PDA

View Full Version : বৈশ্বিক কর রাজস্ব ব্যবস্থায় হুমকি হয়ে উঠেছে ক্রিপ্টোকারেন্সি?



Rassel Vuiya
2023-07-30, 04:55 PM
http://forex-bangla.com/customavatars/227520015.jpeg
অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বড় হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার।এনক্রিপশন অ্যালগরিদমে তৈরি ডিজিটাল মুদ্রাটিতে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারির উপায় এখনো বের করতে পারেননি বৈশ্বিক আর্থিক খাতের হর্তাকর্তারা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞরা এখন ক্রিপ্টোকারেন্সি ে দেখছেন বিশ্বব্যাপী কর-রাজস্ব ব্যবস্থার জন্য এক বড় ভবিষ্যৎ হুমকি হিসেবে। এ বিষয়ে তাদের ভাষ্য হলো দ্রুত সম্প্রসারণশীল বাজার এবং লেনদেনকারীর পরিচয় গোপন রাখার সুযোগের কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সি ে লেনদেনকে কোনো ধরনের কর ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। এখনও এর ব্যবহার অনেক সীমিত। যত ব্যাপকতা পাবে, এটিকে যথাযথভাবে কর ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা ততই কঠিন হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের কর-রাজস্ব ব্যবস্থার কার্যকারিতা ধরে রাখার পথে বড় এক হুমকি হয়ে উঠতে পারে ক্রিপ্টোকারেন্সি

বৈশ্বিক লেনদেন ব্যবস্থায় ক্রিপ্টোকারেন্সি যাত্রা ২০০৯ সালে। প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে চালু হয় বিটকয়েন। এর পর থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু হয়েছে। যদিও এখনো ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে নিজের আধিপত্য ধরে রেখেছে বিটকয়েন।

আইএমএফের নতুন এক পলিসি পেপারে এ নিয়ে বলা হয়, ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার এখনো অনেক ব্যাপক হয়ে ওঠেনি। বিভিন্ন দেশের সরকারের উচিৎ ডিজিটাল মুদ্রাটির ব্যবহার সীমিত থাকা অবস্থায়ই এতে কর আরোপের উপায় বের করা। কর-রাজস্ব ব্যবস্থার সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি এর ফাঁকফোকরগুলো কমিয়ে আনার জন্যই বিষয়টি এখন দিনে দিনে আরো অপরিহার্য পড়েছে।

এক সময় ক্রিপ্টোকারেন্সি ে দেখা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা এড়িয়ে এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণ-নজরদারির বাইরে থেকে স্বাধীন লেনদেনের উপায় হিসেবে। যদিও এল সালভাদোর ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের মতো কোনো কোনো দেশ এরই মধ্যে বিটকয়েনকে বৈধ মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

আইএমএফের ফিসকাল অ্যাফেয়ার্স ডিভিশনের চার বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, বিশ্বব্যাপী তোলপাড় তুললেও সমালোচকদের চোখে সম্পদ হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি আদতে মূল্যহীন। বরং তারা এটিকে দেখছেন অপরাধ, প্রতারণা ও জুয়ার একটি ফ্রন্ট হিসেবে। একই সঙ্গে এর বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতাও অনেক বেশি। যেমন এক দশক আগেও বিটকয়েনের বিনিময় হার ছিল ২০০ ডলার। ২০২১ সালে তা উঠে দাঁড়ায় ৭০ হাজার ডলারের কাছাকাছি। বর্তমানে তা প্রায় ২৯ হাজার ডলার।

গত বছর দেউলিয়া হয়ে পড়ে বাহামাভিত্তিক ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ ও হেজ ফান্ড এফটিএক্স। সম্প্রতি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ বাইন্যান্স ও কয়েনবেজের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। এ দুই ঘটনা ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে জানিয়ে আইএমএফ বলছে, দেশে দেশে নীতিনির্ধারক মহলেও বিষয়টিতে নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বিষয়টিকে আইনী কাঠামোয় নিয়ে আসার দাবিও।

পরিস্থিতি যাই হোক না কেনো ক্রিপ্টো অ্যাসেটকে এখন কর ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করছেন আইএমএফের বিশেষজ্ঞরা। যদিও এক্ষেত্রে ক্রিপ্টোর শ্রেণিভুক্তিকরণে প্রশ্নটিরও সমাধান হওয়া প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন।

এ বিষয়ে তাদের ভাষ্য হলো কেউ যদি মুনাফার জন্য ক্রিপ্টো বিক্রি করে, তাহলে সেক্ষেত্রে অন্যান্য সম্পদের মতোই মুনাফার ওপর কর আরোপ করতে হবে। আবার নগদ অর্থে ক্রয়ের ক্ষেত্রে যেমনটি হয়ে থাকে, ক্রিপ্টোয় কেনাকাটার ক্ষেত্রেও সেভাবেই বিক্রয় কর বা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করতে হবে। কিন্তু ক্রিপ্টো অ্যাসেটকে কর ব্যবস্থার আওতায় আনতে হলে সবার আগে যে প্রশ্নটির সমাধান হওয়া প্রয়োজন; সেটি হলো— ক্রিপ্টোকারেন্সি ে কি সম্পত্তি নাকি মুদ্রা? ভ্যাট বা বিক্রয় কর আরোপ করতে হলে এটিকে শ্রেণিভুক্ত করতে হবে মুদ্রা হিসেবে। আবার আয়কর আরোপ করতে হলে এটিকে শ্রেণিভুক্ত করতে হবে সম্পদ করতে হবে। ক্রমপরিবর্তনশীলত র কারণে ক্রিপ্টো লেনদেনকে শ্রেণিভুক্ত করা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।

ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারের পরিস্থিতি এখন ক্রমেই পরিবর্তন হচ্ছে। ২০২১ সালে এর বিনিময় হার সর্বোচ্চে উঠেছিল। ওই সময় যদি ক্রিপ্টোর বাজারে মুনাফার ওপর ২০ শতাংশ হারে করা আরোপ করা হতো তাহলে বিশ্বব্যাপী কর-রাজস্ব আহরণ বাড়তো ১০ হাজার কোটি ডলার, যা ওই সময়ের মোট বৈশ্বিক করপোরেট আয়কর রাজস্বের ৪ শতাংশ বা মোট কর আহরণের দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু ২০২১ সালে সর্বোচ্চে ওঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত বৈশ্বিক ক্রিপ্টো বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। সেক্ষেত্রে বর্তমানে এখান থেকে কর রাজস্ব আহরণও অনেকটা কমে আসার কথা ছিল।

আইএমএফ বিশেষজ্ঞদের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান বাজার আকৃতিকে বিবেচনায় নিলে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক ক্রিপ্টো কর রাজস্ব আহরণের আকার হওয়ার কথা বছরে আড়াই হাজার কোটি ডলারের কিছু কম।