Log in

View Full Version : ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারের বৃহৎ সূচকগুলো



Rakib Hashan
2025-10-16, 06:40 PM
http://forex-bangla.com/customavatars/1953720517.jpg
গত সপ্তাহে বড় ধরনের পতনের মধ্য দিয়ে গেছে বৈশ্বিক শেয়ারবাজার সূচকগুলো। তবে সেখান থেকে খানিকটা পুনরুদ্ধার হয়েছে গতকাল। এতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের মন্তব্য ও ওয়াল স্ট্রিটে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী আয়। একই সময়ে ইউরোপের বাজারে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বৃহৎ বাজারমূল্যের একটি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন। এছাড়া ডলারের বিনিময় হার অন্যান্য প্রধান মুদ্রার বিপরীতে কিছুটা দুর্বল হয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যায়। বিশেষ করে এপ্রিলের পর রেকর্ড সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছায় শীর্ষ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার, যার প্রভাব পড়ে বিশ্বব্যাপী। এরপর চলতি সপ্তাহের শুরুতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য উত্তেজনার মাঝে বাজারে বড় ধরনের পতন দেখা যায়।
ফ্রান্সভিত্তিক বিশ্বের বৃহত্তম বিলাসবহুল পণ্য কোম্পানি এলভিএমএইচ মঙ্গলবার তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শক্তিশালী আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এরপর কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১২ শতাংশ। এলভিএমএইচের আর্থিক প্রতিবেদনের প্রভাব ফুটে উঠেছে ইউরোপের বাজারে। গতকাল ইউরোপীয় স্টক্স ৬০০ সূচক বেড়েছে দশমিক ৭ শতাংশ। ফরাসি শেয়ারবাজার সূচক ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী। জার্মানির ডিএএক্স সূচক দশমিক ১ শতাংশ বাড়লেও যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক কমেছে দশমিক ৩ শতাংশ।

গতকাল এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে জাপান বাদে এমএসসিআই সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ১ শতাংশ। টোকিওর নিক্কেই ২২৫ ও হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ করে। চীনের মূল ভূখণ্ডের সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১ দশমিক ২ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী ছিল। সামস্যাং ইলেকট্রনিকসের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রেকর্ড আয়ের পূর্বাভাসের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক ২ দশমিক ৭ শতাংশ লাফ দিয়েছে। এছাড়া তাইওয়ানের তাইএক্স সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ।

গত মাসে চলতি বছরে প্রথমবারের মতো সুদহার কর্তন করে ফেড। একই সঙ্গে বছরের বাকি সময়ে আরো দুই দফা কর্তনের আভাস দেয়া হয়। তবে পরবর্তী সুদহার কর্তনের পূর্বশর্ত হিসেবে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার কথা বলেছিলেন ফেডের নীতিনির্ধারকরা। এ অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতিজনিত অনিশ্চয়তার মধ্যে সুদহার কর্তন হবে কিনা তা নিয়ে বাজারে নানা ধরনের জল্পনা চলছিল। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল ইঙ্গিত দেন, সুদহার কমানোর পথ এখনো খোলা রয়েছে এবং মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিগগিরই ব্যালান্স শিট ছোট করার দীর্ঘ কার্যক্রম শেষ করতে পারে।

এ বিষয়ে ডয়চে ব্যাংকের বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘জেরোম পাওয়েল বাজারের ধারণার চেয়েও বেশি নমনীয় সুরে কথা বলেছেন।’

সব মিলিয়ে জেরোম পাওয়েলের এ মন্তব্য বাজারকে উজ্জীবিত করেছে এবং আরো আর্থিক শিথিলতার প্রত্যাশা বাড়িয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডিসেম্বর নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৮ বেসিস পয়েন্ট হারে সুদ কমানো হবে। এ ইঙ্গিতের মধ্যে মুদ্রাবাজার সূচকে ডলারের মান কমেছে দশমিক ৩ শতাংশ। এর বিপরীতে ইয়েন ও অস্ট্রেলীয় ডলার সবচেয়ে ভালো পারফর্ম করেছে। গত সপ্তাহে বড় অবমূল্যায়নের পর মুদ্রা দুটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ওয়াল স্ট্রিট ফিউচারেও উত্থানের ইঙ্গিত মিলেছে। গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী নাসডাক ফিউচার দশমিক ৫ ও এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার বেড়েছে দশমিক ৪ শতাংশ।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সম্পর্কের টানাপড়েনে বাজারে বড় ধরনের পতন দেখা গিয়েছিল। এখন মার্কিন শীর্ষ ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী প্রান্তিক আয় এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির সংশোধিত ঊর্ধ্বমুখী পূর্বাভাস বাজারে প্রত্যাশা বাড়িয়েছে।

তবে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব এখনো নাজুক। কারণ মূলত চীন-মার্কিন বাণিজ্য উত্তেজনা। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলে সম্প্রতি পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। দুষ্প্রাপ্য খনিজ রফতানি নিয়ন্ত্রণে বেইজিং কঠোর পদক্ষেপ ঘোষণা করলে এভাবে প্রতিশোধ নেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছেন, চীনের সঙ্গে কিছু বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন করার বিষয়ে বিবেচনা করছে ওয়াশিংটন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ই সমুদ্র পরিবহন কোম্পানিগুলোর ওপর অতিরিক্ত বন্দর ফি আরোপ শুরু করেছে।

আইজির মার্কেট বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, ‘এটি ইঙ্গিত দেয় যে স্থায়ী সমঝোতা পাওয়া সহজ হবে না। তবে এটাও মনে রাখা দরকার, প্রায়ই এমন হয় যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কঠোর পদক্ষেপ ঘোষণা করে, পরে আবার তা শিথিল করে ফেলে।’

এদিকে চীনের অর্থনীতিতে মূল্যসংকোচনজনিত চাপ অব্যাহত রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী গত মাসে দেশটিতে ভোক্তা ও উৎপাদক উভয় মূল্যে পতন ঘটেছে।

ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ২০২৭ সালের নির্বাচনের আগে বহুল আলোচিত পেনশন সংস্কার স্থগিত রাখা হবে। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে নতুন রাজনৈতিক অচলাবস্থা এড়ানো গেছে এবং বিনিয়োগকারীরা স্বস্তি পেয়েছেন।

গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো বেড়েছে ফরাসি ট্রেজারি বন্ডের দাম। এতে দুই মাসের সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেছে ইল্ড। ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের ইল্ড ছিল ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা ১৫ আগস্টের পর সর্বনিম্ন এবং মে মাসের পর সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক পতনের কাছাকাছি।

ফ্রান্সের রাজনৈতিক অস্থিরতা ইউরোর ওপর তেমন প্রভাব ফেলেনি। ডলারের বিপরীতে মুদ্রাটি দশমিক ২ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে।