PDA

View Full Version : কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ডিজিটাল মুদ্রায় যুক্ত হতে সুইফটের নতুন প্লাটফর্ম



SumonIslam
2024-03-27, 06:39 PM
http://forex-bangla.com/customavatars/1891248395.jpg
বৈশ্বিক আর্থিক লেনদেনে ডিজিটাল মুদ্রার প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি রমরমা এ যুগে নিজস্ব মুদ্রার ডিজিটাল সংস্করণ তৈরিতে নজর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংক এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেও দিয়েছে। এ রূপান্তরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নতুন একটি প্লাটফর্মের উদ্যোগ নিয়েছে বৈশ্বিক ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় যুক্ত মেসেজিং নেটওয়ার্ক সুইফট। এক-দুই বছরের মধ্যে নতুন এ প্লাটফর্ম চালু হবে।
সুইফট শব্দটির অর্থ হলো সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন। এটি মূলত দ্রুত আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পাঠানো বার্তা অত্যন্ত সুরক্ষিত থাকে। পাশাপাশি এটি বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে ব্যাংকগুলো অনেক বড় অংকের অর্থ অতি দ্রুত লেনদেন করতে পারে। অন্যদিকে আর্থিক ব্যবস্থাকে ডিজিটাল মুদ্রায় রূপ দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি বা সিবিডিসির দিকে এগোচ্ছে।
বৈশ্বিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৯০ শতাংশ মুদ্রার ডিজিটাল সংস্করণ নিয়ে কাজ চলছে। বিটকয়েন ও অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি দিকে সারা বিশ্বে আগ্রহ বাড়ছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে দেশগুলো পিছিয়ে থাকতে চায় না। মূলত প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে সিবিডিসি এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ রূপ নিতে পারেনি। লেনদেনের পুরো প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতার কাজটি করতে চায় সুইফট।
সম্প্রতি সুইফটের উদ্ভাবন বিভাগের প্রধান নিক কেরিগান জানান, নতুন প্লাটফর্মের বিষয়ে ছয় মাসের ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সেটলমেন্ট প্লাটফর্মগুলোর ৩৮ সদস্যের একটি দল। এখন পর্যন্ত এটি ছিল সিবিডিসি ও টোকেনাইজড সম্পদ নিয়ে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণে বৃহত্তম কোনো পর্যালোচনা।
প্রযুক্তি ও প্রটোকলের দিক থেকে দেশ ভেদে সিবিডিসি আলাদা। কিন্তু কার্যক্রমের দিক থেকে সামষ্ঠিক ভূমিকা রয়েছে। এ কারণে লেনদেনে বিচ্ছিন্নতার যে ঝুঁকি থাকে তা হ্রাসে কাজ করছে সুইফট। ট্রায়ালে দেখা যায়, জটিল বাণিজ্য বা বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনে সুইফট প্লাটফর্ম ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে স্বয়ংক্রিয় লেনদেনের গতি বাড়ে, খরচও কমানো সম্ভব।
সিবিডিসির মাধ্যমে ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ডিজিটালি লেনদেন করতে পারবে। সুইফটের নতুন প্লাটফর্ম চালু হলে এটি হবে ব্যাংকগুলোর বৈশ্বিক সংযোগ বিন্দু, যার মাধ্যমে সহজে ডিজিটাল মুদ্রায় লেনদেন করা যাবে।
ট্রায়ালে দেখা যায়, ব্যাংকগুলো নিজেদের বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করে সুইফটের এ প্লাটফর্মের সঙ্গে সফলভাবে যুক্ত হতে পারবে। নিক কেরিগান জানান, সুইফটের নতুন প্লাটফর্ম চালুর জন্য ১২-২৪ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। তবে সুইফটের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো অনেকটা নির্ভর করছে বড় অর্থনীতির সিবিডিসির ওপর। কারণ তাদের ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থাপনা বিলম্বিত হলে সময়সীমা পাল্টে যেতে পারে।
বাহামা, নাইজেরিয়া ও জ্যামাইকার মতো দেশে এরই মধ্যে সিবিডিসি চালু করেছে। ই-ইউয়ানের ট্রায়ালে ভালো ফল পেয়েছে চীন। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ডিজিটাল ইউরো ওয়ান চালুর পথে রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর নিষ্পত্তিকারী ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটলমেন্ট একাধিক আন্তঃসীমান্ত ট্রায়াল চালাচ্ছে।
সুইফটের প্রধান সুবিধা হলো এর বিদ্যমান নেটওয়ার্ক দুই শতাধিক দেশে ব্যবহারযোগ্য। ১১ হাজার ৫০০-এর বেশি ব্যাংক ও তহবিলকে সংযুক্ত করে প্রতিদিন ট্রিলিয়ন ডলার লেনদেন হচ্ছে এ চ্যানেলে। অবশ্য ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের কারণে রাশিয়া থেকে সুইফট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সুইফটের সর্বশেষ ট্রায়ালে জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, চেক প্রজাতন্ত্র ও থাইল্যান্ডসহ বেশকিছু দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যুক্ত ছিল। এইচএসবিসি, সিটি ব্যাংক, ডয়েচে ব্যাংক, সোসাইট জেনারেল, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও সিএলএস এফএক্স সেটলমেন্ট প্লাটফর্মসহ চীন থেকে অন্তত দুটি ব্যাংক ট্রায়ালে অংশ নেয়।
বিশ্বে প্রতিনিয়ত ডিজিটাল বা টোকেনাইজড সম্পদের চাহিদা বাড়ছে। বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) পূর্বাভাস অনুসারে নিক কেরিগান জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদ টোকেনাইজড হতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় স্টক ও বন্ডের মতো সম্পদগুলো ডিজিটাল চিপে রূপান্তর হবে ও রিয়েল-টাইমে ট্রেডে অংশ নিতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘*আমরা যদি বড় সংখ্যক সিবিডিসি নেটওয়ার্ককে সুইফটের সঙ্গে যুক্ত করতে পারি, তবে এটি লেনদেনের জন্য বড় বিকল্প হয়ে উঠবে।’