Log in

View Full Version : ট্রাম্পের শুল্কের আঘাত: সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো



Montu Zaman
2025-04-22, 04:03 PM
২ এপ্রিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প বৈশ্বিক বাণিজ্যিক খাতে আরেকটি ধাক্কা দেন, যখন তিনি প্রত্যাশার চেয়েও কঠোর এক নতুন শুল্ক তালিকা প্রকাশ করেন। এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করা সব দেশের ওপর ১০% শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে, আর ৬০টিরও বেশি দেশের জন্য শুল্ক হার আরও বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা গেছে চীনের ওপর—বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে আরও ৩৪% যোগ করে মোট শুল্ক এখন ৫০%, কিছু ক্ষেত্রে তা ৬৫% পর্যন্ত পৌঁছেছে। তবে কিছু দেশ এর চেয়েও কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। চলুন দেখে নিই কোন কোন দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে।

লেসোথো
http://forex-bangla.com/customavatars/1765185824.jpg
আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের ছোট দেশ লেসোথো সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থানে রয়েছে: নতুন বাণিজ্য কাঠামোর আওতায় দেশটির ওপর ৫০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে—যা বর্তমানে আরোপিত সর্বোচ্চ হার। ২০২৪ সালে লেসোথোর অর্থনীতি প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রে $২৪০ মিলিয়ন মূল্যের পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল ছিল, যার প্রায় পুরোটাই আমেরিকান বাজারমুখী। এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে আফ্রিকারন গ্রোথ অ্যাড অপরচুনিটি অ্যাক্ট (AGOA)–এর সুবিধা কার্যত বাতিল হয়ে গেছে, এই চুক্তির মাধ্যমে আগে যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার দিত। এর ফলে লেসোথোতে বেকারত্বের হার বৃদ্ধির, শিল্প উৎপাদন হ্রাস এবং বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে ধস নামার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

কম্বোডিয়া
http://forex-bangla.com/customavatars/1316191481.jpg
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতির দেশ কম্বোডিয়া এখন ৪৯% শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে—যা দেশটির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রই দেশটির সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার, যেখানে প্রায় ৩৮% রপ্তানি করা হয়। ২০২৪ সালে আমেরিকায় কম্বোডিয়ার রপ্তানির পরিমাণ ছিল $৯.৯ বিলিয়ন, যার বেশিরভাগই হচ্ছে পোশাক, জুতো ও ভ্রমণ সামগ্রী। আকস্মিক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে দেশীয় উৎপাদকদের লাভজনকতা হুমকির মুখে পড়েছে, শ্রমনির্ভর খাতে কর্মসংস্থান হ্রাসের ঝুঁকি, আর রপ্তানি আয় সংকুচিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা যেখানে ইতোমধ্যেই দুর্বল, সেখানে এই নতুন চাপ দেশটির অর্থনৈতিক গতিশীলতা কমিয়ে দিতে পারে।

লাওস
http://forex-bangla.com/customavatars/1027988404.jpg
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র দেশ লাওসের ওপর ৪৮% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা এর শ্রমনির্ভর রপ্তানি খাতের জন্য ভয়াবহ হুমকি। যুক্তরাষ্ট্রে লাওসের মূল রপ্তানির মধ্যে রয়েছে পোশাক, কাঠ ও কৃষিজ পণ্য। দেশটির আয় অত্যন্ত কম এবং অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা সীমিত হওয়ায় এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া কঠিন হবে। নতুন শুল্কের ফলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে এবং দারিদ্র্যের হার আরও বাড়তে পারে—বিশেষ করে যখন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কমছে এবং ওই অঞ্চলে চীনের প্রভাব বাড়ছে।

মাদাগাস্কার
http://forex-bangla.com/customavatars/1238977923.jpg
আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত দ্বীপ রাষ্ট্র মাদাগাস্কার এখন ৪৭% শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে, যা দেশটির প্রধান রপ্তানি খাতগুলো—যেমন পোশাক, ভ্যানিলা ও খনিজ সম্পদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমে $৬৬৯ মিলিয়নে নেমে আসে, আর নতুন করে শুল্ক আরোপ এই পতন আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। উল্লেখযোগ্যভাবে, মাদাগাস্কারের প্রায় অর্ধেক রপ্তানি আগে AGOA-র অধীনে শুল্কছাড় সুবিধা পেত, কিন্তু নতুন শুল্ক সেই সুবিধাগুলো কার্যত বাতিল করে দিচ্ছে। দেশটিতে এখন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে চাপ, বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঝুঁকি প্রবল।

ভিয়েতনাম
http://forex-bangla.com/customavatars/120768394.jpg
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে গতিশীল অর্থনীতিগুলোর একটি ভিয়েতনাম, এখন ৪৬% মার্কিন শুল্কের মুখোমুখি হয়েছে, যা দেশটির জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। শুল্কের লক্ষ্যবস্তু হলো হালকা শিল্পপণ্য, ইলেকট্রনিক্স এবং আসবাবপত্র—যার অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারমুখী। ৩ এপ্রিল দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন শুল্ক সংক্রান্ত শর্ত পুনরায় আলোচনার জন্য একটি নীতিগত প্রতিক্রিয়া প্রস্তুত করতে মন্ত্রিপরিষদের শীর্ষ সদস্যদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। হ্যানয় এর আগে মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক হ্রাস করেছিল, তবে সেই সদিচ্ছা ও ছাড় ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানে সামনে যথেষ্ট ছিল না।