PDA

View Full Version : ২০২৪ সালে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক হবে



SaifulRahman
2023-12-26, 03:46 PM
জ্বালানি তেলের দাম কমছে। ফলে পণ্য উৎপাদন ও পরিবহন খরচ কমবে। এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুতগতিতে কমতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস সঠিক হলে আগামী বছর মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক স্তরে নেমে আসবে। ফলে আগামী বছর বিশ্বব্যাপী ১৫২টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার কমাবে।
অর্থনীতিবিদরা জানান, কভিড-পরবর্তী মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রবণতা অনেক দেশে দেখা দিয়েছে। মূল মূল্যস্ফীতি (খাদ্য ও জ্বালানি বাদে) যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং বেশ কয়েকটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশে নভেম্বরে শেষ হওয়া প্রান্তিকে বার্ষিক ২ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ এসব দেশের গড় মূল্যস্ফীতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি নেমে আসবে। বিশেষজ্ঞরা জানান, মূল্যস্ফীতি কমলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতিশীল হয়। ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহার কমাতে উৎসাহ পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, *ইউরো অঞ্চলে আগামী বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে মূল্যস্ফীতি ১ দশমিক ৩ এবং যুক্তরাজ্যে ২ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসবে। তখন মার্কিন মূল্যস্ফীতি ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি ২ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসবে। মার্কিন কমার্স ডিপার্টমেন্ট জানায়, চলতি বছরের নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ২ দশমিক ৬ শতাংশ। খাদ্য ও জ্বালানি বাদে এটি ছিল ৩ দশমিক ২, যা গত ছয় মাসে বার্ষিক হিসাবে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ।
http://forex-bangla.com/customavatars/938252275.jpg
মার্কিন ফেড, ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি) এবং ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই) সবাই ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের সিনিয়র অ্যাডভাইজার ও বিওইর মানিটারি পলিসি কমিটির সাবেক সদস্য মাইকেল সন্ডার্স বলেছেন, মূল্যস্ফীতি কমার একটা কারণ খাদ্য, জ্বালানিসহ বৈশ্বিক পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোর মুদ্রানীতি প্রয়োগ।৷এক্ষেত্র অঞ্চলভেদে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। যেমন ইউরোজোনে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রায় দ্রুত ফিরে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে শ্রমবাজারে তীব্র চাপ রয়েছে, যা ধীরে ধীরে কমছে। বর্তমানের এ উন্নতিগুলো মূল্যস্ফীতি তৈরির বিপরীত দিক। ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী পণ্য উৎপাদন এবং পরিবহন ব্যাহত হওয়ার পর চাহিদা বেড়ে মূল্যস্ফীতি তৈরি হয়েছিল। এরপর ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে পণ্যের দাম বেড়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতি কয়েক দশকের মধ্যে শীর্ষে পৌঁছেছিল। ইউরোজোনের মূল্যস্ফীতি মূলত রাশিয়ার গ্যাসের অভাবে ভুগছে। এছাড়া কভিড-সময়ে শ্রম খাত ও উৎপাদন স্থবির হয়ে গিয়েছিল। তাই কোথাও কোথাও শ্রমিকদের আর্থিক ঘাটতি পোষাতে মজুরি বাড়ানো হয়েছে, যা সেবা খাতের মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া আবাসন খরচও সেবা খাতের মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নভেম্বরে কনজিউমার প্রাইস ইনডেস্ক (পিসিই) এক বছর আগের চেয়ে ৩ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। আবাসন খরচ বাদ দিলে এটা ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। তবে আবাসন খরচের প্রভাব ইউরোপে অনেক কম হয়েছে।
ইনফ্লেশন ইনসাইটসের প্রতিষ্ঠাতা ওমর শরীফ বলেছেন, ২০২২ সালের শেষের দিকে এবং এ বছরজুড়ে বাধাহীন সরবরাহ চেইন মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দিয়েছে। এটি সম্ভবত আগামী বছর অব্যাহত থাকবে। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহৃত গাড়ির দামের কথা উল্লেখ করা যায়। ২০২৪ সালের গোড়ার দিকে এর দাম আরো কমতে পারে।
জ্বালানি ও পণ্যবাজার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এরই মধ্যে জ্বালানির দাম কমা এবং খাদ্য খরচ স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে। রেনেসাঁ ম্যাক্রো রিসার্চের অর্থনৈতিক গবেষণা প্রধান নীল দত্ত বলেছেন, ‘*জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় আমরা সম্ভবত সামনের মাসগুলোয় খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে পতন দেখতে পাব।’ বিএমও ক্যাপিটাল মার্কেটস ইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডগলাস পোর্টার বলেছেন, ‘*বেশির ভাগ প্রধান অর্থনীতির দেশ ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ধীরগতির প্রবৃদ্ধি দেখতে পাবে। তবে সুদহার হ্রাস, তরল জ্বালানি, খাদ্যের দাম ও স্বাভাবিক সরবরাহ চেইন বিশ্বব্যাপী মন্দা ঠেকিয়ে দেবে।’