1 Attachment(s)
শীতে ক্যাম্পিং হোক নিঝুম দ্বীপে
সবুজ মাঠ থেকে ঘরে উঠছে সোনালি ধান। বাতাসে খেজুর রসের ঘ্রাণ। শান্ত-সুনিবিড় নিঝুম দ্বীপে ঘুরে আসার মোক্ষম সময় এখনই। সবুজ সুনসান নীরব এই দ্বীপে শীত রাতের ক্যাম্পিং এনে দেয় অন্যরকম অ্যাডভেঞ্চার। ম্যানগ্রোভ বন, আঁকা-বাঁকা খাল। বনের মধ্যে হরিণের উপস্থিতি, মনে হবে এইতো সুন্দরবন। অপরদিকে বিশাল সৈকত দেখে মনে হতে পারে কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটা। সবমিলিয়ে তাবুবাস করে এই দ্বীপে অনায়াসেই কাটিয়ে দেওয়া যায় কয়েকটা দিন-রাত। নিরাপত্তা, খাওয়ার ব্যবস্থা এবং স্থানীয়দের আতিথেয়তা মিলিয়ে অন্য রকম আবহ মিলে এই দ্বীপে। নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার একটি ইউনিয়ন নিঝুমদ্বীপ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে বছরের পুরোটা সময়ই এখানে আনাগোনা থাকে পর্যটকদের। তবে, শীতে তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। পরিযায়ী পাখি, সমুদ্র আর বনের চিত্রা হরিণ দেখতে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। এই দর্শনার্থীদের বড় একটা অংশ হোটেলে না থেকে তাঁবু গেঁড়েই রাত কাটিয়ে দেন। সেখান থেকে ঘুরে আসা কয়েকজন জানান, দ্বীপে ক্যাম্পিংয়ের প্রচুর সুবিধা রয়েছে। দেখে-শুনে পুরা দ্বীপে যেখানে মন চায় সেখানেই তাঁবু টাঙ্গানো যাবে। জীব-জন্তুর কোনো ভয় নেই। নামার বাজার বিচে নেমেই বা পাশে ঝোপগুলোর সামনে ক্যাম্পিং করা যায়।
নিজেরা সঙ্গে করে তাঁবু নিলে তো ভালো কথা। যদি কেউ নাও নিয়ে থাকেন স্থানীয় কাউকে ক্যাম্পিং করার জন্য গাইড হিসেবে নিতে পারেন। বাজার-সদাই, লাকড়ি, রান্না-বান্না ও পানির ব্যবস্থা ওরাই করবে। এমনকি রাত জেগে ক্যাম্প সাইট পাহারা ও দেবে। খরচ নিজেদের মত করে কথা বলে নিলেই হবে। সাধারণত এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা খরচ করলে খাওয়া-ধাওয়াসহ দুইদিন দারুণভাবে কাটিয়ে দেওয়া যাবে। কথা হয় ট্রাভেল গ্রুপ কান্ট্রি রোডসের উদ্যোক্তা রিশি কাব্যের সঙ্গে। নিঝুম দ্বীপের ক্যাম্পিং অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি জানান, জীবনে দেখা সেরা রাতগুলোর একটা নিঝুম দ্বীপে অমাবস্যা। একটু নিস্তব্ধতা চাইলে ব্যস্ত শহর থেকে অনেক দূরে যেতে চাইলে নিঝুম দ্বীপ গিয়ে ক’দিন পড়ে থাকা যায়। এখানে ক্যাম্পিং এর সুবিধার মধ্যে রয়েছে দ্বীপের মানুষজন খুবই সহজ সুন্দর আর হেল্পফুল। তাদের ব্যবহার সব সময় সুন্দর। তারা অতিথিদের যত্নে কমতি রাখে না। আর নিরাপত্তাও ভালো।
অসুবিধার মধ্যে রয়েছে, যাওয়া আর আসায় সময়টা অনেক বেশি। যেতে সব মিলিয়ে ১৪-১৫ ঘণ্টা লাগে। আর আসতে সেটা আরও বেশি ২০-২২ ঘণ্টা। আর ওয়াশরুমের ব্যবস্থাটা বাংলার একটা গোছানো সুন্দর গ্রামে যেমনটা হওয়া উচিত তেমনই। আর দুই-একদিনের প্ল্যান করে গেলে জোয়ার-ভাটার খোঁজ না রাখলে অনেক জায়গায় আটকে যাবে। দ্বীপে গিয়ে তাঁবুবাসের জন্য কোনো ধরনের সহযোগিতার দরকার হলে ফোনকল দিতে পারেন-০১৩১৬-৭৩১২৩৪ এই নাম্বারে। এছাড়া নিরাপত্তার কোনো বিষয়ে সমস্যায় পড়লে যোগাযোগ করতে পারেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ০১৬১১-২০৩১৩৪ নাম্বারে।
যেভাবে যাবেন দ্বীপে বাস, ট্রেন এবং নৌযান। তিনভাবেই যাওয়া যাবে নিঝুম দ্বীপে। নৌ-রুটটি হলো সদরঘাট থেকে লঞ্চে হাতিয়ার তমরুদ্দি ঘাট। সেখান থেকে মোটরসাইকেল ও অন্যান্য পরিবহনে যেতে হবে নিঝুম দ্বীপ ঘাটে। ঘাট থেকে নৌকায় যেতে হবে দ্বীপে। সময় লাগবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। ঢাকা থেকে হাতিয়ার তমরুদ্দি রুটে দুটি লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করে। প্রয়োজনে যোগাযোগ করে নিতে পারেন-০১৭৮৫-৬৩০৩৬৬,০১৭৮৫-৬৩০৩৬৯ নাম্বারে।
ঢাকার মহাখালী, কমলাপুর ও সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন বাস যায় নোয়াখালীর সোনাপুর। গাড়ি ভাড়া লাগবে ৪০০-৬০০ টাকা। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশায় চেয়ারম্যান ঘাটে যেতে হবে। ভাড়া ১শ টাকা। এরপর ট্রলারে চড়ে যেতে হবে নলচিরা ঘাট। সেখান থেকে আবার মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা, বাসে মুকতারিয়া ঘাট। সেখান থেকে ইঞ্জিন নৌকায় নিঝুম দ্বীপ ঘাট। ভাড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা। এছাড়া ট্রেনে সকাল ৭টায় কমলাপুর থেকে ছাড়ে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেন। নোয়াখালী পৌঁছে যেতে হবে পূর্ব নির্দেশিত পথে।
[ATTACH=CONFIG]16235[/ATTACH]