ইউরোজোনের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ৮.১ শতাংশে পৌঁছেছে
কভিডজনিত প্রতিবন্ধকতায় ঊর্ধ্বমুখী ছিল বিভিন্ন পণ্যের দাম। এর মধ্যে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। ভূরাজনৈতিক কারণে সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। একই কারণে ক্রমবর্ধমান রয়েছে গম ও ভুট্টার দামও। সবমিলিয়ে মে মাসে ইউরোজোনের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট অনুসারে, জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় গত মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ হার ১৯৯৭ সালে ইউরোর হিসাব শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ। এর আগে মার্চ ও এপ্রিলে ইউরো মুদ্রা ব্যবহার করা ১৯টি দেশে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। মে মাসে দাম বাড়ার বার্ষিক হার এ রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে গেল।
ক্রমবর্ধমান এ দাম পারিবারিক আয়ে প্রভাব ফেলেছে। এ পরিস্থিতি জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির গতি থামাতে নীতিনির্ধারকদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চাপ দিচ্ছে। গত মাসে জ্বালানির দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। ইউক্রেনে যুদ্ধ এবং বিশ্বজুড়ে জ্বালানির সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তায় সৃষ্ট এ উচ্চমূল্য কীভাবে ইউরোজোনের ৩৪ কোটি ৩০ লাখ মানুষের জীবনকে আরো ব্যয়বহুল করে তুলছে তা তুলে ধরেছে। অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের প্রধান ইউরোপীয় অর্থনীতিবিদ অ্যান্ড্রু কেনিংহাম বলেন, জ্বালানির মূল্য আগের প্রত্যাশিত স্তরের চেয়ে আরো উপরে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ চলতি বছরের শেষ নাগাদ বেশির ভাগ জ্বালানি তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপে সম্মত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার আয়ের পথ বন্ধ করার লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেয়া হলেও এটি দুমুখো তলোয়ার হিসেবে কাজ করছে। এরই মধ্যে উচ্চ জ্বালানি ব্যয় নিম্ন আয়ের পরিবার ও ছোট ব্যবসাগুলোকে বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। এ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।
এক্ষেত্রে রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রুশ গ্যাস নেয়া বন্ধ করায় এস্তোনিয়ায় মূল্যস্ফীতি ২০ শতাংশ, লিথুয়ানিয়ায় ১৮ দশমিক ৫ ও লাটভিয়ায় ১৬ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছেছে। ইউরোস্ট্যাট জানিয়েছে, গত মাসে খাদ্য, অ্যালকোহল ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া বেশকিছু কৃষিপণ্যের শীর্ষ সরবরাহকারী ছিল। যুদ্ধের কারণে এ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। এছাড়া এ সময়ে পোশাক, যন্ত্রপাতি, গাড়ি, কম্পিউটার ও বইয়ের মতো জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। পরিষেবার মূূল্য বেড়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। ইউরোজোনের বাইরে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশির ভাগ দেশেই ক্রমবর্ধমান রয়েছে মূল্যস্ফীতি। এমনকি প্রধান অর্থনীতিগুলোয় এটি এখন প্রধান জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি চার দশকের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে।
এদিকে ইউরো মুদ্রা ব্যবহার না করা ইউরোপীয় দেশ পোল্যান্ডের বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ হার দেশটির ইতিহাসে গত ২৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এক্ষেত্রে উচ্চ জ্বালানি ও খাদ্যের দাম প্রধান চালক হিসেবে কাজ করেছে। ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া দেশটিতে চাহিদার পরিমাণও ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছে।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/568451483.jpg[/IMG]