PDA

View Full Version : তীব্র চাপে চীনের আর্থিক খাত



Montu Zaman
2023-12-24, 02:59 PM
http://forex-bangla.com/customavatars/291261136.jpg
চীনের অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে দেশটির আর্থিক খাত এখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেইজিংয়ের পক্ষে ক্রমবর্ধমান ঋণের ব্যয় বহন কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এটা চীনের আর্থিক, অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাকে ঝুঁকিতে ফেলছে। চলতি ডিসেম্বরের শুরুতে মুডি’স চীনের ঋণমান স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক করেছে। ২০২১ সালের শুরু থেকে ৫০টির বেশি চীনা প্রপার্টি ডেভেলপার বন্ড খেলাপি হয়েছে। কয়েকটি স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ খেলাপি হওয়ার তথ্য গোপন করার অভিযোগ তুলেছে। দেশের ৬৮টি কোম্পানির মধ্যে সাতটি গত ছয় বছরে ঋণের কিস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটির আর্থিক খাতে দুটি চাপ লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রথমত, কয়েক দশক ধরে তিনটি খাতে (প্রপার্টি, রফতানি ও স্থানীয় সরকার) তীব্র টানাপড়েন চলছে, যা ঋণগ্রহীতাদের জন্য ঋণ পরিশোধ করা কঠিন করে তুলছে। দ্বিতীয়ত, চীনা জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিয়েছে, যা ভোগ, ব্যক্তিগত বিনিয়োগ ও জন্মহারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ সমস্যা আর্থিক খাতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
২০০৭-২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট আগামী বছর চীনে ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা না থাকলেও আর্থিক সংকটের সম্ভাবনা কম। কারণ বেইজিং ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতা উভয়কে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০০৮ সালের লেহম্যান ব্রাদার্সের ঘটনার মূলে ছিল পশ্চিমা ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকদের আস্থার অভাব। ওই সময় এটাকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করা হয়েছিল। চীনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ঋণ দেয়। এর তুলনায় অন্য দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো সামান্য ঋণ দেয়। ২০০৮ সাল থেকে বার্ষিক ঋণ চীনের জিডিপিতে ৩০ শতাংশ শক্তি জুগিয়েছে। এর তুলনায় ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ ছিল জিডিপির ৯ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৫ শতাংশ ও ভারতের ৭ শতাংশ। প্রতি বছর অর্থনীতিতে এত বড় অর্থের জোগান খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি কমিয়েছে। একইভাবে চীনা ঋণের ৯০ শতাংশ রেনমিনবিতে (স্থানীয় মুদ্রা) লেনদেন হয় এবং অভ্যন্তরীণভাবে বিনিয়োগ করা হয়। এ মুদ্রা বিদেশে লেনদেন করা যায় না। ফলে বিদেশে পাচারের প্রশ্নই ওঠে না। বেশির ভাগ আমানত রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোয় সংরক্ষিত থাকে। এভাবে অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থান বজায় রাখে।
এর মানে এই নয় যে চীন তার বর্তমান ঋণ সমস্যা থেকে রক্ষা পাবে। প্রপার্টি খাতের পতন, অন্য দেশে কারখানা স্থানান্তর ও শূন্য-কভিড নীতির কারণে ঋণদাতাদের ক্ষতি হয়েছে। নীতিনির্ধারকরা পিপলস ব্যাংক অব চায়নার মাধ্যমে তারল্য সহায়তা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০২০ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রপার্টি ডেভেলপার, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও স্থানীয় সরকারের জন্য ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এভাবে কর্তৃপক্ষ ব্যাংকগুলোকে সংকটের হাত থেকে রক্ষা করেছে।
অর্থনীতিবিদরা জানান, চীনের ক্রমবর্ধমান ঋণ সমস্যার প্রধান দিক হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ অস্বীকার করা। চীনা কর্তৃপক্ষ ক্ষতিকে যত বেশি অস্বীকার করবে, পরিস্থিতি তত বেশি খারাপ হতে থাকবে। ঋণের প্রকৃত অবস্থা জানলে ব্যাংকগুলো আগে থেকে সতর্ক হতে পারত।