PDA

View Full Version : রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছতে পারে মূল্যস্ফীতির হার: আইএমএফ



BDFOREX TRADER
2022-08-28, 12:54 PM
অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতির হারে বিপর্যস্ত দেশগুলো। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ক্রমাগত মুদ্রানীতি কঠোর করে চলেছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) জানিয়েছে, এতে বৈশ্বিক অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। কভিড-১৯ মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। দুই ঘটনা সরবরাহ ব্যবস্থায় অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে। ফলে সম্ভাব্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের পূর্বাভাস দেয়া আরো কঠিন হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে আইএমএফের নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিচালক গীতা গোপীনাথ বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে সামনে এগোতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। চলতি বছরের জুলাইয়ে আইএমএফ দ্বিতীয় বারের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংকুচিত করেছে। এরই মধ্যে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জের ধরে মূল্যস্ফীতির চাপ আরো বেড়ে চলেছে। এতে করে মহামারীর অভিঘাত কাটিয়ে উঠে অর্থনীতিগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া আরো শ্লথ হয়ে পড়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থায় নতুন করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পণ্যদ্রব্যের দামও। পাশাপাশি চীনের লকডাউন পরিস্থিতি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় আরো ইন্ধন জুগিয়েছে। চলতি বছরের জন্য আইএমএফ বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আগামী বছরের জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। গত বছরের জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ছিল ৬ দশমিক ১ শতাংশ। আইএমএফ জানিয়েছে যদি মূল্যস্ফীতির হার এভাবে আরো বেড়ে চলে, তাহলে এ বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে। অন্যদিকে আগামী বছর এ প্রবৃদ্ধির হার ২ শতাংশে পর্যবসিত হবে।
চলতি বছরজুড়ে মূল্যস্ফীতির হার তুঙ্গে থাকবে বলে সতর্ক করেছে আইএমএফ। চলতি বছরের জন্য বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির হার গড়ে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। উন্নত অর্থনীতিগুলোয় এ হার হবে গড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এ হার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার গত চার দশকের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। এর জের ধরে চলতি বছরের জুলাইয়ে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করেছে। এর আগে এ বছরেই আরো তিনবার সুদের হার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। জিসিসি অর্থনৈতিক জোটও তাদের বেঞ্চমার্ক বাড়িয়েছে।
মূল্যস্ফীতির সংকটে নতুন করে ইন্ধন জুগিয়েছে বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এতে অন্যতম প্রভাব ছিল। এতে বৈশ্বিক অর্থনীতি আরো অসহিষ্ণু হয়ে পড়তে পারে। তবে শিগগিরই মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে ধারণা করছে আইএমএফ। এ বিষয়ে গীতা গোপীনাথ বলেন, আমি আশাবাদী যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই তা সম্ভব। তবে কয়েক দশকের সর্বোচ্চে থাকা মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ কাজ নয়। এর জন্য বিশ্ববাজারে পণ্যদ্রব্যের দাম আরো বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ভূরাজনৈতিক অস্থিতরতায় আগে থেকেই বিশ্ববাজারে লাগামহীন পণ্যের দাম। মূল্যস্ফীতির সংকট মোকাবেলা করতে নতুন সংকট তৈরি হওয়া সময়ের দাবি বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
http://forex-bangla.com/customavatars/445422428.jpg

Montu Zaman
2022-08-29, 01:09 PM
অর্থনীতির সবচেয়ে অজনপ্রিয় সূচকটি বিশ্বব্যাপীই আবার ফিরে এসেছে। আইএমএফের প্রথম উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গীতা গোপীনাথ গত শুক্রবার অর্থনীতি নিয়ে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এবারের মূল্যস্ফীতির আচরণ ভিন্ন এবং সহজে তা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। তিনি আরও বলেছেন, অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোর তুলনায় এখন উঠতি অর্থনীতির দেশেই মূল্যস্ফীতি বেশি। অনেকগুলো কারণে এবার মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। মূল কারণ দুটি অতিমারি ও যুদ্ধ। অতিমারির সময় শ্রম সরবরাহ কমে যায় এবং উৎপাদনও হ্রাস পায়। অথচ একই সময়ে দেওয়া হয়েছে প্রণোদনার বিপুল অর্থ, যা মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে। অতিমারির প্রকোপ কমে যাওয়ায় চাহিদা বৃদ্ধি পেতে সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে বৃদ্ধি পায় জ্বালানি তেলের দর। এতে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। গীতা গোপীনাথ বলেছেন, এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়তে পারে, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকেই মুদ্রানীতির সাহায্য নিয়ে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে বলে গীতা গোপীনাথ মনে করেন। পাশাপাশি কমাতে হবে মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশা। কেননা, মূল্যস্ফীতি বাড়বে—এই প্রত্যাশা থাকলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ে।

কী করতে হবে
নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতিবিদ উইলিয়াম ফিলিপস ১৯৫৮ সালে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে বেকারত্বের একটি বিপরীতমুখী সম্পর্কের কথা লিখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অর্থনীতি চাঙা থাকলে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ে, তখন শ্রমের চাহিদাও বৃদ্ধি পায়। এতে মজুরি বাড়বে, জিনিসপত্রের দাম বাড়বে, তবে কমবে বেকারত্ব। মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্বের এই বিপরীতমুখী প্রবণতাকেই ফিলিপসের নাম অনুসারে বলা হয় ‘ফিলিপস রেখা’। বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো রেখাটিকে গুরুত্ব দেয়।
আবার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির জন টেলর মূল্যস্ফীতির সময় সুদের হার বাড়িয়ে বা কমিয়ে অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কথা বলেছিলেন। এ অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা তৈরি হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের চাহিদা কমানোর জন্য সুদের হার বাড়িয়ে দেয়। এতে লোকজন কেনাকাটা কমিয়ে দেন, বিনিয়োগ হ্রাস পায়।
এতে মূল্যস্ফীতির চাপ কমে আসে। আবার অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে অর্থ সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করে। জন টেলরের নাম অনুসারে একে বলা হয় ‘টেলর রুল বা বিধি’।
আইএমএফ বলছে, বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে ফিলিপস রেখা ঠিকমতো কাজ করছে না। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডও এখন চাপ কমাতে টেলর বিধিকেই আগ্রাসীভাবে আঁকড়ে ধরেছে, কমিয়েছে সুদহার। তবে অনেকেরই আশঙ্কা, এতে মন্দা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
এতেও যদি কাজ না হয়, যদি মূল্যস্ফীতি না কমে, কিন্তু মন্দা থেকে যায়, তাহলে বিপদ আরও বেশি। এর নাম স্ট্যাগফ্লেশন, যা ঘটার আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক। সুতরাং সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ে জটিল এক পরিস্থিতিতে পড়ে আছে পুরো বিশ্ব।
http://forex-bangla.com/customavatars/1775417542.jpg