কীভাবে? ঢাকা থেকে মৈনট ঘাটে যাওয়ার সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হচ্ছে- গুলিস্তানের গোলাপ শাহর মাজারের সামনে থেকে সরাসরি মৈনট ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া যমুনা পরিবহনে চেপে বসা। ফেরার সময় একই বাসে আবার ঢাকা চলে আসবেন। মৈনট থেকে ঢাকার উদ্দেশে শেষ বাসটি ছেড়ে আসে সন্ধ্যা ৬টায়। গুলিস্তানের একই স্থান থেকে এন মল্লিক পরিবহনেও যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে নামতে হবে নবাবগঞ্জের মাঝিরকান্দায়। ভাড়া পড়বে ৭০ টাকা।

সোনারগাঁও জাদুঘর: সোনারগাঁও জাদুঘর বাঙালি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে খ্যাত। ঢাকা থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলায় অবস্থিত এটি। এই জাদুঘরে প্রবেশ করলেই প্রথমে চোখে পড়বে প্রায় ১০০ বছরের প্রাচীন অট্টালিকা ভবন। ভবনটি পুরোনো বড় সর্দার বাড়ি নামে পরিচিত। এই ভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন স্থাপত্য ভাস্কর্য দুটি ঘোড়া। জাদুঘরে আরও আছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের তৈরি গরুর গাড়ির ভার্স্কয, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভার্স্কয ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ভার্স্কয। যা দেখে যে কোনো পর্যটকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। সর্দার বাড়িতে মোট ১০টি গ্যালারি আছে। গ্যালারিগুলোতে কাঠ খোদাই, কারুশিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, গ্রামীণ লোকজীবনের পরিবেশ, লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন। তাছাড়া জাদুঘরের মধ্যে আছে কারুশিল্প গ্রাম। এখানে লোকজ স্থাপত্যে তৈরি হওয়া মানোরম ঘরগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের অজানা অচেনা। এছাড়া প্রতি বৈশাখ মাসে এখানে সাড়ম্বরে আয়োজিত হয় লোকশিল্প মেলা। যেখানে লোকসংগীত, যাত্রাপালা, কবিগান ইত্যাদি লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানমালা পরিবেশন করা হয়।

পানাম নগর: পানাম নগর ঢাকার খুব কাছেই ২৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহরের নাম। পানাম নগরী পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি। বর্তমানে পানাম নগরের দু’ধারে ঔপনিবেশিক আমলের মোট ৫২টি স্থাপনা রয়েছে। এর উত্তরদিকে ৩১টি ও দক্ষিণদিকে ২১টি স্থাপনা অবস্থিত। স্থাপনাগুলোর স্থাপত্যে ইউরোপীয় শিল্পরীতির সঙ্গে মোঘল শিল্পরীতির মিশ্রণ দেখতে পাওয়া যায়। নগরীতে এখনও দেখা যায় ৪০০ বছরের পুরোরনো মঠ-বাড়ি। এর পশ্চিমে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য কুঠি ‘নীলকুঠি’ আছে। পোদ্দার বাড়ি, কাশিনাথের বাড়ি, সোনারগাঁয়ের একমাত্র আর্টগ্যালারিসহ নানা প্রাচীন ভবন। পানামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পঙ্খীরাজ খাল। এছাড়া নানা নিদর্শন দেখতে পাবেন এই নগরে গেলে। বিভিন্ন ছুটির দিনগুলোতে সেখানে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যায়।

আহসান মঞ্জিল: ঊনবিংশ শতাব্দীতে ঢাকায় নির্মিত ইমারতগুলোর মধ্যে আহসান মঞ্জিল উল্লেখযোগ্য এক শৈল্পিক স্থাপত্য নিদর্শন। পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে স্থাপনাটি। পূর্বে এটি রাজাদের আবাসস্থল ছিল। বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সমগ্র আহসান মঞ্জিল দুটি অংশে বিভক্ত। পূর্ব পাশের গম্বুজযুক্ত অংশকে বলা হয় প্রসাদ ভবন (রঙমহল) ও পশ্চিমপাশে আবাসিক প্রকোষ্ঠাদি নিয়ে গঠিত ভবনকে বলা হয় ‘জানানা’ বা অন্দরমহল। প্রাসাদ ভবন আবার দুটি সুষম অংশে বিভক্ত। মাঝখানে গোলাকার কক্ষের ওপর সুউচ্চ অষ্টকোণ গম্বুজটি উত্তোলিত। এর পূর্বাংশে দোতলায় বৈঠকখানা, প্লেয়িং কার্ড রুম, গ্রন্থাগার ও ৩টি মেহমান কক্ষ ও পশ্চিমাংশে একটি নাচঘর। হিন্দুস্তানি কক্ষসহ ও কয়েকটি আবাসিক কক্ষ আছে। নিচ তলার পূর্বাংশে আছে ডাইনিং হল ও পশ্চিমাংশে দরবার গৃহ, বিলিয়ার্ড কক্ষ ও কোষাগার।
প্রাসাদ ভবনের দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রসারিত বারান্দা ও রাস্তার পাশে নহবতখানাটি ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ভূমিকম্পে ভেঙ্গে পড়ায় তা পুনঃনির্মাণ করা হয়। আহসান মঞ্জিল গেলে সেখানে দেখতে পাবেন জাদুঘরে সংরক্ষিত নবাবদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। সৈনিকদের বর্ম, ফুলদানি, সিন্দুক, জগসহ আরও অনেক কিছু। দক্ষিণে বুড়িগঙ্গার দিকে প্রাকৃতিক দৃশ্য শোভিত প্রাসাদের বিস্তৃত প্রাঙ্গণে বসে উপভোগ করতে পারবেন শেষ বিকেলের মনোরম দৃশ্য। আহসান মঞ্জিলে ঢুকতে হলে আপনাকে গুনতে হবে ২০ টাকা। ১০ বছরের কম বয়সীদের জন্য টিকেট মূল্য ১০ টাকা। করোনার জন্য রাত ১২টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত অনলাইনে বিক্রি হয় টিকেট৷ মূল্য ২০টাকা। শনিবার থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আপনি আহসান মঞ্জিল প্রবেশ করতে পারবেন। শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার ও সরকারি ছুটির দিন আহসান মঞ্জিল বন্ধ থাকে।