PDA

View Full Version : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে মনোযোগ বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের



Tofazzal Mia
2024-02-11, 05:54 PM
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান প্রধান ভোক্তা বাজার ক্রমেই বড় হচ্ছে। এর কারণ হলো দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, জীবনযাপনের মান বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সুযোগের সম্প্রসারণ। এ অঞ্চলের দেশগুলো নিয়ন্ত্রণ নীতি সংস্কার করে বিনিয়োগের পথও সুগম করেছে। সব মিলিয়ে নতুন করে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের নজরে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। http://forex-bangla.com/customavatars/1023520946.jpg প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রযুক্তির মতো ক্রমবর্ধনশীল খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে প্রাইভেট ইকুইটি বিনিয়োগকারীরা। ২০২৩ সালে পাঁচ বছরের মধ্যে এ ধরনের বিনিয়োগ ও চুক্তি ছিল সর্বনিম্নে। কিন্তু চলতি বছর নতুন করে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

মার্কিন ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম জায়ান্ট কেকেআরের একজন নির্বাহী জানান, চলতি বছর কোম্পানিটি এ অঞ্চলে বিনিয়োগ আরো বাড়াবে। কেকেআরের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রধান ও অংশীদার প্রশান্ত কুমার বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিটি দেশের নিজস্ব রীতিনীতি রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির দিকে চালিত হওয়ার বিষয়গুলো একই। এর মধ্যে রয়েছে বৃহৎ, তরুণ ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, দ্রুত বর্ধনশীল মধ্যবিত্ত শ্রেণী, নগরায়ণের সম্প্রসারণ, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ও অভ্যন্তরীণ ভোগের স্থিতিশীল বৃদ্ধি।’ এ অঞ্চলে সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন মিলিয়ে প্রায় ৫৩ কোটি মানুষের বাস। তাদের নিত্যব্যবহার্য প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ চেইন বিবেচনায় রাখার কথা বলেন প্রশান্ত কুমার।
এ অঞ্চলে সম্প্রতি সফলভাবে অবকাঠামো খাতে ৬৪০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেছে কেকেআর। এখন নতুন নতুন বিনিয়োগের দিকে তাদের মনোযোগ। নিউইয়র্কভিত্তিক সংস্থাটি বলছে, এরই মধ্যে ১০টি বিনিয়োগে অর্ধেকেরও বেশি মূলধন বরাদ্দ করেছে তারা। কেকেআর সিঙ্গাপুরে রিটেইল গ্রুপ ভিথ্রিতে বিনিয়োগের জন্য পরিচিত। এ গ্রুপের অধীনে রয়েছে টিডব্লিউজি চা ও বাচা কফির মতো বিলাসবহুল ব্র্যান্ড। এ বিনিয়োগের অধীনে রয়েছে অনলাইন প্রপার্টি প্লাটফর্ম প্রপার্টিগুরু ও সিংটেলের আঞ্চলিক ডেটা সেন্টার। এছাড়া ভিয়েতনামের বৃহত্তম চক্ষু হাসপাতাল চেইন মেডিকেল সাইগন, ফিলিপাইনের বৃহত্তম বেসরকারি হাসপাতাল গ্রুপ মেট্রো প্যাসিফিক হাসপাতাল ও মালয়েশিয়ার সাগরতলের টেলিযোগাযোগ কেবল পরিষেবাদানকারী ওএমএস গ্রুপে বিনিয়োগ করেছে।
কেকেআরের বিনিয়োগের মাধ্যমে পরিচালিত সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে ৫২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিনিয়োগের জন্য ৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলার মূলধন প্রস্তুত ছিল। এদিকে ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে প্রায় ২০০ ব্যবসায়ী ও নির্বাহীর ওপর জরিপ পরিচালিত হয়। ২০২৪ সালে ব্যবসায়িকভাবে অগ্রগতি দেখা যাবে এমন শীর্ষ তিনটি খাত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয় তাদের। এর মধ্যে ৭১ শতাংশ ভোট দিয়েছে প্রযুক্তি খাতে। স্বাস্থ্যসেবা ও শিল্প খাতে আস্থা দেখিয়েছে ৪০ শতাংশ। প্রাকৃতিক সম্পদের পক্ষে মত দিয়েছে ৩৯ শতাংশ। জ্বালানি ও অবকাঠামো খাত ২৯ শতাংশ, আর্থিক পরিষেবা ২৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম অলটারনেটিভ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট হিসেবে পরিচিত ব্ল্যাকস্টোনের ব্যবস্থাপনায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিনিয়োগের জন্য নতুন সুযোগ খুঁজছে। মূলত প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, ভোক্তা ও আর্থিক পরিষেবা খাতকে লক্ষ্য করে ব্ল্যাকস্টোন। ২০২২ সালে সিঙ্গাপুরের যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক ইন্টারপ্লেক্সকে ১৬০ কোটি ডলারে অধিগ্রহণ করে তারা। আইনি সংস্থা নর্টন রোজ ফুলব্রাইট ও আর্থিক ডাটা কোম্পানি মার্জারমার্কেটের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যমান ও নিয়ন্ত্রকদের সহজ নীতির কারণে ২০২৪ সালে এশিয়ায় ব্যবসায়িক চুক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। গত ৩০ জানুয়ারির এ প্রতিবেদন অনুসারে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাত এখন বিনিয়োগকারীদের জন্য জনপ্রিয় লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। অর্ধেকেরও বেশি বড় প্রাইভেট ইকুইটি সংস্থা এ ধরনের ব্যবসা অধিগ্রহণের জন্য জরিপ করেছে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বেইন অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার টম কিডের মতে, ২০২৪ সালে সুদের হার কমলে তহবিল গঠনের পরিবেশ আরো স্থিতিশীল হবে। এতে আর্থিক সংস্থান ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন আরো সহজ হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ২০২০ সালের শেষের দিকে ও পরের বছরে ব্যবসায়িক চুক্তির ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড হয়। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে তা কমতে থাকে। তেমন ব্যবসায়িক ঢেউয়ের পুনরাবৃত্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম হলেও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদী টম কিড। তিনি জানান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিশেষ করে ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন নতুন করে মনোযোগ কাড়ছে। এখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্টের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। আর এ বাজারে স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো ও ভোক্তা খাত এগিয়ে থাকবে।
জাপানকে বাদ দিলে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রাইভেট ইকুইটি এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বিনিয়োগ ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে ৩০ শতাংশ কমে ২ হাজার ৫০৮ কোটি ডলার হয়েছে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্সের তথ্য অনুসারে, বছরওয়ারি হিসেবে এ বিনিয়োগ পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। চুক্তির সংখ্যাও পাঁচ বছরে সর্বনিম্নে নেমে আসে। ২০২২ সালে ২২১টি চুক্তি হয়, যা পরের বছরে ২১০-এ নেমে আসে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রাইভেট ইকুইটি বিনিয়োগের পতনের জন্য সুদের হার বৃদ্ধিকে সামনে রাখা হয়। এর সঙ্গে চীনের ইকুইটি কার্যকলাপকে যোগ করেন গবেষণা ও বিশ্লেষণী সংস্থা অ্যাকুইটি নলেজ পার্টনার্সের সহযোগী পরিচালক অম্বরীশ শ্রীবাস্তব। তিনি জানান, ২০২৪ সালে ডিজিটাল প্রযুক্তি, আর্থিক পরিষেবা, অবকাঠামো এবং খুচরা ও ভোক্তা খাতকে লক্ষ্য করে পরিকল্পনা নির্ধারণ করছে বেসরকারি ইকুইটি সংস্থাগুলো।
বহুজাতিক প্রাইভেট ইকুইটি ফার্ম ইওয়াইয়ের অন্যতম কর্মকর্তা লুক পাইস বলেন, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ব্যবসায়িক চুক্তি শক্তিশালী রূপ নিতে শুরু করেছে। এখানে বিনিয়োগের জন্য পরিকল্পিত বেসরকারি মূলধনের পরিমাণ আনুমানিক ৪৮ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।