Log in

View Full Version : মধ্যপ্রাচ্য সংকট: বৈশ্বিক যুদ্ধের পূর্বাভাস



Rassel Vuiya
2025-06-17, 07:36 PM
http://forex-bangla.com/customavatars/214812667.jpg
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী দেশ ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে মিসাইল সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। গতকাল কানাডার G7 সম্মেলন থেকে হঠাৎ করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রস্থান এই জল্পনা সৃষ্টি হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল–ইরান সংঘাতে আরও সরাসরিভাবে জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো জোর দিয়ে বলছেন, এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান হতে হবে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কে. লেভিট সোমবার জানান, ট্রাম্প "অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য" ওয়াশিংটনে ফিরে গেছেন, তবে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ব্যাখ্যা সংশোধন করে সরাসরি মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির সঙ্গে তার প্রস্থানের সম্পর্ক স্থাপন করেন। মার্কেটের অনেক ট্রেডার এটিকে সংকটের আরও গভীরতর পর্যায়ে প্রবেশের ইঙ্গিত হিসেবে দেখেছে, যেখানে উভয় পক্ষ একে অপরের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে আঘাত হানছে, ফলে জল্পনা বেড়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের আঞ্চলিক সহযোগীকে আরও জোরালোভাবে সহায়তা করতে পারে। অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেকে নিরপেক্ষ এবং দূরে রাখার কৌশল অবলম্বন করছেন বলে দাবি করছেন, যা ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার নেতিবাচক প্রভাব আরও বাড়িয়ে তুলছে। এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, যেসব জ্বালানিখাতের শেয়ার এবং অপরিশোধিত তেলের মূল্যের পূর্বে কিছুটা কারেকশন হয়েছে, তা আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। সামরিক সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে এবং তীব্রতা আরও বাড়লে—বিশেষত যদি তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে বা উপকূলের সমুদ্রপথ অবরোধ করে (বিশেষ করে যদি পশ্চিমা শক্তিগুলো সরাসরি জড়িয়ে পড়ে)—তবে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি $100, $150 বা তার চেয়েও বেশি হয়ে যেতে পারে। এটি পশ্চিমা অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের উপর তীব্রভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ফেডারেল রিজার্ভকে আবার সুদের হার কমাতে বাধ্য করতে পারে, যা ইতোমধ্যেই ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে এবং মার্কিন অর্থনীতিকে 1970–80 এর দশকের দ্বিঅঙ্কের মূল্যস্ফীতির যুগে ফিরিয়ে নিতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, মার্কিন ডলার "নিরাপদ বিনিয়োগ" হিসেবে অবস্থান হারাতে পারে এবং ডলার-নির্ভর অ্যাসেটে বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ কমে আসবে। সামনের সারিতে থাকবে বিশাল মার্কিন জাতীয় ঋণ, যা ওয়াশিংটনের পক্ষে বিদেশি ঋণদাতাদের ঋণের অর্থ ফেরত দেওয়া প্রায় অসম্ভব করে তুলবে। এই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিরসনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে বিশ্বের আরও অনেক দেশ এতে জড়িয়ে পড়তে পারে এবং এর পরিণতিতে একটি নতুন বৈশ্বিক যুদ্ধ শুরু হতে পারে—যার ফলাফল হতে পারে চরম ধ্বংসাত্মক। আজ মার্কেট থেকে কী প্রত্যাশা করা যায়? আজ বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল সেলস বা খুচরা বিক্রয় প্রতিবেদনের দিকে নজর রাখছে। তবে, এটা মনে রাখা জরুরি যে মার্কেটের ট্রেডারদের পুরো মনোযোগ এখনো মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির দিকে কেন্দ্রীভূত রয়েছে। সেখানে চলমান ঘটনাবলিই ঝুঁকির মাত্রা এবং অ্যাসেট ফ্লো নির্ধারণ করছে। আপাতত বিনিয়োগকারীরা এখনো আশা করছে যে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব, যার ফলে এখন পর্যন্ত স্বর্ণ ও তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়েনি। স্টক, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং মার্কিন ডলার এখনো সংকুচিত রেঞ্জে কনসোলিডেশন করছে। এই পরিস্থিতি সম্ভবত ফেডের আগামীকালকের নীতিনির্ধারণী সংক্রান্ত বৈঠকের সিদ্ধান্ত আসার পরেও অব্যাহত থাকবে, যেহেতু জেরোম পাওয়েলের কাছ থেকে অভ্যন্তরীণ বা বহিঃর্বিশ্ব পরিস্থিতি সংক্রান্ত অবস্থানে নতুন কোনো বার্তা আসার সম্ভাবনা নেই। (https://www.instaforex.com/bd/forex_analysis/413927)

SUROZ Islam
2025-06-18, 10:03 AM
মূল্যস্ফীতি ও মন্দার বৈশ্বিক টানাপড়েন আরো জটিল হতে পারে!
http://forex-bangla.com/customavatars/264294286.jpg
মার্কিন শুল্কনীতির চলমান অনিশ্চয়তার মাঝে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন উত্তেজনা যোগ করেছে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি। এতে একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি ও মন্দা দুই আশঙ্কাই তীব্র হয়েছে। এ টানাপড়েনে গোটা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের। গত শুক্রবার ইরানের একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করে ইসরায়েল। এর জবাবে থেমে থাকেনি তেহরানও। ইরানের হামলায় বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছে তেল আবিব। এখন পাল্টাপাল্টি এ হামলার ঘটনায় জ্বালানি তেল থেকে শুরু করে বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে নতুন অস্থিরতা যোগ হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের নতুন এ উত্তেজনায় মূল্যস্ফীতি ও মন্দার মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো সম্প্রসারণ হতে পারে। কারণ মূল্যস্ফীতি কমাতে গেলে সুদহার বাড়াতে হয়, যা ব্যয়সংকোচন ঘটায় এবং তা মন্দাকে আরো বাড়িয়ে তোলে। অন্যদিকে মন্দা ঠেকাতে গেলে সুদহার কমিয়ে খরচ ও বিনিয়োগ বাড়াতে হয়। কিন্তু তাতে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যায়। এ অনিশ্চিত পরিস্থিতির পেছনে প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে জ্বালানি তেল।
বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, চলমান এ সংঘাত আরো কতদিন চলবে এবং এটি বৈশ্বিক সম্পদমূল্যের ওপর কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে গভীর অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে প্রধান উদ্বেগ হলো হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। সেখানে অচলাবস্থা তৈরি হলে বিশেষ করে উৎপাদন খাতে বড় ধরনের সরবরাহ ঝাঁকুনি দেখা দিতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে হরমুজ প্রণালি হয়ে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও পরিশোধিত পণ্য গেছে বিভিন্ন গন্তব্যে, যা বৈশ্বিক জ্বালানি তেল বাণিজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ। বিপুল এ রফতানির মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই এশিয়ার উদ্দেশে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল চীন, ভারত ও জাপানের মতো বড় আমদানিকারক দেশ।
সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছে, হরমুজ প্রণালিতে যদি দীর্ঘস্থায়ী কোনো সংকট তৈরি হয়, তাহলে শুধু সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কুয়েত, ইরাক ও কাতারের মতো প্রধান উপসাগরীয় দেশগুলোর রফতানি ব্যাহতই হবে না বরং পারস্য উপসাগরেই থাকা বিশ্বের অধিকাংশ উদ্বৃত্ত উৎপাদন সক্ষমতাও ব্যবহারযোগ্য থাকবে না।
অন্যদিকে এলএনজি বাজারের অবস্থা হবে আরো সংবেদনশীল। কাতার ও ইউএই থেকে রফতানীকৃত সব এলএনজি হরমুজ প্রণালি অতিক্রম করে সরবরাহ হয়। আইইএর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম ১০ মাসে এ রুট দিয়ে ৯০ বিলিয়ন ঘনমিটার এলএনজি পরিবহন হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী এলএনজি বাণিজ্যের ২০ শতাংশ। এ সরবরাহের প্রায় ৮০ শতাংশ এশিয়ায় এবং ২০ শতাংশ ইউরোপে যায়। ফলে যদি সরবরাহ ব্যাহত হয়, তবে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে।
এখন জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের এ মূল্যবৃদ্ধি এবং উত্তেজনাজনিত অনিশ্চয়তা মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকের ওপর নেতিবাচক চাপ ফেলতে পারে।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আদর্শ ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ১১ দশমিক ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৭৩ ডলার ৭০ সেন্টে নিয়ে তুলেছে, যা ২০২২ সালের ৩ অক্টোবরের পর থেকে এক সপ্তাহে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধি।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য বেড়েছে। ডাচ ভার্চুয়াল ট্রেডিং হাব টিটিএফে জুলাইয়ের চুক্তির ভিত্তিতে প্রতি মেগাওয়াট-ঘণ্টা গ্যাসের দাম ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৩৯ দশমিক ১ ইউরো বা ৪৫ ডলার ৩৪ সেন্টের সমতুল্য।
এ পরিস্থিতিতে জার্মানির বুন্দেস ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জোয়াকিম নাগেল সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের ফলে জ্বালানি তেলের দামে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়লেও দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব এখনো অনিশ্চিত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালিতে যদি বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়, তাহলে এটি মহামারীর পর বিশ্বের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি রুদ্ধ করতে পারে।
চলমান সংঘাতে ১৯৭৩ সালের মতো জ্বালানি তেল সংকটের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে। ওই বছরের অক্টোবরে মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের ছয়দিনের যুদ্ধে দখল করা ভূখণ্ড থেকে সরে যেতে অস্বীকার করলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তখন মিসর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব দেশগুলো সিনাই উপদ্বীপ ও গোলান মালভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য হামলা চালায়।
এরপর কুয়েতে একত্রিত হয়ে পেট্রোলিয়াম রফতানিকারক আরব দেশগুলোর সংগঠন ওএপিইসি ইসরায়েল ও তার মিত্রদের লক্ষ্য করে জ্বালানি তেল নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ওএপিইসি জোটভুক্ত দেশগুলো প্রতি মাসে জ্বালানি তেল উৎপাদন ৫ শতাংশ করে কমানোর ঘোষণা দেয়। তাদের শর্ত ছিল ইসরায়েলকে দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ওই নিষেধাজ্ঞার ফলে জ্বালানি তেলের দাম ৪০০ শতাংশ বেড়ে যায়। এতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রবল ধাক্কা লাগে। জ্বালানি তেলনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থার কারণে এ সময় শিল্পোন্নত দেশগুলো বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র চরম সংকটে পড়ে। তখন মূল্যস্ফীতি চরমে ওঠে এবং পশ্চিমা অর্থনীতিগুলোয় পণ্য ঘাটতি ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় মার্কিন বড় গাড়ি নির্মাতারা উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এ সুবিধা নিয়ে জাপানি অটো নির্মাতারা ছোট ইঞ্জিনযুক্ত গাড়ির মাধ্যমে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পেয়ে যায়। এরপর জ্বালানি তেল সাশ্রয়ের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৪ সালে মহাসড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৯০ কিলোমিটার বা ৫৫ দশমিক ৯ মাইল নির্ধারণ করে। বিভিন্ন কোম্পানি বিকল্প জ্বালানি তেলের উৎস খুঁজতে শুরু করে এবং কয়লা ও পারমাণবিক শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
সব মিলিয়ে ১৯৭৩-৭৪ সালের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সময় নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হয়।