Log in

View Full Version : বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়াতে পারে বাণিজ্যযুদ্ধ ও দুর্বল প্রবৃদ্ধি



LIMAFX
2024-12-26, 06:09 PM
http://forex-bangla.com/customavatars/2045019958.jpg
চলতি বছরে বৈশ্বিক অর্থনীতি নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মাঝে প্রবৃদ্ধির গতি অব্যাহত রেখেছে। এ সময় প্রবৃদ্ধি অনেকটাই নির্ভর করছিল উচ্চ সুদহার ও মূল্যস্ফীতির ভারসাম্য, বাণিজ্যযুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রভাব কোন দেশ কীভাবে কাজে লাগিয়েছে তার ওপর। বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি বাণিজ্যযুদ্ধ, ধীর প্রবৃদ্ধি ও ভূরাজনৈতিক ঝুঁকির মুখোমুখি হতে পারে। আনাদোলুর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় অনেক দেশ সাশ্রয়ী ঋণ ও ভোক্তা ব্যয় উৎসাহিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু মূল্যস্ফীতির কারণে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অনেক দেশ মুদ্রানীতির শিথিল করার পদক্ষেপ থেকে মুখে ফিরিয়ে নিয়েছে। যার প্রভাব প্রড়েছে সুদহার কমানোর প্রবণতায়।
গত নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও বিজয়ী হওয়ার পর দেয়া একাধিক ঘোষণাকে পূর্বাভাসের জন্য সামনে রাখছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুত অতিরিক্ত শুল্ক ২০২৫ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা ফিচ রেটিংসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান কোলটনের মতে, আগামী বছর মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হতে পারে এবং শুল্কের প্রভাবে চীনের রফতানি কমতে পারে। তবে ইউরোজোনে মাঝারি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগামী বছর ২ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে, যা ২০২৪ সালের ২ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কম।’
কোলটন পূর্বাভাসে আরো যোগ করেন, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমবে। তবে মার্কিন ভোক্তা ব্যয় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি গতি পেতে পারে। ফিচ রেটিংস ২০২৫ সালের জন্য মার্কিন প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১ দশমিক ৬ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত করেছে।
তিনি সতর্ক করেন, কার্যকর হওয়া শুল্ক ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। মার্কিন সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপের মাঝে অন্যরাও মাঠ ছেড়ে দেবে না। চীন, ইউরোপ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক অংশীদারদের পাল্টা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে এবং বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়াতে পারে।
ডেমোক্র্যাটদের তুলনায় রিপাবলিকানরা অভিবাসনের বিষয়ে কঠোর। বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্রায়ান কোলটন বলেন, ‘অভিবাসনের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ মার্কিন শ্রম বাজারের সম্প্রসারণ হ্রাস করে মূল্যস্ফীতিতে বাড়তি চাপ যোগ করতে পারে। এটি ফেডের সুদহার কমানোর গতিকে প্রত্যাশার তুলনায় সংকুচিত করতে পারে।’
কোলটন বলেন, ‘*ইউরোজোনে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির ফলে ২০২৫ সালে ভোক্তা ব্যয়ে একটি কিছুটা পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও এটি প্রত্যাশার তুলনায় দুর্বল হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চীনের ওপর ব্যাপক শুল্ক বৃদ্ধি আরোপ করবে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ২০২৫ ও ২০২৬ সালে চীনের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের তুলনায় কমতে পারে। তবে চীনের অর্থনীতিতে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব প্রশমিত করতে রাজস্ব নীতিতে আরো আক্রমণাত্মক শিথিলতা আরোপ করতে পারে। এ প্রত্যাশা পূর্বাভাসকে সামান্য পরিমার্জন করতে পারে।’
এদিকে যুক্তরাজ্যভিত্তি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চের (এনআইইএসআর) প্রধান অর্থনীতিবিদ আহমেত ইহসান কায়ার মতে, ২০২৫ সালে উন্নত দেশগুলোয় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ সুদহার স্থিরভাবে কমছে।
তার পূর্বাভাস অনুসারে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার ৩ দশমিক ২৫ থেকে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে কমাবে, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) ২ দশমিক ২৫ ও ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (বিওই) ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশে কমিয়ে আনবে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, শুল্ক ও অভিবাসন ছাড়াও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিরক্ষামূলক নীতি ও কর হ্রাস প্রবৃদ্ধিকে সমর্থন করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের প্রতিরক্ষামূলক বাণিজ্য নীতিকে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও প্রবৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বলে মনে হচ্ছে।’
আহমেত ইহসান কায়া বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কয়েক দফা শুল্কহার ঘোষণা করেছেন এবং সেগুলো কীভাবে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে সামনে আমরা দেখব। আমাদের গবেষণা বলছে, যদি ট্রাম্পের শুল্ক ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন হয়, তবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কম হতে পারে। আগামী বছরের জন্য আমাদের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ দশমিক ২ শতাংশ।’
কায়া উল্লেখ করেন, মহামারীর পর উন্নত দেশগুলোয় দ্রুত ঋণের বৃদ্ধি ঘটেছে। জাতীয় ঋণের বোঝা কমাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ক্ষেত্রে বড় ধরনের আর্থিক সমন্বয় প্রয়োজন। ইইউর নতুন কাঠামো দেশগুলোকে সরকারি খাতে সঞ্চয় বৃদ্ধি এবং কর বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করছে, যা সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। উদাহরণ হিসেবে ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা উল্লেখ করেন এ অর্থনীতিবিদ।
আহমেত ইহসান কায়ার বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মনোযোগ পাবে চীনের কাঠামোগত সমস্যা এবং সুরক্ষাবাদী নীতি, বাণিজ্যযুদ্ধের মতো বিষয়, যা উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স ৫ ডিসেম্বর এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘অর্থনৈতিক উদ্বেগ, অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ, কৌশলগত জোট ও বাণিজ্য সমস্যা’ আগামী বছরের বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রধান বিষয় হবে।