Log in

View Full Version : ফেড কি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে?



Rakib Hashan
2023-12-20, 05:25 PM
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) সম্প্রতি সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে আগামী বছর তিনবার সুদের হার কমানোর পূর্বাভাস দিয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ফেড কি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে? ফেডের সিদ্ধান্তের পর ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ (বড় ৩০টি কোম্পানির গড়) সূচক সর্বকালের উচ্চতায় উন্নীত হয়। মার্কিন বন্ডের সুদহার কমে যায়। গাড়ির ঋণ থেকে শুরু করে বাড়ি বন্ধক পর্যন্ত সবকিছুর খরচ কমে যায়। পতনমুখী মূল্যস্ফীতি, নিম্ন বেকারত্ব এবং ক্রমাগত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, সত্যি কি ফেড মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিতেছে?
http://forex-bangla.com/customavatars/568794012.jpg
এর উত্তর জানতে হলে কভিড-১৯ মহামারারীর পূর্বাপর হিসাব করতে হবে। ওই মহামারীর পর মার্কিন অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সময় সরবরাহজনিত সংকটের কারণে দ্রুত মূল্যস্ফীতি ঘটে। ২০২২ সালের মার্চে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়। এর মধ্যে ফেড ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সুদের হার বাড়ানো শুরু করে। পরবর্তী ১৮ মাসে নীতিনির্ধারকরা ফেডের মূল ঋণের সুদের হার ২২ বছরের উচ্চতায় তুলেছেন। ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি গত বছরে ৯ দশমিক ১ শতাংশে উঠেছিল। এটা ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেখান থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ৩ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে এনেছে ফেড। অর্থনৈতিক চিত্র বর্তমানে ইতিবাচক। বেকারত্ব ঐতিহাসিক নিম্ন স্তরের কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে। সার্বিকভাবে মন্দা এড়ানোর পথে রয়েছে মার্কিন অর্থনীতি। ফেড নীতিনির্ধারকরা আত্মবিশ্বাসী যে তাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা সাফল্য অর্জনের পথে। এটাকে একটি উড়োজাহাজের"‘*সফট ল্যান্ডিং’য়ের (শান্তিপূর্ণ অবতরণ) সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।
ফেড আশা করছে যে ২০২৪ সালে মন্থর হওয়ার আগে এ বছর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। এ সুসংবাদ সত্ত্বেও ফেডের লক্ষ্যমাত্রার দুই শতাংশের ওপর রয়েছে মূল্যস্ফীতি, যা এখনো একটা চ্যালেঞ্জ।
ফেড নীতিনির্ধারকরা গত সপ্তাহে সুদের হার স্থির রাখার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। আগামী বছর শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট সুদের হার কমানোর পূর্বাভাস রয়েছে। ফেড চেয়ারপারসন জেরোম পাওয়েল বলেছেন, ‘*ফেডের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা সম্ভবত এ চক্রের সর্বোচ্চ হারে বা কাছাকাছি আছি।’
তিনি জানান, নীতিনির্ধারকরা ফেডের জন্য সুদের হার কমানো শুরু করার জন্য কোন সময়টি"উপযুক্ত"হবে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা নতুন করে সুদের হার বাড়াতে অস্বীকার করেছেন। জেরোম পাওয়েলের এসব মন্তব্য থেকে ফেডের নীতিনির্ধারকদের আত্মবিশ্বাসী মনোভাব ফুটে উঠেছে। তারা মনে করছেন যে মূল্যস্ফীতির লড়াইয়ে তারা জিতেছেন।
জেরোম পাওয়েলের ওই ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে শুরু হয় নানা প্রতিক্রিয়া। নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক বহুজাতিক অ্যাকাউন্টিং সংস্থা কেপিএমজি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডায়ান সোয়াঙ্ক একটি নোটে লিখেছেন, ‘*ফেড মনে করে যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের উত্তর আমেরিকা ম্যাক্রো স্ট্র্যাটেজির প্রধান স্টিভ ইংল্যান্ডার গ্রাহকের উদ্দেশে একটি নোটে লিখেছেন, ‘*ফেডের বিবৃতি এবং অর্থনৈতিক পূর্বাভাস আমাদের বা বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সহনশীল সংকেত প্রদান করেছে।’
মার্কিন অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএমই গ্রুপের তথ্য অনুসারে, আর্থিক বাজারগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে নিশ্চিত হচ্ছে যে ফেড সুদের হারের চুড়ায় অবস্থান করছে। আগামী বছর ছয়বার সুদহার কমানো হতে পারে। যদিও এটি ফেডের নিজস্ব পূর্বাভাসের চেয়ে অতিরিক্ত বলা।
ফেডের সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি ফিরে আসার ঝুঁকি। ইউক্রেন বা গাজায় যুদ্ধের কারণে খাদ্য বা জ্বালানি তেলের দাম যেমন এক দফা বেড়েছে, তেমনি নতুন কোনো সংকট দেখা দিলে মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য ফেডের প্রচেষ্টা ফের ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
জেরোম পাওয়েল স্বীকার করেছেন, ‘*মূল্যস্ফীতি এখনো খুব বেশি। এটিকে নামিয়ে আনার চলমান অগ্রগতি নিশ্চিত নয়। এগিয়ে যাওয়ার পথ অনিশ্চিত।’